ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাহুবলী টমেটো চাষে লাভবান মামা-ভাগিনা

মো. মামুন চৌধুরী,হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১৫ মার্চ ২০২৩

বাহুবলী টমেটো চাষে লাভবান মামা-ভাগিনা

মামা-ভাগিনা

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের মামা-ভাগিনা। তারা হচ্ছেন মো. সাইফুল ইসলাম সাজল (মামা) ও মো. এনামুল হক এনাম (ভাগিনা)। তারা প্রতিবেশীর কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন প্রায় ১০০ শতক জমি। 

এর মধ্যে তারা এ মৌসুমে প্রায় ৬০ শতক জমিতে নতুন জাতের বাহুবলী টমেটো চাষ করার প্রস্তুতি নেন। তাদেরকে বগুড়া থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বাহুবলী টমেটো গাছের চারা সংগ্রহ করে দেন বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে টমেটো গাছের চারা রোপণের পরে তারা কঠোরভাবে পরিচর্যা করায় প্রায় ৭০দিনে গাছে গাছে ফুল আসে। ৯০ দিনের পর থেকে গাছের টমেটোগুলো খাবার উপযোগী হয়ে উঠে। সেই থেকে তারা প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ক্ষেত থেকে টমেটো উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করে আসছেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেত থেকে মামা-ভাগিনা শ্রমিক নিয়ে টমেটো সংগ্রহ করছেন। গাছ থেকে টমেটো তুলে প্লাস্টিকের ক্যারেটে রাখা হচ্ছে। ওই দিন তাদের ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে ১০টি প্লাস্টিকের ক্যারেটে ভর্তি করা হয়। প্রতিটি ক্যারেটে ২০ কেজি করে টমেটো ছিল। সে হিসেবে প্রায় ২০০ কেজি পর্যন্ত টমেটো মিলে। 
সাইফুল ইসলাম সাজল জানান, দুবাই ও ওমানে কয়েক বছর থেকে কাজ করেছেন। তেমন আয় করতে পারেননি। করোনার আগে দেশে আসেন। আর প্রবাসে যাওয়া হয়নি। মুদি মালের দোকান দেন। কিন্তু সফলতা আসছিল না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন এ ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি কাজ করার। সাথে যুক্ত করেন তার ভাগ্নে এনামকে। প্রতিবেশীর কাছ থেকে প্রায় ১ একর জমি লিজ নেন। কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম থেকে পরামর্শ নিয়ে চাষ শুরু করেন। 

তিনি বলেন, বাহুবলী টমেটো আবাদে জৈব সার ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। আর পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে টমেটো ক্ষেত বাঁচাতে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেছেন। ৬০ শতক জমিতে টমেটো চাষে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আর টমেটো ক্ষেত থেকে চলতি মার্চ ও আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করতে পারবেন। এতে প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকার টমেটো বাজারে বিক্রির আশা রয়েছে।

মো. এনামুল হক এনাম বলেন, মামা-ভাগিনা একসঙ্গে থাকলে আপদ বিপদ থাকে না। একসঙ্গে মিলে টমেটোর চাষ করায় ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি উভয়ই লাভবান হবো। চাষাবাদে কৃষি অফিসার শামীম স্যারের কাছ থেকে সার্বিক পরামর্শ পাচ্ছি। আমাদের চাষে সফলতা দেখে এলাকার অন্য চাষিরাও টমেটো চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।

এলাকার চাষি তৌহিদ মিয়া বলেন, টমেটো চাষে তারা মামা-ভাগিনা চমক দেখিয়েছেন। বিশেষ করে তারা  বিষমুক্ত টমেটো চাষ করছেন। আমার জমিতেও বারোমাসী ফসল চাষ করছি। কৃষিতে ব্যয় করে সফলতা পাচ্ছি।
দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, মনের ইচ্ছা আর শ্রম ও মেধা কাজে লাগালে সফলতা আসে। বাহুবলী জাতের টমেটো চাষ করে তার প্রমাণ দিলেন সাইফুল ইসলাম সাজল ও এনামুল হক এনাম। তারা কঠোর শ্রম দিচ্ছেন। আর আমি তাদের দিচ্ছি সুপরামর্শ। এ কারণে ক্ষেতে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। বিক্রি চলছে তাদের উৎপাদিত টমেটো। আশা করছি তারা লাভবান হবেন।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, একসঙ্গে মিলে কাজ করলে সফলতা আসে। এর প্রমাণ দিলেন হাফিজপুর গ্রামের বাসিন্দা মামা ও ভাগিনা। তারা মিলে জমি লিজ নিয়ে টমেটো চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। আমরা তাদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। শুধু তাদের নয়, উপজেলার অন্যান্য চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। তাতে টমেটোসহ নানা জাতের ফসলের ব্যাপক ফলন হচ্ছে।
 

টিএস

×