ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমণকারী রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলদারদের কবলে 

নিজস্ব সংবাদদাতা,হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:১১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২; আপডেট: ২০:৫৭, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমণকারী রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলদারদের কবলে 

রামনাথের বাড়ির মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ

বাইসাইকেল দিয়ে কয়েকবার বিশ্বভ্রমণ করা ভূ-পর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে একটি প্রভাবশালী পরিবার। এমনকি দখল করা বাড়ির পুরনো সব ভবন ভেঙে ফেলেছে দখলদাররা। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা অনেক চেষ্টা করেও সেই বাড়িটি দখলমুক্ত করতে পারেনি। বাড়িটি দেখতে গিয়ে কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক ও পর্যটকরা।

১৮৯৪ সালের ১৩ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন রামনাথ বিশ্বাস। তার পিতার নাম বিরজানাথ বিশ্বাস ও মাতার নাম গুণময়ী দেবী। রামনাথ বানিয়াচংয়ের হরিশ্চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। সাইকেল নিয়ে তিনি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরেছেন ৩ বার। সে সব অভিজ্ঞতা থেকে বাংলা ভাষায় লিখেছেন ৪০টি ভ্রমণবিষয়ক বই। ১৯৫৫ সালের ১ নবেম্বর কলকাতায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন রামনাথ বিশ্বাস।

বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ায় রামনাথের বসতভিটা ছিল। ৪ একর ৪৮ শতাংশ বাড়িতে বসতঘরের পাশাপাশি ছিল একটি দৃষ্টিনন্দন মন্দির ও পুকুর। বর্তমানে বাড়িতে থাকা পুরনো সব ভবন ভেঙে ফেলেছে দখলদাররা। শুধুমাত্র মন্দিরের একটি অংশ এখনও রয়েছে। সেটিও একটু একটু করে ভাঙা হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। বাড়িটিকে ঘিরে রেখেছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা আর সবুজ লতাপাতা। পুকুরে দখলদাররা চাষ করছেন মাছ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রামনাথ চিরকুমার থাকায় তার কোন সন্তান ছিল না। ভারতে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল বাড়িটি। এক পর্যায়ে বিশাল এই বাড়িটিতে নজর পরে ওয়াহাব উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। এক পর্যায়ে তিনি বাড়িটি দখলে নেন। এর কয়েক বছর পর আব্দুল ওয়াহেদ ও তার ভাই আবু ছালেক কিছু টাকা দিয়ে ওয়াহাব উল্লাহর কাছ থেকে দখল বুঝে নেন। কোন ধরণের কাগজপত্র ছাড়াই বাড়ির দখল তারা কেনা-বেচা করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আল বদর ও যুদ্ধাপরাধির বিচার শুরু করলে আবু ছালেক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। 

তবে, আব্দুল ওয়াহেদ এখানে থাকার সুবাধে ওই বাড়িটি নিজের নামে ভূয়া নামজারি করে নেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও রামনাথ স্মৃতি সংসদের নেতার্মীরা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনলে সেই নামজারি বাতিল করা হয়।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আব্দুল ওয়াহেদ একজন এলাকার প্রভাবশালী লোক। রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটি তার অবৈধ দখলে রয়েছে। আর এক্ষেত্রে তিনি আওয়ামীলীগের পদ পদবী ব্যবহার করছেন। বর্তমানে তিনি ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন।
দুই নম্বর বানিয়াচং উত্তর পশ্চিম  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া বলেন, ওয়াহেদ একজন দখলদার। রামনাথ বিশ্বাসেরই বাড়িটি তিনি দখল করে রেখেছেন।

অনেক সময় চেষ্টা করেও আমরা বাড়িটিকে দখলমুক্ত করতে পারিনি। তিনি কিছুদিন পরপরই বাড়িকে নিজের নামে নামজারি করে ফেলেন। কিন্তু আমরা সেটাকে বাতিল করি। স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের গেরিলা দলের অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান বলেন, আব্দুল ওয়াহেদের বড়ভাই আবু ছালেক এই এলাকার চিহ্নিত আলবদর। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।

রামনাথ স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও লোক গবেষক আবু সালেহ আহমেদ বলেন, দখলদার আব্দুল ওয়াহেদ খুবই প্রভাবশালী। যে কারণে এলাকার কেউ এই বাড়িটি উদ্ধারের জন্য কোন কথা বলে না। আমি রামনাথের স্মৃতিটুকু বাচাঁনোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সাংস্কৃতিক কর্মীর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েকবার তার ভূঁয়া নামজারি বাতিল করেছি। 

সর্বশেষ ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়েও একবার এটার নামজারি বাতিল করেছি। তিনি বলেন, বছরখানেক আগে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হাইকোর্টে রিট করব। কিন্তু স্থানীয়রা যারা আমাদের সাথে ছিলেন তাদেরকে আব্দুল ওয়াহেদ ভয়-ভীতি দেখিয়ে থামিয়ে দেন। যে কারণে আর হাইকোর্টে যাওয়া হয়নি।

বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার জানান, আমি রামনাথ স্মৃতি সংসদের একজন সদস্য। আমরা দীর্ঘদিন যাবত দাবী জানিয়ে আসছি রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটি দখলমুক্ত করা হউক। 

তিনি বলেন, দখলকারী ওয়াহেদের ভাই একজন রাজাকার। ওয়াহেদ সু-কৌশলে বহু বছর আগেই আওয়ামীলীগে যোগদান করে। তৎকালীন সময়ে বানিয়াচং সদরে আওয়ামীলীগের লোকজন না থাকায় তেমন বাধা বিপত্তিতে পড়তে হয়নি তাকে। আমির হোসেন মাস্টার বলেন, আমি ইউনিয়নের সভাপতি সম্পাদককে বলেছি তাকে দ্রুত বহিস্কার করতে। তাদের দেয়া বরখাস্তের চিঠি পেলেই তা জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। 

জানা গেছে, বাড়িটি দখলের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে অনেকবার হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। ৬ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের স্থানীয় চারজন সাংবাদিক ওই বাড়িতে গিয়ে হামলার শিকার হন। এর চারদিন পর ১১ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজের স্পেশাল এ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজিব নূর ওই বাড়িতে গিয়ে দখলদারদের হামলার শিকার হয়েছেন। 

এ সময় স্থানীয় আরও তিনজন সাংবাদিককেও মারপিট করে দখলদার আব্দুল ওয়াহেদ ও তার ছেলেরা।

 
 
 

এমএস

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার