ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাঙলের দুর্গে ভাগ বসাতে মরিয়া নৌকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২১ ডিসেম্বর ২০২২

লাঙলের দুর্গে ভাগ বসাতে মরিয়া নৌকা

রসিক নির্বাচনে বুধবার শাপলা এলাকায় জাপার মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই প্রার্থীদের বাকযুদ্ধে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রতিদিনই ভোটারদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির কথা শোনানোর সঙ্গে চলছে প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি ‘বাক্যবাণ’। ভোট প্রচারে মাঠে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তফিজার রহমান মোস্তফা ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার নিত্যনতুন কথা এখন ভোটারদের আলোচনায়। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন। চলছে নৌকা ও লাঙল প্রতীকের দুই প্রার্থীর পক্ষে কথার যুদ্ধ।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকরা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে প্রচার চালিয়ে জাতীয় পার্টির দুর্গ ভেঙে ফেলার চেষ্টায় আছেন। জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকরা নিজেদের ঘাঁটিতে ফসল ঘরে তোলার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। এবারের নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজের পাশাপাশি দলীয় প্রতীকও প্রাধান্য পাচ্ছে। মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা গত পাঁচ বছর মেয়র ছিলেন। তার আমলে সিটিতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, সেসব তুলে ধরে ভোট চাইছেন তিনি। জাতীয় পার্টি মনে করে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে লাঙল প্রতীকের বিজয়ের বিকল্প নেই।

এরশাদের পতনের পর ১৯৯০ সাল থেকে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে রংপুর পরিচিত। মোস্তফা বলেন, রংপুরে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়। তাই লাঙলের বিজয় সুনিশ্চিত। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, সারাদেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় রংপুর বিভাগে সিটি করপোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, ছয় লেন সড়ক, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ নানা খাতে উন্নয়ন হয়েছে। তবে যোগ্য প্রতিনিধি না থাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি রংপুর সিটি এলাকায়। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়াসহ কাক্সিক্ষত উন্নয়নে নগরবাসী আর ভুল করবেন না।

এবার মেয়র পদে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন তারা। ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ৯ জন মেয়র প্রার্থীসহ ২৬০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে রয়েছেন ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের বিপরীতে ৬৮ জন এবং ৩৩টি সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ১৮৩ জন। প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দু’জন থেকে পাঁচজন পর্যন্ত কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। ৩৩টি ওয়ার্ডে শতাধিক আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। নৌকা মার্কার প্রচারে তারা অংশ নিতে পারছেন না।

রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও তিন ভাগের এক ভাগ ওয়ার্ডে দল সমর্থিত কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। হাতে গোনা কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দিলেও তৃণমূলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা কাজ করছেন লাঙল মার্কার পক্ষে। তাদের মনোযোগ শুধু কাউন্সিলর নন, লাঙল মার্কার মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে চলছে ব্যাপক প্রচার। আওয়ামী লীগের ১১টি টিম উন্নয়নের সপক্ষে জনমত গঠনে মাঠে নেমেছে।
আর মাত্র ৬ দিন পরেই নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র প্রার্থীদের মাঝে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা ওই দিন কী করবেন এ নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা সাফ বলেছেন নির্বাচন বর্জন করেছি। ভোট দানেও বিরত থাকবেন নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি নেতাদের তথ্য মতে জামায়াত ও বিএনপির সমর্থক ভোটার রয়েছে ৭০ হাজারের বেশি। এসব ভোটারদের মান ভাঙাতে একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চলছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা নিজস্ব দলীয় ভোট ছাড়াও হিন্দু ও অবাঙালি ভোটারদের ভোট তারা পাবেন। হিন্দু ও অবাঙালি ভোট রয়েছে ৬০-৭০ হাজার। জাতীয় পার্টি হিসেব করছে সিটি করপোরেশনের বর্ধিত যেসব এলাকা রয়েছে সেইসব এলাকার ভোটারদের পক্ষে নিতে পারলে জয় সুনিশ্চিত। এছাড়া এটা লাঙলের ঘাঁটি এই তৃপ্তিও রয়েছে জাপার মাঝে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলনের সমর্থকরা হিসেব করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত এবং বিএনপি-জামায়াতের ভোট নিজের পক্ষে নিতে পারলে তিনি ভোটে জয়ী হবেন। মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিন্দু ভোটাররা নৌকা মার্কাকেই বেছে নেবেন। কারণ ১৯৯০ সালের পর থেকে রংপুর সদর একচেটিয়া শাসন করছে লাঙল প্রতীক। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।

অপরদিকে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পক্ষে কাজ করেছিলেন অবাঙালি নেতারা। সেই সমীকরণ মাথায় রেখেও নৌকা মার্কার নেতারা কাজ করছেন তারা। জাতীয় পার্টি মনে করছে এটা তাদের ঘাঁটি। তার পরেও জাপা উন্নয়ন বঞ্চিত বর্ধিত এলাকার দিকে বেশি জোর দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের ভোট তার পক্ষে নেওয়ার জন্য নেতা-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা মার্কার আমিরুজ্জামান পিয়ালের পক্ষ থেকেও বিএনপি-জামায়াতের ভোট নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত যদি ভোট বর্জন করে তাহলে ভোট প্রদানের হার গতবছরের চেয়ে অনেক কম হবে এমনটাই মনে করছেন নির্বাচক বিশ্লেষকরা। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু বলেন, আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। সেই সঙ্গে ভোটও বর্জন করেছি।

নেতা-কর্মীদের ভোট দান থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। রসিক নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর থেকে পাঁচদিন আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস এ তথ্য জানিয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

×