ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে নৈশ-প্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০২:৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

গোপালগঞ্জে নৈশ-প্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপালগঞ্জ ॥ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী-কাম-নৈশ প্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষক লাঞ্ছিত, দু’পক্ষের সংঘর্ষ, বাড়ীঘর ভাংচুর, মামলা ও পালটা-মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতে এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোও রয়েছেন নানা উৎকণ্ঠায়; না জানি কখন অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটে যায়। সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, কাশিয়ানী উপজেলার ৭২নং তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই পদটিতে ওই স্কুলেরই ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শের আলী শেখের ছেলে আসলাম শেখ প্রার্থী ছিল। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে এবং স্থানীয় সংসদ-সদস্য লে: কর্ণেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খানের সুপারিশে চাকরি হয় এলাকার হতদরিদ্র হিঙ্গুল সিকদারের ছেলে কাদের সিকদারের। তেতুলিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিনের স্ত্রী নাজমুন নাহার বলেন, সভাপতির ছেলের চাকরি না হওয়ায় এবং গ্রামের দলাদলীর কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৬ জানুয়ারী তাদের লোকজন আমার স্বামী নিকটবর্তী ১০০নং ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মেজবাহ উদ্দিনকে স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এতে এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরদিন ৭ জানুয়ারি সকালে বিবাদমান দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির ছেলে মিন্টু শেখের নেতৃত্বে লোকজন আমাদের এবং পার্শ্ববর্তী রাজিব সিকদার ও ফরিদ সিকদারের বাড়ীতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা রামদা দিয়ে কুপিয়ে আমাদের বাড়ীঘরের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। জানা যায়, হামলা ঠেকাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের ধাঁরালো অস্ত্রের আঘাতে বিপ্লব সিকদার (৩৫), ফরিদ সিকদার (৫০), কামাল সিকদার (৪২), খসরু সিকদার (৩৮) ও জামাল সিকদার (৪৮) আহত হন। আহতদের প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে এবং পরে ফরিদ সিকদারকে গোপালগঞ্জ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে গত ৮ জানুয়ারী ২৬ জনকে আসামী করে গুরুতর আহত ফরিদ সিকদারের ভাই রাজিব সিকদার বাদী হয়ে কাশিয়ানী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ ব্যাপারে স্কুল কমিটির সভাপতির ছেলে আসলাম শেখ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পূর্ব থেকেই গ্রামে দলাদলী রয়েছে। প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের দলের কোরবান সিকদারকে (৫০) কুপিয়ে আহত করেছে। তবে কোথায় তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে না পারলেও কাশিয়ানী থানা আমলী আদালতে তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মামলা করা হয়েছে বলে জানান। ওই গ্রামের রাজিব সিকদার (২৮) অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে মামলায় ফাঁসাতে হাসপাতালের ডাক্তারকে ম্যানেজ করে ব্লেড দিয়ে কোরবানের মাথায় কেটে প্রতিপক্ষ মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়েছে। ওই ঘটনায় কোরবান সিকদার আদৌ কোন হামলার শিকার হননি। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে কোরবানকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে। এছাড়া পাশ্ববর্তী ভুলবাড়িয়া গ্রামের পলু সিকদারের টং-দোকানঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মর্মে আরও একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামের নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে, সরেজমিনে দোকানঘরটি দেখে এবং এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে অগ্নিকান্ডের কোনও সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। তেতুলিয়া গ্রামের মোঃ লায়েক আলী সিকদার (৮২) অভিযোগের সুরে বলেন, আমি একজন অসুস্থ মানুষ। বয়সের কারণে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারি না। সম্প্রতি আমার মেরুদন্ডে অপারেশন করা হয়েছে। বেশিরভাগ সময় আমাকে শয্যাশায়ী থাকতে হয়। এ বয়সে আমাকেও আসামী করা হয়েছে। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে এখানে বড় ধরণের সংঘর্ষসহ অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটে যেতে পারে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ সিকদার, নারায়নগঞ্জে চাকরিরত এ গ্রামের পুলিশ-সদস্য নূর মোহাম্মদ সিকদার এবং শের আলী শেখ চাইলেই এলাকায় শান্তি ধরে রাখতে পারেন। এদিকে, কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া না গেলেও কাশিয়ানী থানার ওসি একেএম আলী নূর হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং জানান, তদন্ত কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত দোষীদেরই আইনের আইনের আওতায় আনা হবে।
×