মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া ॥ কুয়াকাটায় আগত পর্যটক-দর্শনার্থীর জন্য সুখবর। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মতো বিরল দৃশ্য উপভোগ্য সৈকত কুয়াকাটায় এবার সরকারী উদ্যোগে নির্মাণ হচ্ছে ‘ট্যুরিজম পার্ক’। যেখান থেকে পর্যটকের প্রত্যাশিত প্রাপ্তির প্রতিফলন ঘটবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ পার্কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে দ্রুতালয়ে এগিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ। দীর্ঘদিনে প্রত্যাশার প্রাপ্তির সুখকর মুহূর্ত উপভোগের অপেক্ষায় রয়েছেন এখন পর্যটক-দর্শনার্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিশ্রুত কুয়াকাটার পর্যটকদের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ করে দেয়ায় এখন ক্ষণ গুনছেন দক্ষিণজনপদের সাগরপারের মানুষসহ পর্যটক-দর্শনার্থী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আড়াই একর জমি অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই কুয়াকাটার উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেছিলেন। এরপরের অধ্যায়, উন্নয়ন-ইতিহাস বিষাদময়। দীর্ঘ কুড়ি বছরেরও বেশি সময় পরে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের মে মাসে কুয়াকাটায় পর্যটন কর্পোরেশনের হলিডে হোমস উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন শুরু করেন। পরিকল্পনার সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেন আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে উন্নীতের। এরপরে আর পেছনে ফেরেনি কুয়াকাটার উন্নয়ন। ২০১০ সালে কুয়াকাটাকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। চূড়ান্ত হয়েছে পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্ল্যান। যার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এই ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে। বেড়িবাঁধের বাইরে ঐতিহ্যবাহী নারিকেল বাগানোর মধ্যে খালি জায়গায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট প্রস্থ এই পার্কটির নির্মাণ কাজ এখন চলছে দ্রুতালয়ে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে এক কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দে সাগরপারের মনোরম পরিবেশে এই পার্কটি দৃষ্টিনন্দন হবে। পার্কটিতে থাকছে অকল্পনীয় সুযোগ-সুবিধা। সাগরে গোসল করতে নামার আগে পর্যটকরা এ পার্কটিতে থাকা লকার ব্যবহার করতে পারবেন। যেখানে জুতা-স্যান্ডেল, মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ সবকিছু গচ্ছিত রাখতে পারবেন। নামে মাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময় এ লকার ব্যবহার করবেন পর্যটকরা। অন্তত দুই শ’ লকার থাকছে। থাকছে বাউন্ডারি ঘেরা দৃষ্টিনন্দন পার্কটি। আলাদা বিশ্রামাগার থাকছে। সেখানে সোফার ব্যবহার থাকছে। বসেই উত্তাল সমুদ্রে দৃষ্টি রাখতে পারবেন পর্যটক। সাগরে গোসল শেষে হাত-পা ধোয়ার জন্য পানির সরবরাহ লাইনসহ অসংখ্য ট্যাপ থাকছে। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদাভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পাল্টানোর মতো স্পেস নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কক্ষ থাকছে। আলাদা প্রস্রাবখানাসহ টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত ওয়াশরুম থাকছে। ৫০ সিটের কফি হাউস থাকছে। প্রায় ৪০ ফুট দীর্ঘ দুই সারিতে কফি হাউসের আড্ডায় বসতে পারবেন আগতরা। থাকছে কাফে কর্ণার। এমনকি ফি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ কনসার্টের ব্যবস্থা করা হবে এ পার্কটিতে। ইতোমধ্যে বাউন্ডারির কাজ শেষের দিকে। চারদিকে এ পার্কে বিশাল আকৃতির স্থায়ী ছাতা থাকছে। যার নিচে পর্যাপ্ত সংখ্যক চেয়ার থাকছে। পার্কটি সবসময় প্রশাসনিক নিরাপত্তার আওতায় রাখা হবে। পার্ক অভ্যন্তরে বিশেষ কারণে পর্যটকরা রাত্রি যাপনেরও সুযোগ থাকবে। এমনকি পার্ক সংলগ্ন সীবিচে বোল্ডার দিয়ে সাগরের ঢেউয়ে বেলাভূমি ক্ষয়রোধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর রহমান নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে এ পার্কটিকে ঘিরে কুয়াকাটায় আসা পর্যটক-দর্শনার্থীর বিনোদন কেন্দ্রীক একটি মাত্রা যোগ হচ্ছে। এছাড়া সাগরে গোসলের আগে কিংবা পরে যে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হতো তা লাঘব হচ্ছে। স্বাচ্ছন্দে সাগর উপভোগের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কুয়াকাটা হোটেল- মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোতালেব শরীফ জানান, জেলা প্রশাসন ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করায় পর্যটকের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হলো। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, ট্যুরিজম বোর্ড এবং পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসককে তিনি ধন্যবাদ জানান। এটি কুয়াকাটার উন্নয়নের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মাছুমুর রহমান জানান, পর্যটকের দীর্ঘদিনে দাবি ছিল এ পার্কটি নির্মাণ করার। যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে উন্নীতের ধারাবাহিক একটি কাজ এই ট্যুরিজম পার্ক। আগামী তিন মাসের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন এ পার্কটির নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। এটি চালু হলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে কুয়াকাটা উপভোগ করতে পারবে। এক কথায় প্রধানমন্ত্রীর মাস্টার প্ল্যান অনুসারে কুয়াকাটার উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মাহবুবুর রহমান এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়াকাটার পরিকল্পিত উন্নয়নে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন। যা ১৯৯৮ সাল থেকে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে পৌরসভা করেছেন। তিন নদীতে সেতু করেছেন। এভাবে ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ হলে পর্যটকের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে। আর তা বাস্তবায়নে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।