
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে
আর মাত্র ১৭ শতাংশ কাজ বাকি, এরপর স্বপ্ন দুয়ার খুলবে কক্সবাজারে। মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতুতে ট্র্যাক বসে গেছে। এখন সাঙ্গু নদীর সেতুতে চলছে রেললাইন বসানোর কাজ। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি এভাবেই এগিয়ে চলছে। বর্তমানে রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। সব ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরের শুরুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করতে পারে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বিভিন্ন জটিলতা, প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দ্রুতগতিতে কাজ শেষ হওয়ার পথে। ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মাত্র ৩০ কিলোমিটার ট্র্যাক বসানো শেষ হলেই শুরু হবে ট্রায়াল রান। সারাদেশের সঙ্গে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করার এমন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই করে দেখিয়েছে, অথচ দোহাজারী পর্যন্ত এ রেলপথ থাকলেও আগের কোনো সরকারই উদ্যোগ নেয়নি রেলপথের উন্নয়নে।
পদ্মা সেতুর মতো সরকারের উন্নয়নের সাফল্যের আরেক নতুন মাইলফলক দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ঘিরে তাই উচ্ছ্বসিত সকলে। এই প্রকল্পের শুরুতে নির্মাণ কাজে অগ্রগতিতে বাধা ছিল বৃষ্টি ও করোনার বড় ধাক্কা এবং ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ দুই লটে ভাগ করে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত একটি অংশ এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ।
তবে এই প্রকল্পটি ঘুমধুম পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখন প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান। কিন্তু রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে কক্সবাজার পর্যন্ত কাজ শেষ করা হচ্ছে। কারণ সরকারের লক্ষ্য পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ করা হবে কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের, যা এখনো শুরু হয়নি এডিবির ফান্ড ও বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে।
সেটি শুরুর বিষয়ে কোনো সম্ভবনা এখন নেই। এই প্রকল্পে ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই রেলপথ নির্মাণকাজে দোহাজারী থেকে চকরিয়া অংশে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। আর চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বেশ ভালো গতিতেই কাজ শেষ হচ্ছে। নয়টি স্টেশনের মধ্যে দুটি স্টেশনের কাজ শেষ। বাকি সাতটি যাতে দ্রুত শেষ হয় এ জন্য শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছে। তবে চন্দনাইশ থেকে সাতকানিয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে ধীরগতি। আর চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল ট্র্যাকের কাজ শেষ, যা দৃশ্যমান।
প্রকল্প কার্যালয় থেকে জানা গেছে, কক্সবাজারের ঈদগাঁও এবং ডুলাহাজারা স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ। এগিয়ে চলছে আইকনিক স্টেশনের কাজ। কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনটির কাজ বাকি মাত্র ১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। আন্ডারপাস এবং ওভারপাসের কাজও শেষ পর্যায়ে। আর একশ’ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে বাকি রয়েছে ৩০ কিলোমিটার ট্র্যাক বসানোর কাজ। এই পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ট্র্যাক বসে গেছে।
অন্যান্য সেতু কালভার্ট সব নির্মাণ শেষ। তাই আগামী ৬ মাসের মধ্যেই ট্রায়াল রানে পৌঁছানোর জন্য দ্রুতগতিতে চলছে কাজ। সরকারের এই ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মধ্যে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন। যদিও প্রথমভাগে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন করা হচ্ছে, তবে অদূর ভবিষ্যতে ভূরাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হলে এবং এডিবি অর্থ ছাড় দিলে মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ হবে।
এ ছাড়া বর্তমানে পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন; সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবার কাঁচামাল এবং বনজ, কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানায়, চলতি বছরই ট্রেনে যাওয়া যাবে এটি সত্য। তবে এর আগে বেশ কিছু কাজ রয়েছে। পরীক্ষমূলকভাবে ট্রেন চলাচল হবে। ট্রায়াল ট্রেন আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের শুরুতে চলাচল করতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। তাই রেলট্র্যাক বসানোর কাজ শেষ হলেই যাত্রীদের জন্য ট্রেন চালু হয়ে যাবে, এমন নয়। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলবে যখন ট্র্যাকে কোনো সমস্যা আছে কি না, লোকোমোটিভগুলো কত বেগে ছুটতে পারছে, এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। এ ছাড়া পারিপাশির্^ক অবস্থা এমনকি সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথে ট্রেন চলাচলে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে কি না- এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিখুঁতভাবে শেষ করে ছাড়পত্র দিলে তবেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ছুটবে ট্রেন।