ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উলিপুরে দিনমজুরের টাকায় গড়ে উঠেছে পাঠাগার

এম সাহেব আলী মন্ডল,উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ১৪ মার্চ ২০২৩; আপডেট: ১৫:৫৯, ১৪ মার্চ ২০২৩

উলিপুরে দিনমজুরের টাকায় গড়ে উঠেছে পাঠাগার

পাঠাগার

কুড়িগ্রামের উলিপুরে শ্রমিক জয়নাল আবেদীন দিনমজুরের টাকায় গড়ে তুলেছেন গরীবের পাঠাগার। স্থানীয় বইপ্রেমী মানুষের পিপাসা মিটাচ্ছে এ পাঠাগারটি। এলাকায় ছড়াচ্ছে জ্ঞানের আলো। দূর-দুরান্ত হতে মানুষজন আসছে পাঠাগারটি দেখতে। 

উপজেলার বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের সাতভিটা গ্রামে জয়নাল আবেদীনের বাড়ী। ২০০৫ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুতে জয়নাল আবেদীনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তাই কিশোর বয়সে সংসারের বোঝা পরে তার কাঁধে। জীবন জীবিকার তাগিদে দিশেহারা জয়নাল বাড়ি থেকে বের হয়ে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে একটি ইটভাটায় সামান্য মজুরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেন তিনি। সময় পেলে ফুটপাত হতে পুরনো বই কিনে পড়তেন। এমনকি বাড়িতে এলে বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে বই চেয়ে নিয়ে পড়তেন। এভাবে বইয়ের প্রতি জন্ম নেয় তার ভালোবাসা। জয়নাল আবেদীনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন গরিব শিক্ষার্থীদের বই পড়ার জন্য একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে নিজগ্রামে সাতভিটা গ্রন্থনীড় পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দিতে শুরু করেন। একটা বই পড়া শেষ হলে আবার নতুন বই দিয়ে আসতেন। গ্রামের মানুষ এজন্য তাকে পাগল বলতো। তবুও তিনি থেমে যাননি তার স্বপ্ন পূরণে। দিন দিন পাঠকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আরো বই সংগ্রহ করতে থাকেন জয়নাল। 
পাঠাগার চালু করতে দিনমজুরের জমানো টাকায় ২০১৯ সালে প্রতিবেশী নজির হোসেনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকায় এক শতক জমি কিনেন।  সেখানে একটি টিনের ঘর তুলে সাতভিটা গ্রন্থনীড় পাঠাগারের কার্যক্রম শুরু করেন । 

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে সাতভিটা গ্রন্থনীড় পাঠাগারে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শিশু, কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থী ও এক এনজিও কর্মী বই পড়িতেছে। তাদের মধ্যে ছিল বকশীগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র গোলাম আযম (১৬), ভীষণ পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র, একরামুল হক (১৭) পাঁচপীর ডিগ্রী কলেজের ছাত্র, আরিফুল ইসলাম (১৭), সাতভিটা বিশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী, মারজানা আক্তার (১২) এনজিও কর্মী পরেশ চন্দ্র(৫০)। জয়নালের  আঁকুতি, অভাবের কারণে আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। তাই পাঠাগার করেছি। আমি চাই, আমার মতো অবস্থায় কেউ যেন না পড়ে। 

সে বলেন, বর্তমানে এই পাঠাগারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জীবনী,  গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই সহ প্রায় ৩ হাজার ৮ শ বই রয়েছে। দৈনিক প্রায় ২০-২৫ জন শিশু-কিশোর, বয়োবৃদ্ধ এখানে এসে এসব বই পড়ে  সময় কাটায়। অনেকে আবার বই নিয়ে বাড়িতে যায়। পড়া হলে সেটি জমা দিয়ে নতুন করে আবার বই নেয়। 

তিনি জানান, ইতোমধ্যে পাঠাগারের নিবন্ধনও পেয়েছি। ২০২০-২১ অর্থবছরে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি-৩) এর আওতায় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণ সহ  কিছু আসবাবপত্র এবং ২০২১ সালে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে সাতভিটা গ্রন্থনিড় পাঠাগার কে ৩৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়। জয়নালের আশা, তার হাতে গড়া এই পাঠাগারটি একদিন এলাকায় বাতিঘর হিসেবে পরিচিতি পাবে।


 

টিএস

×