ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মানিকগঞ্জ-২

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে ভোট

গোলাম ছারোয়ার ছানু, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে ভোট

রাজধানী ঢাকার সীমানা ঘেষা সংসদীয় আসন ১৬৯, মানিকগঞ্জ-২

রাজধানী ঢাকার সীমানা ঘেষা সংসদীয় আসন ১৬৯, মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর) আসন। ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে থাকলেও বর্তমানে চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসনটি এখন আওয়ামী লীগের দখলে। এ আসন থেকে নির্বাচিত দুইবারের সংসদ সদস্য দেশের খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম শক্ত ভীত গড়ে তুলেছেন এলাকায়। তবে আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থিতা নিয়ে দলটিতে মতবিরোধ স্পষ্ট।

বিএনপিতেও থাকা কোন্দলে বিশৃঙ্খল অবস্থা। আওয়ামী লীগ আসনটি ধরে রাখতে আর আসনটি পুনরুদ্ধারে ক্ষমতাসীন দলের কোন্দল থেকে ফায়দা তুলতে চায় বিএনপি। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরও রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। ফলে আগামী নির্বাচনে আসনটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। 
সিংগাইর-হরিরামপুর উপজেলা ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে মোট ২৪টি ইউনিয়নের নারী-পুরুষ মিলে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬২৪ ভোটার নিয়ে গঠিত এই আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ আসনে জয়লাভ করে। এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট হলে জাতীয় পার্টি এ আসনটি চাইবে।

আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে এমপি মমতাজ বেগমের উপজেলা সিংগাইরে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জয়লাভ করলেও শোচনীয় পরাজয় হয় এই উপজেলায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় আসনটিতে এবার বেশ চাপে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

তবে চাপে থাকলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এমপি মমতাজ বেগম। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল এ আসনে সকলের পরিচিত মুখ। এছাড়া জাতীয় পার্টির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট হলে জাপার টার্গেটেও রয়েছে মানিকগঞ্জের এই আসনটি। 
এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় দুইবারের সংসদ সদস্য দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম ছাড়াও শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক তারকা ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। আরও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং দু’বারের হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার সালাম চৌধুরী।
সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী তার সঙ্গে আছেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে এই আসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছায় সকল ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে, যা গত ৪০ বছরেও হয়নি। তার বিশ্বাস আগামী নির্বাচনেও জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেবেন। 
প্রধান শক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল বলেন, বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জ মানিকগঞ্জ-২ আসনটি বর্তমানে আওয়ামী লীগের যে শক্ত অবস্থান, সেটা আমার হাত ধরেই হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকেই সিংগাইর হরিরামপুরসহ সারা মানিকগঞ্জে সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনের গতি ফিরে আসে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েও জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেই।

ওই নির্বাচনে আমার হাতে গড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তির ওপর ভর করেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সৈয়দ আব্দুল মান্নান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। মহান আল্লাহ তায়ালা সহায় থাকলে অবশ্যই সফলকাম হবো ইনশাআল্লাহ।
আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন করেছি। দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে জনগণের সেবা করে যাচ্ছি। আশা করি মাননীয় নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার সালাম চৌধুরী বলেন, গত জেলা পরিষদের নির্বাচনে হরিরামপুর থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলাম। দলীয় সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।
১৯৯০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। মাঠপর্যায়ে ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও মামলাসহ তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় কর্মসূচি পালন না করাসহ দলটিতে বিশৃংখল অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপি সভাপতি আফরোজা খান রিতা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান শান্ত দু’গ্রুপে বিভক্ত স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মঈনুল ইসলাম খান শান্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী। জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতাকে এ আসন থেকে নির্বাচন করার দাবি করছেন এই উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই দলটির নেতাকর্মীরা মূলত দুই গ্রুপের পাশাপাশি ব্যক্তি কেন্দ্রিক উপ-গ্রুপও রয়েছে। তবে মনোনয়ন দৌঁড়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। তার প্রয়াত পিতা সাবেক শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া এই আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। 
মঈনুল ইসলাম খান শান্ত বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। এত বড় দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকা খুবই স্বাভাবিক। বর্তমানে দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। সভা-সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা আসনটি আগামী নির্বাচনে পুনরুদ্ধার করব ইনশাআল্লাহ।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য, মানিকগঞ্জ জেলা জাপা সভাপতি এবং মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আব্দুল মান্নান বলেন, ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর এলাকার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তেই সরে দাঁড়িয়েছি। নির্বাচন এককভাবে হোক বা মহাজোটের ব্যানারে হোক- এই আসনে আমি নির্বাচন করব ইনশাআল্লাহ। 
এদিকে ১৯৮৬ থেকে ’৯০ পর্যন্ত এরশাদ সরকারের আমলে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন। সম্প্রতি তিনি জাতীয় পার্টির (রওশন এরশাদপন্থি হিসেবে) এলাকায় এসে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ আসনে অন্য কোনো দল এখন পর্যন্ত মাঠে নামেনি।

×