ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেউ গ্রেপ্তার হয়নি

লক্ষ্মীপুরে নিহত দুই যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার দাফন

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

লক্ষ্মীপুরে নিহত দুই যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার দাফন

লক্ষ্মীপুরে হত্যাকা-ের শিকার রাকিব ও নোমান

লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৩৫) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম (২৫) হত্যার ঘটনায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ জানিয়েছেন, নিহতদের স্বজন কেউ এখনো আসেননি। কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীদের পাকড়াও করতে তৎপর রয়েছে। অপরাধী যেই হোক কেউ ছাড় পাবেনা। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপি মহোদয় সর্বোচ্চ নির্দেশনা দিয়েছেন।

নিহত যুবলীগ নেতা নোমানের সংসারে পাঁচ বছরের নিচে দুইটি পুত্র শিশু এবং রাকিব ইমামের সংসারে ছোট একটি শিশুকন্যা রয়েছে। এ দুইটি পরিবারের স্ত্রী-অবুঝ সন্তানরা আগামী ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছে। কোথায় যাবে এবং কীভাবে চলবে কিছুই দেখছেনা পরিবার দুইটি। বুধবার বিকেল ৫টা বাদ আছর বসিকপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দুইজনের লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৩৫) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে (২৫) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। অপর সাবেক ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম বসিকপুর ইউপি ডিজিটাল উদ্যোক্তা ছিলেন। নোমান পবিত্র ওমরা হজ সেরে সৌদি থেকে এদিন মঙ্গলবার নিজ বাড়িতে আসেন। সবুজ নামে পরিচিত এক যুবক তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয়। আর মোটরসাইকেলযোগে সেখানে পৌঁছালে একই দিনে মঙ্গলবার ২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে খুব কাছ থেকে তাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা।

এতে ঘটনাস্থলেই দুজনই গুলিবিদ্ধ হন। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নোমান। ঘটনাস্থলেই নোমান মারা যান। গুলিবিদ্ধ নোমানসহ রাকিবকে মুমূর্ষু অবস্থায় জেলা সদর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক রাকিবকেও মৃত ঘোষণা করেন। সদর উপজেলার বসিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজারে ব্রিজের পশ্চিম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাত ১১টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.আনোয়ার হোসেন যুবলীগ নেতা নোমানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নোমানকে মৃত অবস্থায় হাসাপাতালে আনা হয়েছে। এ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ রাকিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের দুজনের মাথা এবং মুখে গুলির আঘাত রয়েছে।

এদিকে রাতে ১২টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা.  সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় বসিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদীকে দায়ী করেছেন ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা নোমানের বড়ভাই মাহফুজুর রহমান। ঘটনার পর থেকে কাসেম জেহাদী এবং অন্যান্য লোকজন পলাতক রয়েছে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থায় বিরাজ করছে। বুধবার দুপুরে নিহত দুই যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার মরদেহের ময়নাতদন্ত জেলা সদর হাসপাতালে মর্গে সম্পন্ন হয়েছে।

এতে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার হত্যাকা-। আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম পিংকু বলেন, আমি জেলার প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অবৈধ অস্র উদ্ধারের বিষয়ে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। অবৈধ অস্র উদ্ধার না হলে এলাকার কেউ আমরা নিরাপদ নই বলে তিনি আশঙ্কা করেন। বুবধার বিকেলে বাদ আছর বসিকপুর মাদ্রাসা মাঠে নিহত দুই নেতার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে হাজারো মানুষের জমায়েত হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দুই যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার হত্যার বিষয়ে বুধবার পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারকালে তিনি বলেন, শীঘ্রই আমরা ঘটনাটি উদ্ঘাটন করতে পারব। তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

অপরাধীদের পাকড়াও করতে আমরা বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অপরাধীরা যে কেউ হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ থেকে কেউ পার পাবেনা বলে তিনি আশ^স্ত করেন। এদিকে গত বছর জেলা যুবলীগের কমিটি বিপুপ্তি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত কোনো জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়নি। নোমানের সঙ্গে জেলা যুবলীগ সভাপতি ছিলেন, বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহউদ্দিন টিপু। এ পর্যন্ত জেলা যুবলীগের কোনো কমিটি হয়নি লক্ষ্মীপুরে।
 উল্লেখ্য, বিগত ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলা সদরের পূর্ব-উত্তরাঞ্চলে একজন নববধূসহ প্রায় অর্ধশত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী খুন হয়েছে। এদের মধ্যে ছিলেন ফজলুল করিম নামে নেভির একজন চিফ পেটি অফিসার, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরনবী, তারই ছেলে পুত্র হত্যার বিচার প্রার্থী ইকবাল বাহার চৌধুরী বিপ্লব, পুলিশের একজন এসআই, একজন কনস্টেবল, একজন সেনা সদস্যও রয়েছেন। এক সময়ের সন্ত্রাসী জনপদ গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসলে এলাকাটি শান্তির নীড় হয়ে ওঠে। এ ঘটনার মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর আবারও অশান্ত পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে অপরাধী যে কেউ হোক জেলাবাসী তাকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছেন।

×