ঐতিহ্যবাহী ঝাঁপানো খেলার একটি দৃশ্য
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম-বাংলার ঐহিত্যবাহী ঝাঁপানো খেলা। মনসা পূজা উপলক্ষে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শহরের আদিবাসী পাড়ায় আয়োজন করা হয় এ প্রতিযোগিতার। শেষ হয় শুক্রবার। খেলাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ, যা দেখতে সেখানে ভিড় করে শত শত মানুষ। দিনভর প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ঝিনাইদহ, হরিণাকু-ু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭টি সাপুড়ের দল। সবাইকে পেছনে ফেলে প্রথম হয় শৈলকুপার দল।
বাদ্যের তালে তালে হাঁড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর গোখরা সাপ। উপস্থিত শত শত দর্শকের করতালি একটুও বিচলিত করতে পারে না ফণা তোলা বিষধর সাপটিকে। মনিবের ইশারা-ইঙ্গিত তাকে ঠিক বুঝিয়ে দিয়েছে শুধু মানুষকে আনন্দ দেয়ার খেলা নয়, বরং আজ মর্যাদার লড়াই।
আর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে সাপুড়ে প্রদর্শন করে আকর্ষণীয় কসরত। ঢাক আর ঢোলের বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে দর্শকদের মন ভরিয়ে তোলেন। আর এ দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী।
মনসা পূজা উপলক্ষে হরিণাকু-ু উপজেলা শহরের চিতলীপাড়ায় আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী এই ঝাঁপানো খেলার। দীর্ঘদিন পর এ ধরনের আয়োজন দেখতে পেয়ে খুশি দর্শকরা। তাই প্রতিবছর এ খেলার আয়োজন করার দাবি দর্শকদের। আদিবাসী পাড়ার কুলু ম-ল জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঝাঁপানো খেলা হয়েছে। মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে খেলা করেন সাপুড়েরা। ঐতিহ্যবাহী এ খেলা ধরে রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
হরিশপুর গ্রামের সাপুড়ে শফিউদ্দীন জানান, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে আনন্দ দিতে গ্রাম-বাংলার ঐহিত্যবাহী ঝাঁপানো খেলা করে থাকি। আমরা সাপুড়েরা সাপ খেলা দেখিয়ে পরিবার নিয়ে দু’মুঠো ডাউল-ভাত খেয়ে থাকি।
হরিণাকু-েুর পৌরসভা মেয়র ফারুক হোসেন জানান, এ ধরনের উৎসব শুধু খেলার মধ্যেই সীমাবন্ধ নয়, এটি একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত। নতুন প্রজন্মের মাঝে বাঙালী ঐতিহ্য তুলে ধরতেই এ আয়োজন।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন জানান, গ্রাম-বাংলার ঐহিত্যবাহী ঝাঁপানো খেলার সাধুবাদ জানিয়ে আগামীতে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন তিনি। ঝাঁপানো খেলায় অংশগ্রহণকারী ৭টি দলের মধ্যে প্রথম হয় শৈলকুপার দল। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আয়োজকরা। পুরস্কৃত হয়ে খুবই খুশি তারা।