ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও দিয়াবাড়ি থেকে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত তুরাগে অবৈধ স্থাপনা টিকে আছে

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১১ জানুয়ারি ২০২০

  এখনও দিয়াবাড়ি থেকে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত তুরাগে অবৈধ  স্থাপনা টিকে আছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনার পর দফায় দফায় অভিযান চালানো হলেও এখনও তুরাগ নদের দুই পাড় থেকে পুরোপুরি অবৈধ স্থাপনা সরেনি। বিশেষ করে মিরপুরের দিয়াবাড়ি থেকে মোহাম্মদপুরের তুরাগ নদের ঢাকা উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় এখনও অনেক অবৈধ স্থাপনা টিকে আছে। উপরন্তু মিরপুরের দিয়াবাড়ি ও মোহাম্মদপুরের তুরাগ নদের জায়গায় গড়ে ওঠা বিতর্কিত বাগানবাড়ি, পশ্চিম পাশের বড় বরদেশী মৌজার হাউজিং ব্যবসার নামে সরকারী খাল, শত্রু সম্পত্তি, অবৈধ কাগজপত্র বানিয়ে সরকারী জায়গা এমনকি সরকারী জায়গা সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকাধীন জমিও দখল করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কতিপয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সরেজমিনে তুরাগ নদ সংলগ্ন মিরপুরের দিয়াবাড়ি, গাবতলী, আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রাম হয়ে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। মিরপুর দিয়াবাড়ি ঘাটের কাছে এখনও দাঁড়িয়ে আছে ছয়তলা বিশাল এক বাড়ি। তার আশপাশে অসংখ্য ছোট ছোট স্থাপনা টিকে আছে। যদিও দিয়াবাড়ি থেকে গাবতলী পর্যন্ত নদীর সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। সীমানা পিলারের ভেতরে টিকে থাকা স্থাপনা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরের তুরাগ নদের জায়গায় গড়ে উঠা বিতর্কিত বাগানবাড়ি, পশ্চিম পাশের বড় বরদেশী মৌজার হাউজিং ব্যবসার নামে সরকারী খাল, শত্রু সম্পত্তি, অবৈধ কাগজপত্র বানিয়ে সরকারী জায়গা দখল করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী মনিরুজ্জামান মনির ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। ইতোমধ্যেই নদীর পাড়ের হাজার হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যার মধ্যে তিন হাজারের বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেয়া স্থাপনার মধ্যে মনিরুজ্জামান মনির নামের এক ব্যক্তির বিতর্কিত তিন তলা আলিশান একটি বাগানবাড়িও আছে। বাগানবাড়ির দখল করা জায়গা নদের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছে। এছাড়া তুরাগ নদের যে জায়গা দখলে ছিল তাও উদ্ধার করা হয়েছে। নতুন করে সেইসব জায়গায় আস্তে আস্তে আবারও স্থাপনা গড়ে তোলার চেষ্টা করার যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়টি তারা নজরে রেখেছেন। সরেজমিনে সেইসব জায়গার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। নতুন করে নদের জায়গা দখলে করার আর কোন সুযোগ নেই। মোটাদাগে যারা বড় বড় দখলকারী ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরও বলেন, নদের কাছে দিয়াবাড়ি ঘাটে একটি বিশাল ছয়তলা বাড়ি আছে। সেটিও আমরা ভাঙতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি থাকায় বাড়িটি আর ভাঙ্গা যায়নি। তিনি আরও জানান, নদের জায়গায় গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে মানবসৃষ্ট বড় বড় স্থাপনার বিষয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা আছে। যার মধ্যে মানবসৃষ্ট সেসব স্থাপনা যা নদের স্রোতে বা কোন কিছুতেই নদের গতিপথকে আর স্বাভাবিক করতে পারবে না, সেইসব ক্ষেত্রে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। দিয়াবাড়িতে যে স্থাপনা টিকে আছে, তার কারণে নদের গতিপথ একেবারেই বদলে গেছে। ওই স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়ে নদের গতিপথ স্বাভাবিক হবে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে নদের স্রোতের যে গতি আর কোনদিনই স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভবনা নেই। নদ-নদীর ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নিদের্শনা পুরোপুরি মানা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দূষণ বন্ধ ও নাব্য ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেন। এ কাজে বরাদ্দ দেয়া হয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এরপর গত বছরের ৯ এপ্রিল থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ।
×