ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে যশোর শহর

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১০ মার্চ ২০১৮

বদলে যাচ্ছে যশোর শহর

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ বদলে যাচ্ছে যশোর শহর। যানজটের ধকল আর থাকবে না! নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন শহরবাসী। আর এসব সুবিধা দিতে মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় অধিকাংশ কাজ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন পৌর কর্মকর্তারা। যশোর শহরে দীর্ঘদিন ধরে যানজট লেগেই থাকছে। এ কারণে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। চলাচলে যারপর নাই দুর্ভোগ বাড়ছে। এ যানজট নিরসনে মাস্টারপ্ল্যান করেছে যশোর পৌরসভা। যেটি বাস্তবায়ন হলে অনেক সুবিধা ভোগ করবে শহরবাসী। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১শ’ ১০ কোটি টাকা। এ প্ল্যানের আওতায় মোট ৩৯ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের ১৪ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের ২৫ কিলোমিটারের। ড্রেন নির্মাণ এবং সংস্কার কাজ চলছে ৪৮ কিলোমিটার। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ২৫ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে ২৩ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার কর্মকর্তারা। এ কাজ সম্পন্ন হলে শহরবাসী বাইপাস সড়ক ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে শহরের প্রধান সড়কগুলোর ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমে যাবে। ফলে, শহর হবে যানজটমুক্ত। জনগণের চলাচল হবে স্বাভাবিক। অতিরিক্ত সময় অপচয় রোধ হবে। শিক্ষার্থীরা সময় মতো পৌঁছাতে পারবে তাদের ক্লাসে। এই মাস্টারপ্ল্যান সম্পন্ন করার টার্গেট নেয়া হয়েছে আগামী জুলাই মাস। যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ১৪ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। প্রতিটি সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। ১০ ফুটের সড়ক ২০ এবং ১৫ ফুটের সড়ক ৩০ ফুট করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সড়ক হচ্ছে, আশ্রম রোড, পিয়ারী মোহন রোড, বেজপাড়া রোড, ঘোপ সেন্ট্রাল রোড, শংকরপুর রোড, বোরহান শাহ রোড (কারবালা), শহীদ আবু তালেব রোড ও রেলরোড। ড্রেনের প্রস্থ দু’ফুট থেকে ছয় ফুট। উচ্চতা তিন থেকে সাত ফুট। থিকনেস ছয় থেকে আট ইঞ্চি করা হচ্ছে। জুনে শেষ হবে তৃতীয় নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়নের কাজ। এতে ব্যয় হবে ৫০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ৩৭টি সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। প্রশস্তকরণের আওতায় থাকা উল্লেখযোগ্য রাস্তাগুলো হচ্ছে, পূর্ব বারান্দী প্রধান সড়ক, পশ্চিম বারান্দী প্রধান সড়ক, খালধার রোড, এইচ এম এম রোড, নীল রতন ধার রোড, ঘোপ নওয়াপাড়া রোড, তাঁতীপাড়া রোড, ঘোষ পাড়া রোড, গাজীর ঘাট রোড, রওশন আলী রোড (নওদাগ্রাম),পুলিশ লাইন স্কুল রোড, টিবি ক্লিনিক রোড, মুক্তিযোদ্ধা সড়ক (নার্সারি পট্টি), মাওলানা শাহ আব্দুল করিম রোড, ইসহক রোড, মুন্সি মেহেরউল্লাহ রোড, এমএম আলী রোড, কেশবলাল রোড, গুরুদাস বাবু লেন, হরিনাথ দত্ত লেন, বকচর কবরস্তান রোড, শুরেন্দ্র নাথ দত্ত লেন, ও রায়পাড়া তুলোতলা রোড। পৌরসভা শহর পরিকল্পনাবিদ সুলতান সাজিয়ে বলেন, যানজট নিরসনে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। এ প্ল্যানের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ফুটপাথ দখলমুক্ত করা হয়েছে। মানুষ এখন ফুটপাথ ব্যবহার করতে পারছে। যার ফলে যানজট কিছুটা কমতে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ইজিবাইক লাইসেন্স নির্দিষ্ট সংখ্যায় বেঁধে দেয়া হয়েছে। যার ফলে ইজিবাইক অনেক কমে গেছে। পৌরসভার সহকারী রেজিস্ট্রার মঞ্জুর হোসেন বলেন, শহরে যানজট নিরসনের জন্যে ইজিবাইক রেজিস্ট্রেশন সহনীয় মাত্রায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইজিবাইকের সংখ্যা ২ হাজার ৫শ’ ৬৯টি। এর বাইরে অবৈধ ইজিবাইক রয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার। এটি বন্ধ করেতে পারলে খুব দ্রুত যানজটমুক্ত করা যাবে। শহরের বারান্দীপাড়ার রবি ডাক্তার, অনিক দাস, আমজাদ হোসেন, বেজপাড়ার জহিরুল ইসলাম লিটনসহ সচেতনরা বলেন, যশোরের জন্যে এটি অনেক বড় প্রকল্প। শহরবাসী অনেক দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাবে। বৃষ্টি হলেই শহরের অনেক স্থানে বন্যা হয়ে যেত। ড্রেন ও সড়কের কাজ শেষ হলে এ ধরনের সমস্যা আর থাকবে না। তা ছাড়া, শহরের অভ্যন্তরীণ রোড ভাল হওয়ায় শহরের মধ্যে দ্রুত চলাচল করা যাবে। যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু আরও বলেন, শহরের বিকল্প অনেক রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। যার মধ্যে বেশকিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করছি অবশিষ্ট কাজ জুনের আগেই শেষ হবে। জুলাই থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের যানজট একেবারে কমিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হব। তিনি বলেন, শহরের দড়াটানা, মণিহার, চিত্রা মোড় ও হাসপাতাল মোড়ে যানজট বেশি দেখা দেয়। এ কারণে সড়ক চওড়া সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে।
×