ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানিকগঞ্জ-১

বড় দুই দলেই একাধিক প্রার্থী

গোলাম ছারোয়ার ছানু, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

বড় দুই দলেই একাধিক প্রার্থী

ভোটের হাওয়া লেগেছে মানিকগঞ্জ-১

ভোটের হাওয়া লেগেছে মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর-শিবালয়) আসনেও। বিভিন্ন দলের প্রায় এক ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। গত তিনটি নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলেই রয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ চাইছে নৌকার বিজয়কে সুনিশ্চিত করে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করতে। অন্যদিকে বসে নেই বিএনপিও। তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’দলেই রয়েছে একাধিক মনোয়নপ্রত্যাশী।
ঘিওর-দৌলতপুর-শিবালয় উপজেলা নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-১ আসন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মনোনয়ন কে পাচ্ছেন এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক মহলে আলোচনা এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেশের  উন্নয়নের কথা বলছেন, নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা শুরু করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে আকার ইঙ্গিতে কথাও বলার চেষ্টা করছেন। 
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন ও উপজেলা সম্মেলন শেষ করে কমিটি গঠন করেছে। বসে নেই বিএনপিও। তারাও নির্বাচনী আসনের উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। অনেকটা গোপনে হলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় কর্মকা-ের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে বিভিন্ন দলের প্রায় এক ডজন নেতা মনোনয়ন লাভের আশায় মাঠে রয়েছেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ আসন ‘বিএনপির ঘাঁটি’ বলে পরিচিতি লাভ করে। গত ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ৪ আসন বিশিষ্ট এ জেলা পুনর্বিন্যাস করে ৩টি আসন করা হয়। এরপর থেকে জেলার সবকয়টি আসনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিতি লাভ করেছে। এই আসনের ৩টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে নারী-পুরুষ মিলে চার লাখ ১০ হাজার ৯৯৪ জন ভোটার রয়েছেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে দুবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তাঁর পিতাও ১৯৭৩ সালে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পরপর দুবারের সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম রাজা, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আনোয়ারুল হক, শিবালয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করার পর থেকে বিএনপি তাদের হাতছাড়া এ আসন আর পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। বিএনপি এ আসন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ্ কবীর, বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব দেলোয়ার হোসেনের পুত্র ড. খন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক তোজাম্মেল হক তোজা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জাসদ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন খান জকি। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের কোনো প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যায়নি। 
এ আসনের দুবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয় পুনরায় মনোনয়ন লাভের বিষয়টি স্পষ্ট বলে দাবি করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতারা। তিনটি উপজেলার সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতা দুর্জয়কে আগামীর নৌকার প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের নেতাকর্মীরা জোর দিয়েই বলছেন, এবার এই আসনে নতুন মুখ দলীয় মনোনয়ন লাভ করবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, মানিকগঞ্জ জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন স্তরের দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ অনেকটা প্রকাশ্যে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও দলীয় কাউন্সিলকে ঘিরে বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। যার প্রভাব আগামী নির্বাচনে কিছুটা পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
এ আসনে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিভেদ রয়েছে। অতীতে এ আসনে এক ভাই আর এক ভাইয়ের বিরোধিতা করতে দেখা গেছে। কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করে এক প্রার্থীর পাওয়া মনোনয়ন আর এক প্রার্থী বদলে নিয়েছে। এবারও সেই ধরনের দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন এ আসনের বিএনপির সাধারণ কর্মীরা। তবে দলটির একনিষ্ঠ সমর্থকরা মনে করছেন, ধানের শীষের প্রার্থী যাকেই দেওয়া হোক না কেন, আসনটি পুনরুদ্ধারে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এ আসনে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন খান জকি নিশ্চিত প্রার্থী। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের কাছে পরাজিত হন ।
এই আসনে দু’বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য নাইমুর রহমান দুর্জয় তাঁর নির্বাচনী এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়নের কথা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রচারসহ আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে আসছেন। তিনি বলেন, এ আসনে নৌকার হাল তাঁর হাতেই সুরক্ষিত থাকবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তাঁর সময়ে প্রধানমন্ত্রী এ আসনে ব্যাপক উন্নয়নের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনটি উপজেলার উন্নয়নের চিত্রই এখন দৃশ্যমান।

এ অঞ্চলের মানুষ এই উন্নয়নের জন্যই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবার সরকার গঠন করার সুযোগ দেবেন। আগামী নির্বাচনে তিনটি উপজেলার সকল নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।
অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, আগামী ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসন আবারও আওয়ামী লীগকে উপহার দেব। এমপি নির্বাচিত হলে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা এবং ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাব।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে আগামী নির্বাচনে এই মানিকগঞ্জ-১ আসনকে নেত্রীর হাতে তুলে দিতে সকলকে নিয়ে কাজ করে যাব। 
মনোনয়নপ্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাজা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে আমি বেশ আশাবাদী। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দলের হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা সবাই একযোগে তার হয়ে কাজ করব।
ঘিওর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান আলাই বলেন, বর্তমান এমপি দুর্জয় ও জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম এ দুজনের মধ্যে মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তবে দল থেকে যিনি মনোনয়ন পাবেন, আমরা তার হয়েই কাজ করব।
অপরদিকে, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবীর বলেন, বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতাকর্মীদের সীমাহীন দুর্নীতি, অন্যায়-অত্যাচারসহ নানাবিধ কারণে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়লে এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হলে ধানের শীষের প্রার্থী আমিই হই বা আর যেই হোক না কেন আমাদের বিজয় নিশ্চিত হবে।
সাবেক জেলা ছাত্রদলের সভাপতি দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের বর্তমান আহ্বায়ক তোজাম্মেল হক তোজা বলেন, মনোনয়ন পেলে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে ধানের শীষকে নিশ্চিত জয়ী করতে পারব।

×