ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বই কেনাই তার নেশা, দিনমজুরির টাকায় পাঠাগার 

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২৩ মার্চ ২০২৩

বই কেনাই তার নেশা, দিনমজুরির টাকায় পাঠাগার 

উলিপুরে নিভৃত পল্লীতে দিনমজুরের পাঠাগারে বই পড়ছেন শিক্ষার্থীরা

উলিপুরের বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার শিশু, কিশোর ও বিভিন্ন বয়সের মানুষজন ‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়ে পড়াশোনা করে আলোকিত হচ্ছে। প্রত্যন্ত সাতভিটা গ্রামে পাঠাগার গড়ে তুলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন জয়নাল আবেদীন নামের এক দিনমজুর যুবক। দিনে করেন দিনমজুরি, কাজ শেষে বিকেলে খুলে বসেন পাঠাগার। তার এই কর্মকা-ে স্থানীয়রা এক সময় নানা কথা বললেও এখন তাদের ছেলেমেয়েরাই হয়েছেন পাঠাগারের পাঠক।

দিনমজুর জয়নাল আবেদীন ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। পড়াশোনার প্রতি প্রচুর ঝোঁক ছিল তার। গরিব বলে ছোটবেলা থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে কাজের সন্ধানে চলে যেতেন। এক সময় গাজীপুরে ইটভাঁটির কাজ শুরু করেন। আর এখানেই কাজের ফাঁকে তার বই পড়ার নেশা পেয়ে যায়। রাত ২টা থেকে সকাল পর্যন্ত তাকে কাজ করতে হয়। বিকেলে শ্রমিকদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে চা খেতেন টিভি দেখতেন। এ সময় ফুটপাতে যখনই বই দেখতেন কিনে এনে অবসরে পড়াশোনা করতেন।

পরে খোঁজখবর নিয়ে ভালোমানের বইয়ের জন্য গাজীপুরে অবস্থিত কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন, টঙ্গী কলেজ গেটসহ বিভিন্ন জায়গায় বই সংগ্রহ করতে থাকেন। এসব বই পড়ে তার প্রচ- আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এরপর বই কেনা ও পড়া তার নেশা হয়ে দাঁড়ায়। পরে বই জমতে জমতে গ্রামে গিয়ে পাঠাগার তৈরির চিন্তা তার মাথায় আসে। এভাবেই একজন দিনমজুর শ্রমিক হয়ে ওঠেন পাঠাগার তৈরির কারিগর। তাকে প্রথমে গ্রামের লোকজন ভুল বুঝলেও এখন তারা জয়নালকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। 
সাতভিটা গণগ্রন্থাগার পরিচালক জয়নাল আবেদীন জানান, পাঠাগার তৈরির পর ২০১৭ সাল থেকে গ্রামেই রয়েছেন জয়নাল আবেদীন। এখন সকালে ক্ষেত-খামারে কাজ করার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসাও করছেন। বিকেল সাড়ে ৩টা হলেই নিজেই পাঠাগার খুলে বসেন। প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন পাঠক আসে। তবে পাঠাগারে কিছু ঘাটতি আছে। যেমন বুক সেলফ, চেয়ার, টেবিল এবং ওয়াস রুমের। এগুলো সংগ্রহ করতে পারলে পাঠাগারে পাঠক বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।

×