ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খননে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না

৪৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ৯ আগস্ট ২০২৩

৪৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়

ডেল্টা প্রকল্পে খনন করা বেতনা নদী। মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি

সাতক্ষীরার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মৃত্যু ও জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার  চার বছর মেয়াদি ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করলেও সরকারের শতবর্ষী  বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০-এর সুপারিশ চূড়ান্তভাবে  পাস কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প জরিপে আইডব্লিউএম- দুটি নদীর অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়নের  প্রস্তাব রাখলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় টিআরএম প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। তবে প্রকল্পটিতে সরকারের প্রত্যাশা কতটুকু অর্জিত হবে এবং নদীর ভবিষ্যৎ কি হবে  তা নিয়ে ইতোমধ্যে নদী বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। ভুক্তভোগী স্থানীয় জনগণও চাইছেন প্রকল্প বাস্তবায়নে জনমত গ্রহণ করা হোক।

মূলত  টিআরএম  প্রকল্প নদীর নাব্য রক্ষা এবং পলির বিকল্প অবক্ষেপণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। সরকারের নেওয়া সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬ -৮, ৬ -৮ (সম্প্রসারণ)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, আশাশুনি ও তালা উপজেলা এলাকার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। ইতোমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে জেলার পানি কমিটি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। 
প্রকল্পে সরকারের শতবর্ষী পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০-এর   অনন্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এই এলাকাকে বাঁচানোর জন্য জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বা টাইডাল প্রিজম সৃষ্টি করতে পারে এমন সকল বিল চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে জোয়ার-ভাটার নদী ব্যবস্থাপনা বা টিআরএম বাস্তবায়ন করার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বজায় রাখতে ও পলি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে জোয়ার-ভাটা নদী অববাহিকায় জোয়ারধারার পদ্ধতিকে ব্যবহার করে পর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা বজায় রাখা সম্ভব বলে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০তে মতামত দেওয়া হয়েছে।

বিডিপিতে আরও বলা হয়েছে, এ এলাকার তীব্র জলাবদ্ধতা, কৃষি ফলন হ্রাস এবং সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির অবনতি রোধ এবং উন্নয়ন করতে প্রয়োজন টিআরএম দ্বারা টেকসই পলি ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার শতবর্ষব্যাপী বিডিপি-২১০০’র পরিকল্পনার   বাস্তবায়নও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকার গৃহীত সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (সম্প্রসারণ)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটিও সরকারের শতবর্ষী পরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা বিডিপি-২১০০’র অংশ।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে জলাবদ্ধতা ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সাতক্ষীরা অঞ্চল অতি ঝুঁকিপূর্ণ একটি এলাকা। জলাবদ্ধতা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা প্রভৃতি সমস্যার কারণে এ অঞ্চল ক্রমশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং বাস্তুভিটা ত্যাগ করে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইপিসিসি রিপোর্ট অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবীর ৫টি দ্বীপ রাষ্ট্র যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

×