
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা শহরে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ পথ নগরীর ময়লাপোতা মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। গত বছরের মাঝামঝি খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের (খুলনা শহরাংশের ৪ কিলোমিটার) চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। সড়কের মাঝে পড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক পোলগুলো সরিয়ে নিচ্ছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে চার লেনের পার্শ্ববর্তী রাস্তার পাশে নতুন বৈদ্যুতিক পোল বসিয়ে ফিটিংসের কাজ করা হচ্ছে। রাস্তাটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ সম্পন্ন হলে দৃশ্যপট বদলে যাবে। যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলও নিরাপদ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশের ৪ কিলোমিটার প্রকল্পের চুক্তি মূল্য ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আতাউর রহমান খান লিঃ এ্যান্ড মাহাবুব ব্রাদার্স (প্রাঃ) লিঃ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়ক বিভাগ খুলনা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুই বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের কাজ গত অর্থবছরে শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় খুলনা শহরের কেডিএ এভিনিউর ময়লাপোতা মোড় থেকে গল্লামারী ব্রিজের অপর পান্তে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ক পুনর্নির্মাণসহ চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এ ছাড়া ৫টি বক্স কালভার্ট তৈরি। তিন দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক ডিভাইডার এবং রাস্তার দুই পাশে চার কিলোমিটার করে মোট আট কিলোমিটার কনক্রিট ড্রেন নির্মাণ। রাস্তার প্রশস্ত হচ্ছে ২২ দশমিক ১ মিটার (৭৫ ফুট)। সড়কের মূল অংশটির কার্পেটিং হবে ১৮ দশমিক ৫ মিটার। দুই পাশে ড্রেনের ওপর স্লাব বসিয়ে সেটি ফুটপাথ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এখন রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ রাস্তার মাজখানে পড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক পোলগুলোও সরিয়ে নেয়ার কাজ করে যাচ্ছে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, নগরীর ময়লাপোতা মোড় থেকে শুরু হয়ে নিরালা, গল্লামারী ও খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের সামনে থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। রাস্তার পাশে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা থাকায় শুরুতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। পরে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে অপসারণ করা হয়। বর্তমানে রাস্তাটি বড় করার ফলে বৈদ্যুতিক পোলগুলো রাস্তার মাঝখানে পড়ে যায়। সেগুলো সরাতে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দেয়া চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে এক কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আরডিপিপিতে অনুমোদন হওয়ার পর দেয়া হবে। তবে ইতোমধ্যেই ওজোপাডিকো ঠিকাদার নিয়োগের মধ্যদিয়ে তাদের কাজ করেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের কাজ শেষ হলেই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজও যথাসময়ে শেষ হবে। আগামী বছর (২০২২ সাল) জুন মাসের মধ্যে সড়কের কাজটি শেষ হওয়ার কথা রযেছে। তিনি বলেন, করোনার প্রভাব, বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে কাজের গতি শ্লথ হয়েছে। এ জন্য সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে।
ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, ওজোপাডিকো অন্যান্য প্রকল্প থেকে আগের কেনা মালামাল দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পোল বসানোর কাজ সমাপ্তির পথে। কিছু পোল বসানোর কাজ বাকি রয়েছে। সড়ক বিভাগ জায়গা নির্ধারণ করে দিলে সেগুলোও দ্রুত বসানো হবে। তিনি বলেন, নতুন বসানো পোলগুলোতে এখন ফিটিংস কাজ চলছে। এরপর তার টেনে ও ট্রান্সফরমারগুলো সরিয়ে নতুন লাইনে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে পুরান পোলগুলো তুলে ফেলা হবে।
উল্লেখ, এই সড়ক দিয়ে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, মোংলা, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটাসহ বিভিন্ন রুটের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন খুলনা শহরে প্রবেশ করে এবং কাজ শেষে ফিরে যায়। অনেকের বাড়ি বা বাসা শহরে হওয়ায় তারা থেকে যান। গল্লামারী ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা গড়ে উঠায় শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর ওই সম্প্রসারিত অঞ্চলে বসবাসকারীদেরও প্রতিনিয়ত এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এসব জনসাধারণের শহরে যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য রিক্সা, ইজিবাইক, প্রাইভেকারসহ অন্যান্য যানবাহনের ব্যবহার করা হয়। রাস্তাটি চার লেনে উন্নীত হলে এলাকার দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে যাবে। যানবাহন ও জনগণের যাতায়াত নিরাপদ হবে।