
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ৬টি ঋতুর মধ্যে গীষ্মের প্রভাব সব থেকে বেশি
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ৬টি ঋতুর মধ্যে গীষ্মের প্রভাব সব থেকে বেশি। গীষ্মকাল শুধু গরমকাল এটা নয় এই সময়টা মধু মাস। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল প্রভৃতি সুমিষ্টি ফল পাকে এই মাসে। ফলে এই গ্রীষ্মকাল অনেকের কাছে প্রিয়। পূর্বে গ্রীষ্মকাল গরমের দাপট থাকলেও প্রকৃতি ওপর মানুষ নির্ভর করত। বর্তমানে গ্রীষ্মকালে প্রকৃতির পাল্লা দিয়ে চলছে মানুষ। পূর্বে গরম থেকে বাঁচতে মানুষ দেশীয় তালের হাতপাখার উপর নির্ভর করত। বর্তমানে একটু অবস্থাপন্ন লোকেরাও বাড়িতে লাগিয়েছেন এসি। ফলে পূর্বের গ্রীষ্মকাল মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে চলেছে ।
গ্রীষ্মকাল উপভোগ করেছে। বর্তমানে চলছে প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ফলে বিদ্যুৎ না থাকলে শহরের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। প্রবীণ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, পূর্বে গ্রীষ্মকালে গ্রামের মানুষের কোনো সমস্যা হতো না। গ্রীষ্মের সঙ্গে মানিয়ে চলত মানুষ। যেমন গরম পড়ত তার প্রতিকার ছিল। দুপুরে নদী অথবা পুকুরে সকলে দলবেঁধে যেত ¯œান বা গোসল করতে। সে ভিন্ন মজা। কেউ দূর থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটত। কিছুটা ছায়া পেতে গাছের তলায় বিশ্রাম নিত। সে এক বিচিত্র মজা। বর্তমানে সেই সব আর দেখা যায় না। সেই সময়ের মতো নদীতে পানি নেই। নদী শুকিয়ে গেছে। খাঁ-খাঁ চর জেগেছে। পূর্বে গরম পড়ায় মাগুরার পাখাপল্লী সরগরম হয়ে উঠত। তালের হাতপাথা তৈরিতে ব্যস্ত হতো শিল্পীরা ।
তাদের এক মুহূর্ত অবসর নেওয়ার সময় থাকত না। মাগুরার তৈরি তালের হাতপাখা দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান যেত। ফলে বহু পরিবারের মৌসুমি কর্মসংস্থান হতো। মাগুরা পাখার মোকামে পরিণত হয়েছিল। মাগুরার শিবরামপুর, নিজনান্দুয়ালী, সংকচখালী, শত্রুজিৎপুর, আড়পাড়া, বিনোদপুর, পারিয়াট, ধনেশ্বরগাতি প্রভৃতি গ্রামে তালের হাতপাখা তৈরি হতো। এ সমস্ত গ্রামে দুই শতাধিক পরিবার পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিল। প্রথমে তাল পাতা কেটে রোদে শুকিয়ে তার সুতা দিয়ে বাঁশের শলাকা দিয়ে সেলাই করে তৈরি করা হয় তালের হাতপাখা।
তার গায়ে রং করা হতো সুন্দরের জন্য। ফাল্গুন মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাখার মৌসুম চলত । একজন শিল্পী প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০/৬০টি পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
অন্য জেলা থেকে পাইকাররা এখানে এসে পাখা ক্রয় করে নিয়ে যেত। বর্তমানে গরম পড়লেও পাখাশিল্পীদের সেই কদর নেই। তাল গাছ নেই বললেও চলে। শহরে তালের হাত পাখার দেখা মেলাই ভার। পাখাশিল্পীদের নিপুণ হাতের বাঁশের শলাকা, সুতা ও রং দিয়ে তৈরি তালের হাতপাখার কদর করতে অনেকেই দেখা যায় না। সকলেই নির্ভর হয়ে পড়েছেন বৈদ্যুতিক পাখা ও এসির উপর। ফলে গ্রীষ্ম উপভোগ করতে কেউ চান না। বর্তমানে একটু ভালো মানের দোকান হলেই এসি লাগানো। বাড়ি বা দোকান থেকে বের হয়ে কেউ চলতে পারেন।
না। তারা গ্রীষ্মের মজা উপভোগ করবেন কিভাবে। সকলে শহর নির্ভর হয়ে যাওয়ায় এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ায় বর্তমানে কারও হাতে এক মুহূর্ত সময় নেই। গ্রীষ্মকাল সময়টা মধু মাস। জৈষ্ঠ্যে মাসে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল প্রভৃতি সুমিষ্টি ফল পাকে এই মাসে। পূর্বে গ্রামের লোকেরা গ্রীষ্মকাল দুপুরে আম কাঁঠাল দিয়ে আহার সারতেন। বর্তমানে মৌসুমি ফলের দেখা মেলা ভার। যে ফল পাওয়া যায় তার দাম আকাশচুম্বী। ফলে আগের এই গ্রীষ্মকাল অনেকের কাছে প্রিয় ছিল। ফলে গীষ্মের পূর্বের ও বর্তমানের মধ্যে ফারাক রয়েছে অনেক।