স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ উজানের ভারী বৃষ্টি ও গজলডোবা হতে প্রচুর পানি ছেড়ে দেয়ার জেরে তিস্তা নদী বন্যায় উত্তরের নীলফামারী জেলার তিস্তা অববাহিকার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার অসংখ্য বসতবাড়ি ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২.৬০) ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টায় ওই পয়েন্টে তিস্তা বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবহিত হয়। আজ শনিবার বিপদসীমার পানি প্রবাহ ১১ সেন্টিমিটার কমলেও দুপুর ১২টায় সেটি পুনরায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে বলে পানি উন্নয়ন বোডের ডালিয়াস্থ্য বন্যাপূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র জানায়। সুত্রমতে আজ সকাল ১১টায় ভারতের দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার (৮৫.৯৫) ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। ভারতের এই পয়েন্টে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮ ও ৯টায় বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হয়ে এসেছিল। তাতেই বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার সর্বচ্চো ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে উঠেছিল। আজ শনিবার ভারতের দো-মহনী পয়েন্টে পানির প্রবাহ গতকালের চেয়ে বেশী বলে নিশ্চিত করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বেশী খারাপ হলে লাল সংকেত দেয়া হবে। আপাতত হলুদ সংকেত জারী করা হয়েছে। তিনি বলেন তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ ( ফ্লাডবাইপাস) এলাকাটি কর্মকর্তারা নজরদারী করছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ এলাকার উজান ও ভাটি এলাকায় বসবাসকৃত পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে উজানের ঢলে তিস্তায় চতুর্থ দফায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা অববাহিকায় নতুন করে ৫ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চরবেষ্টিত গ্রামের মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন, পূবছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী ও ঝুনাগাছচাঁপানীর ইউপি চেয়ারম্যান গন জানায় তিস্তায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর, চরখড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিমখড়িবাড়ি, তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, বাক্সপোটরা নিয়ে নিরাপদে সরে গেছে।
অপরদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার ২ হাজার পরিবার বন্যাকালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই উপজেলার অসংখ্য ফসলী জমির আমন বীজতলা, রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। বসতঘরগুলোতে প্রকারভেদে হাটু ও কোমড় সমান পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাছের খামারগুলোর পুকুরগুলো উপচে পড়ায় প্রচুর মাছ ভেসে গেছে।
ডিমলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, আমরা প্রতিটি এলাকার মনিটরিং করছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তিস্তা অববাহিকার চর ও চর গ্রামের পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। উজানের ঢল কমে গেলে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে তিস্তা নদীর বন্যা আরও ভয়াবগতার রূপ নিতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোড সর্তকতা দিয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: