ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুস্থ-অসহায় নারীদের ‘উইমেন পিস ক্যাফে’র একগুচ্ছ ভালোবাসা

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ৮ এপ্রিল ২০২০

দুস্থ-অসহায় নারীদের ‘উইমেন পিস ক্যাফে’র একগুচ্ছ ভালোবাসা

জাককানইবি প্রতিনিধি ॥ বিশ্বব্যাপী ছড়ানো মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং কয়েকটি জেলা-উপজেলা লকডাউন করা হয়েছে। কাজ না থাকায় শ্রমজীবী এবং অসহায়-দুস্থ, বিধবা নারীদের অনেকেই অনাহারে দিনযাপন করছেন। সমাজের এসব অসহায়, দুস্থ ও শ্রমহীন হয়ে পরা নারীদের পাশে দাঁড়াতে এক ভিন্নধর্মী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ক্ষমতায়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা একটি প্ল্যাটফর্ম ‘উইমেন পিস ক্যাফে’র সদস্যরা। চারদিকে ত্রানসামগ্রী বিতরণ নিয়ে নানা নেতিবাচক সংবাদের মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী চিন্তাধারায় দেশের তিনটি জেলায় অসহায়-দুস্থ নারীদের ‘এ টোকেন অব লাভ’ শীর্ষক উপহারসামগ্রী প্রদান করেন তাঁরা। গত ৭এপ্রিল (মঙ্গলবার) বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলায় দুস্থ ও অসহায় নারীদের মাঝে এই উপহার প্রদান করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন পিস ক্যাফে। শতাধিক পরিবারের মাঝে উপহার হিসেবে দেয়া হয়- ৪ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, আধা কেজি ডাল, আধা লিটার তেল, ১টি জীবাণুনাশক সাবান ও ১টি মাস্কসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপন্য সমূহ। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের এই মহামারিতে সুন্দর এই উদ্যোগটি মহাসিন্ধুর মাঝে বিন্দু হলেও এরকম অসংখ্য বিন্দু একত্রিত হয়েই গড়ে তুলবে সহমর্মিতার সমুদ্র এমনটিই মনে করেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এবিষয়ে পিস ক্যাফে, জাককানইবি’র চিফ মেনটর লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালন বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অলি উল্লাহ বলেন, “দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় দরিদ্র, দিনমজুর, এবং স্বামী পরিত্যক্ত মহিলারা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের কারনে অনেক নারী সদস্যই আপদকালীন সময়ে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে। সেইসব মানুষদের জন্য উইমেন পিস ক্যাফের মেন্টর ও সদস্যদের নিজ অর্থায়নে ভালোবাসার কিছু নিদর্শন এটি। পিস ক্যাফে সবসময় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং তাদের উন্নয়নে কাজ করে আসছে”। জাককানইবি পিস ক্যাফের সভাপতি মাহমুদা স্বর্ণা বলেন, “নারী শুধু একটি সত্ত্বাকে বুঝায় না কারণ এই নারীর সাথে জড়িয়ে আছে একটি পরিবার। এই নারীই কারো মা, কারো স্ত্রী, কারো বোন। এই নারীই একটি পরিবারের রূপরেখা। কিন্তু যখন এই নারীই তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয় তখন গোটা পরিবারে তার প্রভাব পরে। এই কার্যক্রমে করোনা ভাইরাস এর বিষয়ে সরকারী নির্দেশনা মেনে ও উপহার গ্রহীতাদের সুরক্ষা এবং জৈব নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রত্যেকের বাড়িতে এসব উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কোথাও জনসমাগম না করে এসব অসহায় স্বল্প আয়ের নারীদের বাড়িতে গিয়ে ক্যাফের সদস্য দ্বারা এই উপহার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে”। উইমেন পিস ক্যাফে, বেরোবি’র চিফ মেন্টর ড. সোহেলা মুসতারী বলেন, “সারা বিশ্ব আজ চরম দুঃসময় পার করছে। বাংলাদেশে সামনেও আজ কঠিন সময়। এ অবস্থায় সমাজের প্রত্যেক সচেতন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানই তাদের সামর্থ অনুযায়ী দুস্থ ব্যক্তিটির পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে উইমেন পিস ক্যাফেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের সমাজে কিছু মানুষ বিশেষ করে নারী (যেমন বিধবা, বয়স্ক কিংবা নারী প্রধান পরিবার) থাকেন যারা লোকলজ্জায় কিংবা নেটওয়ার্কিং এর অভাবে জানতেও পারেনা কোথায় গেলে সামান্য সাহায্যটুকু পাওয়া যাবে। উইমেন পিস ক্যাফে এই মানুষ গুলোকে খুঁজে পাবার চেষ্টা করেছে এবং তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপহার পৌঁছে দিয়েছে”। এ বিষয়ে উইমেন পিস ক্যাফে, বেরোবি’র সভাপতি উম্মে কুলছুম বলেন, “আমাদের স্বল্প পরিসরে যতটুকু সহায়তা করা যায় আমরা চেষ্টা করছি নারীদের সাহায্য করতে। উইমেন পিস ক্যাফে- বেরোবি সব সময় চেষ্টা করে নারীদের জীবনমান উন্নত করতে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের ক্ষুদ্র এ আয়োজন”। উল্লেখ্য, উইমেন পিস ক্যাফে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারী ক্ষমতায়ন, নারীদের উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োগ-বাস্তবায়ন এবং নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে একটি সৃষ্টিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এবং ইউএন উইমেনের এমপাওয়ার্ড উইম্যান পিসফুল কমিউনিটিজ প্রকল্পের আওতায় সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় দেশে প্রথমবারের মতো দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি ও বেরোবি) প্রতিষ্ঠিত হয় এই পিস ক্যাফে।
×