ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফাল্গুনে উৎসবমুখর নেত্রকোনা

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা

প্রকাশিত: ০১:৪০, ৩ মার্চ ২০২৩

ফাল্গুনে উৎসবমুখর নেত্রকোনা

শিশু-কিশোরদের নৃত্যানুষ্ঠান

ঋতুর রাজা বসন্ত। এ ঋতুতে পলাশ, শিমুল, গাঁদাসহ বাহারি রঙের ফুল ফোটে। ফুলে ফুলে অপরূপ রূপে সাজে প্রকৃতি। আর প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তখন আন্দোলিত হয় মানবমন। তাই চারদিকে চলে বসন্তবরণের নানা আয়োজন। সর্বত্র বিরাজ করে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।  
হাওড়-বাঁওড় আর গারো পাহাড়ের জেলা নেত্রকোনাও এর ব্যতিক্রম নয়। সংস্কৃতির রাজধানীখ্যাত এ জেলায় বসন্তের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন উৎসবের। আর তা চলে টানা কয়েক দিন পর্যন্ত। 
বরাবরের মতো এবারও ১ বসন্তে নেত্রকোনা শহরের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘২৬তম বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব ও খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান’ অনুষ্ঠান। নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজ আয়োজিত এ উৎসব সকাল ৯টায় উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর। উদ্বোধনের পর শহরের প্রধান সড়কে বের করা হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। সকাল ১০টায় উদীচীর শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় বসন্তবরণ, তবলার লহড়া, বাঁশির মূর্ছনা ও নৃত্য-গীত। সকাল সাড়ে ১০টায় কয়েকশ’ শিশু মিলিত হয় চিত্রাঙ্কন উৎসবে।

এরপর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে স্বরচিত কবিতা, ছড়া ও গল্পপাঠ এবং সাহিত্যবিষয়ক সেমিনার। 
সন্ধ্যার পর বিশিষ্ট প্রচ্ছদ ও কথাশিল্পী ধ্রুব এষ এবং কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমানের হাতে তুলে দেওয়া হয় খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩। নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সভাপতি অধ্যাপক মতীন্দ্র চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরানের সঞ্চালনায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার, কথাসাহিত্যিক গিয়াস আহমেদ, কবি কামরুল হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আক্কাছ আহমেদ ও কবি সরোজ মোস্তাফা প্রমুখ।

নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরান জানান, ২৬ বছর ধরে প্রতিবছরের ১ বসন্তে নেত্রকোনার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কবি-সাহিত্যিকদের সমন্বয়ে সর্বজনীন উদ্যোগে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তের কবি-সাহিত্যিকরা বরাবরের মতো এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। 
এদিকে বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শহরের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সপ্তাহব্যাপী বইমেলা। প্রথমবারের মতো এ বইমেলার আয়োজন করে নেত্রকোনা সাধারণ গ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটি। প্রথম দিন বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনিমেষ সোম মেলার উদ্বোধন করেন।

নেত্রকোনা সাধারণ গ্রন্থাগারের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান রঞ্জনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক মতীন্দ্র চন্দ্র সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আক্কাছ আহমেদ, কবি অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বাচ্চু, কবি স্বপন পাল ও নেত্রকোনা সাধারণ গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক মারুফ হাসান খান অভ্র প্রমুখ। মেলায় রকমারি বইয়ের বেশকিছু স্টল অংশগ্রহণ করে।

এর মধ্যে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে ‘নেত্রকোনার গ্রন্থ পরিচয়’, ছাত্রলীগের নেত্রকোনা সরকারি কলেজ শাখার ‘সাইডুলি’ ও জয়ধ্বনি প্রকাশনীর একটি স্টল। মো. ইসহাকের পরিচালনায় ‘নেত্রকোনার গ্রন্থ পরিচয়’ নামক স্টলটিতে শতাধিক স্থানীয় লেখকের বই প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়। এ মেলাতেও প্রতিদিন জেলা শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন সংগীত পরিবেশন করে। পাশাপাশি স্বরচিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ পাঠ করেন স্থানীয় লেখকরা। নেত্রকোনা সাধারণ গ্রন্থাগারের 
সাধারণ সম্পাদক মারুফ হাসান খান অভ্র বলেন, ‘আমরা এ বছর প্রথমবারের মতো এ বইমেলার আয়োজন করেছি এবং তাতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। আশা করছি, প্রতিবছরই নেত্রকোনা সাধারণ গ্রন্থাগারের উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করব।’  
এ ছাড়াও ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে নেত্রকোনা শহরের পুরাতন কালেক্টরেট চত্বরে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী কুটির শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। এটির আয়োজন করেছে নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাব। রকমারি পণ্যের পসরা ছাড়াও এ মেলায় রয়েছে শিশু-কিশোরদের উপযোগী নাগরদোলা, চরকাসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন ব্যবস্থা। প্রতিদিন হাজারো ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে এ মেলায়।  
৮ ফাল্গুন বসন্তের বাতারবরণে বিশেষভাবে যুক্ত হয় অমর একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনা। ওই দিনটিও অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয়েছে নেত্রকোনায়। দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ছাড়াও সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাতফেরি। এ ছাড়াও শিশু একাডেমির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে চিত্রাঙ্কন ও কবিতাপাঠ।

সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এক কথায়, নেত্রকোনায় ১ বসন্তে শুরু হওয়া উৎসবের রেশ এখনো চলছে। চলবে টানা আরও কিছুদিন। আর এর মধ্য দিয়ে গানে, কবিতায়, শিল্পে আরও কিছুদিন মেতে থাকবে 
এখানকার মানুষ। 
সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা

×