ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মধ্যপাড়া খনিতে সাড়ে ৪ মাস পর পাথর উত্তোলন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর/নিজস্ব সংবাদদাতা, পার্বতীপুর

প্রকাশিত: ০০:০১, ১৪ অক্টোবর ২০২২

মধ্যপাড়া খনিতে সাড়ে ৪ মাস পর পাথর উত্তোলন শুরু

পাথর উত্তোলন

পাথর উত্তোলনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট না থাকায় দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস বন্ধ থাকার পর দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনি দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়ায় অবশেষে পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপাদান বিস্ফোরক আসায় (দ্বিতীয় শিফট) বিকেল থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে।

দীর্ঘদিন পর আবার পাথর উত্তোলন শুরু হওয়ায় খনির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।  খনি সূত্রমতে, খনি ভূগর্ভে পাথর উৎপাদন কাজে এক্সপ্লোসিভ (ইমালশন) সঙ্কটে পড়ে এ বছরের ১ মে থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ (বিস্ফোরক) সঙ্কটে পড়ে ১২-২৬ মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ ছিল। সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে প্রতি তিন মাস অন্তর এক্সপ্লোসিভ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা।

খনি কর্তৃপক্ষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিস্ফোরকের জোগানও দিতে পারছিল না। খনির ঠিকাদার জিটিসির অধীনে কর্মরত সাড়ে ৭শ’ খনি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ে। পাথর না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় বিক্রি কার্যক্রমও। অন্যদিকে, খনি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে জিটিসির মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যপাড়ার পাথরের ওপর নির্ভরশীল দেশের নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো পাথর সঙ্কটের মুখোমুখি হয়। মধ্যপাড়ার পাথর উন্নতমানের হওয়ায় দেশীয় বাজারে এর উচ্চ চাহিদা রয়েছে। এমজিএমসিএল তার উৎপাদিত পাথর ৯৭ জন ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করে।  
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান বলেন, খনিতে গত বুধবার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ১০০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক পৌঁছেছে। আগামী ১৫ অক্টোবর আরও ১২০ টন চট্টগ্রাম পৌঁছার কথা রয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের শেষে আরও ১৫০ টন বিস্ফোরক বেনাপোলে পৌঁছার কথা রয়েছে।

তাই আশা করা হচ্ছে, এ অবস্থায় আগামী ৬ মাস নিরবচ্ছিন্ন খনি পরিচালনা করা যাবে। প্রথম দিন তিন শিফটে পূর্ণমাত্রায় কাজ চলবে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন সম্ভব হবে।  বর্তমানে মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর উত্তোলন করছে বেলারুশের ঠিকাদার জার্মানিয়া স্ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। চুক্তি অনুযায়ী পাথর উত্তোলনের জন্য যাবতীয় মেশিনারিজ, ইকুইপমেন্ট ও বিস্ফোরক জোগান দেবে এমজিএমসিএল।

জিটিসি পাথর উত্তোলন করবে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার মে.টন। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত সাড়ে ৪ মাস খনি বন্ধ থাকায় ঠিকাদার কোম্পানিকে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে। সরকার প্রতি মাসে রাজস্ব হারায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি। পাথরের অভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে দেশের অনেক বড় বড় মেগা প্রকল্প।  
জানা গেছে, মধ্যপাড়া খনির ভূগর্ভে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। এ জন্য বছরে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার এক্সপ্লোসিভ (এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ইমালশনসহ বিস্ফোরণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য মালামাল) প্রয়োজন হয়। এসব মালামালের পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। লেবাননের বৈরুতে এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের গুদামে বিস্ফোরণ, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে এক্সপ্লোসিভের তীব্র সঙ্কট দেখা যায়।

×