ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

৪ জেলার মানুষের একমাত্র সংযোগ বাঁশের সাঁকো

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ২১ আগস্ট ২০১৯

৪ জেলার মানুষের একমাত্র সংযোগ বাঁশের সাঁকো

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী পাশাপাশি ৪ টি জেলা। এই ৪টি জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষের সংযোগ হয়েছে একটি মাত্র বাঁশের সাঁকো। বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলার ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদীর ওপর নির্মিত একটি বাঁশের সাঁকো দিয়েই এই ৪ জেলার মানুষ পারাপার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে ধর্ণা দিয়েও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় কয়েক লাখ মানুষকে চরম দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আর এই দূর্ভোগের শিকার না যেতে হলে মানুষজনকে ঘুরতে হচ্ছে প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার রাস্তা। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়াপাড়া গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। বর্তমান সময়ে উত্তরাঞ্চলের অনেক নদীই মরা হিসেবে প্রতিয়মান হলেও খরস্রোতা রুপ ধারন করে চলেছে এই আত্রাই নদী। খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীর বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে গেছে। তবে যে স্থান দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তার উপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো। যে সাঁকো দিয়ে চলাচল করে জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার একাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার একাংশ ও নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার একাংশের মানুষ। কারণ এই সাঁকো ব্যবহার না করলে ওইসব মানুষকে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌছতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হবে। অবশ্য ভরা বর্ষায় এইসব মানুষকে নৌকায় পারাপার হতে হয়, আর রাতের আধারে কিংবা যানবাহন পারাপারে সমস্যা হলে বাধ্য হয়েই ওই দীর্ঘ পথ পারি দিতে হয়। বাঁশের সাঁকো হলেও টাকা দিয়েই পারাপার হতে হয় যাত্রীদের। কারণ ওই টাকা দিয়েই আবার মেরামত হয় সাঁকোটি। ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ ঘাটের ইজারাদার নুর আলম হোসেন, সাঁকোটি নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা ও অর্থদাতা তিনি। তিনি জানান, এই সাকো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হার কৃষক, কর্মজীবী নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী ও সাধারন যাত্রী পারাপার হয়। ঝুকি নিয়েই সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, অটোবাইকের মত যানবাহন চলাচল করে এই সাঁকো দিয়ে। আর ভরা বর্ষাতে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে মানুষজনকে পারাপার হতে হয় নৌকায়। রাতের আধারে কিংবা ডিঙ্গী নৌকায় জায়গা না হলে তাদেরকে ঘুরতে হয় দীর্ঘ পথ। খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী গ্রামের বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখি আসিছু নদীটির ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো। এলাও ওইরকমই আছে। বিয়া হয়াও শ্বশুরবাড়ী গেনু, ছাওয়ালের মা হনু, আইজও ব্রীজ হলি না।’ ভবানীগঞ্জের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানস বলেন, ‘রবিবার ও বুধবার গড়েয়া হাট করি। তবে বর্ষার সময় রাতে ঘাটে নৌকা পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। একটি সেতু এই নদীতে হলে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক সুবিধা ভোগ করতে পাবে।’ ঝাড়বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের র্প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আত্রাই নদীটিতে সেতু না হওয়ায় বর্ষাকালে খেয়া নৌকায় আর শুস্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুকি নিয়ে শতশত শিক্ষার্থীকে চলাচল করতে হয়।’ ওই এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচী, মন্ত্রী-সাংসদ কিংবা জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দেয়া বা প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ খেয়াঘাট সেতু বাস্তবায়ন নামে একটি কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক শেখ জাকির হোসেন জানান, দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী চৌরাস্তা মোড় থেকে আত্রাই নদী পার হয়ে পূর্ব দক্ষিনে নীলফামারী ১৭ কিমি। আর আত্রাই নদীর পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও জেলা সদর ২২ কিমি। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষরা মনে করি এখানে একটি সেতু হলে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলা শহরের সাথে সারাসরি আসা-যাওয়া করতে পারবেন। এতে সহজ হয়ে উঠবে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে, কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে। অথচ একটি সেতু নির্মাণের অভাবে এলাকার লোকজন পিছিয়ে পড়ছে। কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণে। কমিটির আহ্বায়ক শেখ জাকির হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সেতু নির্মাণে জনপ্রতিনিধিরা আশার ফুলঝুড়ি দিলেও স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও নির্মিত হয়নি সেতুটি। মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। এর আগে কমিটির পক্ষ থেকে গত বছরের মে মাসে বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। ওই মাসেই সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালকে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়। কিন্তু এরপরেও কোন কাজ হয়নি। দিনাজপুর জেলা প্রশাসককেও এ ব্যাপারে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। অবশ্য এর আগে খানসামা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্থানটি পরিদর্শন করা হয়েছিল। খানসামা উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাপস কুমার বাগচী বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ওখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সদস্যরা স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। এখন কাগজপত্র চালাচালি হচ্ছে। শীঘ্রই এখানে সার্ভে হবে এবং অবস্থান নির্ণয়ের পর সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হবে। যেহেতু এখানে যে সেতুটি হবে সেটি অনেক বড়, কমপক্ষে ৫০০ মিটার। তাই প্রক্রিয়া হতেও একটু সময় লাগবে।’ তবে যাবতীয় সব ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
×