ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে চালু হওয়ায় এলাকাবাসী খুশি

স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হলো তক্তার ব্রিজ

সংবাদদাতা, চন্দনাইশ

প্রকাশিত: ০০:০৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হলো তক্তার ব্রিজ

চন্দনাইশ হাশিমপুরে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত ব্রিজ

ভোটের আগে সবাই কথা দিয়ে যায়, কিন্তু ভোট হয়ে গেলে আর কারো দেখা মেলে না। ব্রিজটির জন্য কত কষ্ট করতে হয় গ্রামের মানুষের। বর্ষা এলে অনেক দূর ঘুরে যেতে হয় খানহাট ও শহরে। অবশেষে স্থানীয়দের অর্থায়নে প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিাণ হলো উপজেলার মধ্যম হাশিমপুর নোয়া মোজাহের পাড়া এলাকায় বরুমতি খালের ওপর তক্তার ব্রিজ।  
জানা যায়, উপজেলার মধ্যম হাশিমপুর নোয়া মোজাহের পাড়া ও এরফান চৌধুরী বাড়ির মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বরুমতি খালের ওপর অর্ধশত বছর পর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হয়েছে কাঠের ব্রিজ। এলাকার পূর্বপুরুষেরা অর্ধশত বছর ধরে রেল লাইনের পাশ দিয়ে চলাচল করে আসছে। ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের চলাচল। সম্প্রতি রেল লাইন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ায় চলাচলের পথটিও বন্ধ হওয়ার পথে। ফলে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে স্থানীয়রা নিজস্ব উদ্যোগে কাঠ দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্থানীয়রা কেউ অর্থ দিয়ে, কেউ কায়িক শ্রম দিয়ে ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করে। অবশেষে চলতি বছর ডিসেম্বর মাসে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান তার পরিষদ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। এর সঙ্গে তাদের সংগৃহীত টাকাসহ ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আরসিসি’র সঙ্গে ব্রিক দিয়ে ৩টি পিলার নির্মাণ করা হয়। কাঠের তক্তা বসিয়ে ব্রিজ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে স্থানীয়রা। নির্মাণ হওয়ার পর ২ পাড়ার মধ্যে সামাজিক সেতুবন্ধন সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে সম্প্রীতি। ২ শতাধিক পরিবারে সহ¯্রাধিক মানুষের মাঝে আনন্দের সঞ্চার বইছে।
সরেজমিন গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন সড়কের শুরুতে বিধবা মোস্তফা খাতুনের (৬৫) জায়গা জোরপূর্বক দখল করে সড়ক নির্মাণ করতে গেলে তিনি বাধা প্রদান করেন । মারধর করে তাকে আহত করায় তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, তার পিতার নিজস্ব জায়গায় কবরস্থান করার জন্য সে জায়গাটি রেখেছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার গোলাম নবী চৌধুরীসহ অনেকেই বলেছেন, তার কিছু জায়গা সড়কে পড়েছে। চলাচলের আইলকে ৬ ফুট করতে গিয়ে কিছু অংশ ঢুকেছে। মোস্তফা খাতুনের স্বামী আব্দুল মালেক অনেক আগে মারা যান। একমাত্র মেয়ে খতিজা বেগমের স্বামী ৩ কন্যা রেখে চলে যান। অতিকষ্টে চলে মোস্তফাদের সংসার জীবন।
দীর্ঘ ১১ মাস ধরে পালা বদল করে প্রতিদিন ৮/১০ জন লোক, মাটি কাটা, কাঠের সাইজ করা, ব্রিজের উভয়পাশে সড়ক সংস্কার করে চলাচলের জন্য উপযোগী করে। সিরাজুল ইসলাম, এজাহার  মিয়া, আবদুল মাবুদসহ অনেকে বলেছেন, এলাকার উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষি পণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারে নিয়ে যেতে ব্যাপক দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে তাদের। সরকারের কাছে তাদের একটাই আকুতি- ব্রিজ নির্মাণ করা দেশের কত জায়গায় কত উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু আমাদের এ ব্রিজটি কেউ নির্মাণ করেনি। তারা স্বেচ্ছাশ্রমে যে যেভাবে পেরেছে অর্থ, শ্রম, বুদ্ধি, পরামর্শ দিয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণের পাশাপাশি মোজাহের পাড়া এলাকায় সড়কের পাশে গাছ কেটে মাটি ভরাট করে সড়ক সংস্কার করেছেন। তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরীর আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন। কাক্সিক্ষত কাঠের ব্রিজটি উদ্বোধন করা হয়েছে।

×