ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌর সেচপাম্পে অর্ধেক খরচ ॥ কৃষকের মুখে হাসি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সৌর সেচপাম্পে অর্ধেক খরচ ॥ কৃষকের মুখে হাসি

আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের যবসেন এলাকায় সোলার প্যানেল

বিদ্যুৎ এবং ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে সৌর সোলারের সেচপাম্পে অর্ধেক খরচে জমিতে সেচ দিতে পেরে জেলার কৃষি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত আগৈলঝাড়া উপজেলার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় একটি এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আওতায় একটি সৌর সোলার সেচ চালিত পাম্পের মাধ্যমে দুইটি বোরো ব্লকের ৫০ একরের অধিক জমিতে অর্ধেক খরচে চাষাবাদ করতে পেরে উপকৃত হচ্ছেন শতাধিক কৃষক পরিবার।

এলাকায় সোলার সেচপাম্পের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আশাতীত সেচপাম্প না থাকায় অধিক খরচ দিয়ে চাষাবাদ করা কৃষকরা এলাকায় আরও সৌর সোলার সেচপাম্পের আওতায় কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের যবসেন এলাকায় সোলার সেচ স্কিমের আওতায় ৩০ একর কৃষি জমি এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আওতায় এক কিউসেক সৌর শক্তি চালিত এলএলপি পাম্প স্থাপনে মোট ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৫ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৬ হাজার কিউসেক পানি সরবরাহ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প স্থাপন করা হয়। পৃথক টেন্ডারের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৬ টাকা ব্যয়ে পাম্প হাউস নির্মাণ, পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার ১২৭ টাকায় পাইপ বসানো স্ট্রাকচার নির্মাণ, ২১ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ টাকা ব্যয়ে সোলারের প্যানেলসহ মালামাল এবং চার লাখ টাকা ব্যয়ে পাইপ বসানোর কাজ করা হয়।

বর্তমানে ওই দুটি ব্লকের সেচ কাজের জন্য ৩০ একর জমিতে সাড়ে পাঁচ হাজার ওয়াট সম্পন্ন সৌর সোলার সেচে পানি সরবরাহ করা হয়। এরমধ্যে যবসেন সৌর সোলার পাম্পে অতিক্ষমতা সম্পন্ন ৪২টি সোলার প্যানেল রয়েছে। 
যবসেন ব্লকের ম্যানেজার হেমায়েত ফকির জানান, তিনি সৌর সোলার সেচের মাধ্যমে চাষিদের জমিতে পানি সেচ দেওয়া বাবদ প্রতি শতকে ২০ টাকা করে নিচ্ছেন। অথচ পাশেই অন্য ব্লকে বিদ্যুতের মাধ্যমে মোটর দিয়ে পানি দিয়ে প্রতি শতক ৩৫ টাকা, ডিজেল চালিত ব্লকে সেচ দিতে শতক প্রতি ৪০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তারপরেও দাম বৃদ্ধি ও চাহিদা মতো বিদ্যুৎ এবং ডিজেল পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই এলাকার কৃষকের কথা চিন্তা করে আরও বেশি সৌর সোলার স্থাপনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার দোলন চন্দ্র রায় প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, সরকারি নির্দেশে দেশের সকল অনাবাদি জমি সেচের আওতায় আনা, ফসলের উৎপাদন খরচ কমানো, বিদ্যুতের সাশ্রয়, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির এই প্রকল্পটি (পাইলট) সরকার গ্রহণ করে। 
অপরদিকে উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পশ্চিম কোদালধোয়া গ্রামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাইলট প্রকল্পের আওতায় সৌর শক্তি ও পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৩০ কৃষক পরিবারের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সৌর সোলার চালিত ২০ একর জমিতে পানি সরবরাহ করা হয়। ওই প্রকল্পে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পশ্চিম কোদালধোয়া ব্লকের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য গনেশ পান্ডে জানান, সৌর সোলার সেচে প্রতিজন চাষি জমিতে ফলানো ধান থেকে পানির খরচ বাবদ ২০ ভাগের একভাগ ধান ম্যানেজারকে দিয়ে থাকেন।

অন্যদিকে পাশেই ডিজেল চালিত ব্লকে কৃষকের ফলানো ধান থেকে ম্যানেজারকে পানির খরচ বাবদ ১০ ভাগের একভাগ ধান দিতে হয়। এখানে অতিমাত্রার ক্ষমতা সম্পন্ন ২৬টি সোলার প্যানেল রয়েছে। প্রতিদিন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পাম্প চালু করে চলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। বরিশাল অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জিএম আব্দুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি সরকারের একটি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প। পানির অপচয় রোধ করে প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করে চাষিদের চাহিদা পূরণে প্রকল্পটি সক্ষম হচ্ছে।

×