ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাহিরপুর সীমান্তের ওপারে পাহাড়ী ঢল

বালু-পাথরে ভরে গেছে ফসলি জমি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:২৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

বালু-পাথরে ভরে গেছে ফসলি জমি

পাহাড়ী ঢলে ফসলি জমিতে বালু পাথরের স্তূপ

তাহিরপুর সীমান্তে পাহাড়ী ঢলের আগ্রাসন  বেড়েই চলছে। ঢলের  তোড়ে বিলীন হয়েছে সড়ক ও গ্রামীণ জনপদ। পাহাড়ী বালি-পাথরের নিচে চাপা পড়ছে ফসলি জমি। বিনষ্ট হচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। বালুতে ভরাট হয়েছে হাওড় ও খাল-বিল।
এবারের বন্যায় পাহাড়ী ঢল ও ভারি বর্ষণ  বেশিদিন থাকায় ক্ষতির পরিমাণও  বেড়েছে।  মেঘালয়ের ঢলে  নেমে আসা বালু-পাথরে বসতঘর চাপা পড়ে কয়েকটি আদিবাসী পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র  আশ্রয় নিয়েছে। তাহিরপুর সীমান্তে বসবাসকারী  লোকজন জানায়,  মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানের ফলে বর্ষা  মৌসুমে ঢলের আগ্রাসনের শিকার তারা।  মেঘালয়ে ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরে কয়লাখনি খননের পর  থেকেই মূলত পাহাড় ধসের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। প্রতিবছরই বর্ষায় বালু-পাথর  নেমে আসছে।
জানা যায়, ২০০৮ সালে ভারতের ওয়েস্টহিল খাসিয়া পাহাড় (কালাপাহাড়) ভেঙে তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী চানপুর-রজনীলাইন-পাহাড়তলী, কড়ইগড়া, লালঘাট, ভূরুঙ্গাছড়ায় ৪০০ একর কৃষিজমি ভরাট হয়। ২০০ পরিবার কৃষিজমি-ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়।
 ২০১৪ সালের আবারও পাহাড়ী ঢলে ওই এলাকায় ২০০ একর ফসলি জমি বালুতে ভরাট হয়ে যায়। এ সময় কড়ইগড়াছড়ায় স্লুইস  গেটের তীরের বাঁধ  ভেঙ্গে ১০টি আদিবাসী পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত জুন ও জুলাই মাসের তিন দফা বন্যায় আবারও ওই এলাকায় বালু-পাথর নেমে এসে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, পুকুর ও ঘরবাড়ি চাপা পড়ে। পচাশোল হাওড়ের বেশ কিছু জমিও বালুতে ভরাট হয়ে যায়।

বড়গুপ-টেকেরঘাট সড়কের তিনটি সেতুর নিচে বালু-পাথরের স্তূপ  তৈরি হয়েছে। চানপুর সড়কের  ২০ কিলোমিটার এলাকা পাহাড়ী ঢলের তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে। বড়গুপটিলার নিচে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক ও ফসলি জমি বালুতে চাপা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এবারের ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বালু-পাথরে রাজাই গ্রামের খাসিয়ারাজা উইক্লিব সিমের ছেলে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কোষাধ্যক্ষ এন্ডরুস সলোমারের ২০ একর জমি বালু ও পাথরে চাপা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বড়গুপটিলার নিচে তাহিরপুর ট্রাইবাল ফোরামের সাবেক সভাপতি পরিতোষ চাম্বুগংয়ের এক একর ফসলি জমি বালুতে ভরাট হয়ে গেছে।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আদিবাসী নেতা শঙ্কর মারাক বলেন, প্রতিবছরই মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বালু-পাথরে আমাদের এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। এবার কড়ইগড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের ফসলি জমি বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। সীমান্তে বসবাসকারী কয়েকটি আদিবাসী পরিবার এ কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কোষাধ্যক্ষ ও আদিবাসী নেতা এন্ডরুস সলোমার বলেন, ভারতের মেঘালয়ে অপরিকল্পিত কয়লা ও ইউরেনিয়াম খনি খননের পর থেকেই মূলত পাহাড় ভেঙ্গে আমাদের ভাটির জনপদ তাহিরপুর সীমান্তে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমার ২০ একর জমি নষ্ট হয়ে গেছে বালুতে। এভাবে প্রতিবছরই ক্ষতি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন কৃষক। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এ বিষয়ে জরুরীভিত্তিতে সংলাপ করে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, তাহিরপুর সীমান্তের কৃষিজমি বালু-পাথরে চাপা পড়ার খবর আমরা পাচ্ছি। এতে আমাদের প্রচুর কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। কী পরিমাণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে লিখেছি।

×