ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষীপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২ নেতাকে হত্যা, গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষীপুর

প্রকাশিত: ২১:২২, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

লক্ষীপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২ নেতাকে হত্যা, গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

আবদুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমাম

লক্ষীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৩৫) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে (২৫) হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। 

লক্ষীপুর পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ জানিয়েছেন, নিহতদের স্বজনদের কেউ এখনও আসেনি। কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন শৃংখলা বাহিনী বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীদের ধরতে তৎপর রয়েছে। অপরাধী যে কেউ হোক না কোনো কেউ ছাড় পাবেনা। এ ব্যাপারে পুলিশের আইজিপি মহোদয় সর্বোচ্চ নির্দেশনা দিয়েছেন। 

নিহত যুবলীগ নেতা নোমানের সংসারে পাচঁ বছরের নীচে দুইটি পুত্র শিশু এবং রাকিব ইমামের সংসারে ছোট একটি শিশু কন্যা রয়েছে। এ দুই পরিবারের স্ত্রী-অবুজ সন্তানরা আগামী ভবিষৎ অন্ধকার দেখছে। 

আজ বিকেল ৫টায় বাদ আছর বসিকপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাযা শেষে গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দু’জনের লাশ দাফন করা হয়।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান (৩৫) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে (২৫) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজারে ব্রিজের পশ্চিম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাকিব ইমাম বসিকপুর ইউপি ডিজিটাল উদ্যোক্তা ছিলেন। আর নোমান পবিত্র ওমরা হজ্জ সেরে সৌদী থেকে এদিন মঙ্গলবার নিজ বাড়িতে আসেন। 

জানা যায়, সবুজ নামে পরিচিত এক যুবক তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয়। আর মোটরসাইকেল যোগে সেখানে পৌঁছালে একই দিনে মঙ্গলবার ২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাছ থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে  কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই দু’জনই গুলি বিদ্ধ হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে নোমান। ঘটনাস্থলেই নোমান মারা যায় এবং গুলিবিদ্ধ রাকিবকে মুমূর্ষু অবস্থায় জেলা সদর সদর হাসপাতালে নেয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাকিবকেও মৃত ঘোষণা করেন।

জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, নোমানকে মৃত অবস্থায় হাসাপাতালে নিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ রাকিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের দু’জনের মাথা এবং মুখে গুলির আঘাত রয়েছে। 

এ ঘটনায় বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদীকে দায়ি করেছে ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা নোমানের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান। ঘটনার পর থেকে কাসেম জিহাদী এবং অন্যান্য লোকজন পলাতক রয়েছে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থায় বিরাজ করছে। 

বুধবার দুপুরে নিহত দুই যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার মরদেহের ময়না তদন্ত জেলা সদর হাসপাতালে মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। এতে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম পিংকু বলেন, আমি জেলার প্রত্যেকটি আইন শৃংখলা কমিটির সভায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হলে এলাকার কেউ নিরাপদ নয় বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। 

এদিকে গত বছর জেলা যুবলীগের কমিটি বিপুপ্তি ঘোষণা করে কেন্দ্রিয় যুবলীগ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত কোনো জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়নি। নোমানের সঙ্গে জেলা যুবলীগ সভাপতি ছিলেন, বর্তমান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহউদ্দিন টিপু। এ পর্যন্ত জেলা যুবলীগের  কোনো কমিটি হয়নি লক্ষীপুরে।

উল্লেখ্য, বিগত ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলা সদরের পূর্ব-উত্তরাঞ্চলে একজন নববধুসহ প্রায় অর্ধশত আ.লীগের নেতাকর্মী খুন হয়েছে। তবে এ ঘটনার মাধ্যমে লক্ষীপুরে আবারো অশান্ত পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

 

এমএইচ

×