ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার গাভীতে টানছে রেবেকার সংসারের জোয়াল

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ১৬ আগস্ট ২০১৮

চার গাভীতে টানছে রেবেকার সংসারের জোয়াল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর ॥ চার গাভীতে টানছে রেবেকা খাতুনের সংসারের জোয়াল। এই চারটি গাভী প্রতিদিন প্রায় ৯০ লিটার দুধ দিচ্ছে। এই দুধ বিক্রির টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবন যাপন করছেন তিনি। প্রায় ১৪ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। এরপর থেকে এই গাভী পালনই তার একমাত্র অবলম্বন। এই দিয়েই ছেলেকে মাস্টার্স পাস করিয়েছেন, মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। চার শতক জমিও কিনেছেন। বাছুরের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে এভাবেই জীবন সংগ্রামের গল্প বলে গেলেন যশোর সদর উপজেলার মোবারককাটি গ্রামের বাসিন্দা রেবেকা খাতুন (৫০)। বৃহস্পতিবার রেবেকা নিজের খামারের বাছুর নিয়ে এসেছিলেন শংকর জাতের বাছুর প্রদর্শনীতে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থা এসিডিআই ভোকা’র ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ লাইভস্টক প্রোডাকশন ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন প্রকল্পর যৌথ উদ্যোগে যশোরের শংকরপুরে অনুষ্ঠিত হয় শংকর জাতের এই বাছুর প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে ২৪জন খামারী শংকর জাতের বাছুর প্রদর্শন করেন। প্রদর্শনীতে আসা আরেক খামারি যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল ওহাব বলেন, চার বছর আগে দুটো বকনা বাছুর ত্রিশ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার বাছুর বিক্রি করেছি। দুটো গাভী বর্তমানে ১০ কেজি দুধ দেয়। উন্নত জাতের গাভী পালন করে তিনি সংসারে সুখের মুখ দেখেছেন। আরেক খামারি যশোর সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, ফ্রিজিয়ান জাতের চারটি বাছুর পালন করছি। দুটোর দাম ১ লাখ টাকা উঠেছে। বাকী দুটো ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করিনি। পালন করছি। ৫ বছর আগে ৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি বকনা (মেয়ে) বাছুর কিনেছিলাম। সেই বাছুর গাভী হয়েছে। এ পর্যন্ত চারটি বাছুর দিয়েছে। গাভী প্রতিদিন ১৫ লিটার দুধ দিচ্ছে। ৫০ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করি। দুধ বিক্রির টাকায় সংসার চলছে। শুধু রেবেকা খাতুন, আবদুল ওহাব কিম্বা আতিয়ার রহমানই নন, তাদের মত অনেকে শংকর জাতের বাছুর পালন করে দুধ ও মাংস উৎপাদন করছেন। এতে যেমন তারা সাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বলে জানালেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তপনেশ্বর রায়। উন্নত জাতের গবাদি প্রাণি পালনে খামারীদের উৎসাহিত করতে যশোর শহরের শংকরপুরে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে শংকর জাতের বাছুর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-পরিচালক কল্যাণ কুমার ফৌজদার। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভবতোষ কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এসিডিআই ভোকা’র ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ লাইভস্টক প্রোডাকশন ফর ইম্প্রুভ্ড নিউট্রিশন প্রকল্প’র চিফ অফ পার্টি মুহাম্মদ নুরুল আমিন সিদ্দিকী। প্রদর্শনীতে যশোর সদরের ২৪ জন খামারী অংশ নেন। সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তপনেশ্বর রায়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন, খামারিদের উন্নত জাতের বাছুর পালনে উদ্বুদ্ধকরণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বাছুর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। মূলত খামারীদের সচেতন করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাণিজ আমিষের (দুধ ও মাংস) উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পাশাপাশি খামারিরা যেন পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আগ্রহী ও সক্ষম হয় সেই লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ বিভাগ করছে।
×