ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরের চাল ব্যবসায়ীদের ‘ফুড গ্রেইন লাইসেন্স’ নিতে নিরুৎসাহ

প্রকাশিত: ০২:১২, ১১ অক্টোবর ২০১৭

রংপুরের চাল ব্যবসায়ীদের ‘ফুড গ্রেইন লাইসেন্স’ নিতে নিরুৎসাহ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেও ‘ফুড গ্রেইন লাইসেন্স’ নিতে উৎসাহ নেই রংপুরের চাল ব্যবসায়ীদের। এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা পায়নি অনেক ব্যবসায়ী। আবার যারা নির্দেশনা পেয়েছেন তারা সংশ্লিষ্ট খাদ্য অধিদপ্তরে হয়রানীর ভয়ে যোগাযোগ করছেন না। চালের বাজারে অস্থিরতা কমাতে গত মাসে দেশের চাল ব্যবসায়ীদের সাথে খাদ্যমন্ত্রীর বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাল মজুদের বিধিমালা মানতেই সরকার ৩০ শে অক্টোবরের মধ্যেই ‘ফুড গ্রেইন লাইসেন্স’ করা বাধ্যতামূলক করেছে। মজুদদাররা যাতে অবৈধভাবে মজুদ করে চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রংপুর খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিধি অনুযায়ী ‘ফুড গ্রেইন লাইসেন্স’ পেতে আগ্রহীদের আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে। এছাড়াও আবেদনকারীকে তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈধতা সংবলিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান কর্তৃক পরিচয়পত্র বা নাগরিকত্বের সনদ আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের ধরণ অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে। লাইসেন্সের নিয়মানুযায়ী, আমদানিকারকদেরকে জমা দিতে হবে ১০ হাজার টাকা, পাইকারী ও আড়তদারদের জমা দিতে হবে ৫ হাজার টাকা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের জমা দিতে হবে ১ হাজার টাকা। একইভাবে মেজর ও কমপেক্ট ময়দা ব্যবসায়ীদের ২ হাজার টাকা, রোলার ময়দাকল ব্যবসায়ীদের ১ হাজার টাকা, আটা চাট্টি ব্যবসায়ীদের ৬ শ’ টাকা, অটো রাইস মিল ব্যবসায়ীদের ৫ হাজার টাকা, হাস্কিং মিল ব্যবসায়ীদের ১ হাজার টাকা ও ওএমএস ডিলারদের ৬শ’ টাকা ১৫% ভ্যাট সহকারে লাইসেন্সের সাথে প্রদান করতে হবে। আরও সূত্র জানা যায়, বুধবার পর্যন্ত ‘ফুড গ্রেইন লাইসেন্স’ গ্রহণ করেছেন মাত্র ২ জন চাল ব্যবসায়ী। খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন ৩০ শে অক্টোবরের মধ্যে সকল চাল ব্যবসায়ি এই লাইসেন্স গ্রহণ করবে। রংপুর সিটি বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানায়, এ বিষয়ে তারা পত্র-পত্রিকায় সংবাদ দেখেছে। কিন্তু কোন দাপ্তরিক নির্দেশনা পাননি। মাহিগঞ্জের একাধিক চাল ব্যবসায়ী জানায় খাদ্য অধিদপ্তর থেকে তারা মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছেন। অপরদিকে, লাইসেন্স করতে গিয়ে হয়রানীর শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাহিগঞ্জের একজন চাল ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, লাইসেন্স করতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। আবার অতিরিক্ত টাকা দিয়েও লাইসেন্স করতে গিয়ে কালক্ষেপণের মত ঘটনাও ঘটছে। তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি লাইসেন্সের বিষয়ে সকল ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়গুলো অবগত করেন তাহলে আমরা হয়রানি থেকে মুক্তি পেতাম। এদিকে, লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর সিটি বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আলী বলেন, এ সম্পর্কিত কোন নোটিশ কিংবা চিঠি খাদ্য অফিস থেকে আমাদের কাছে আসেনি। লাইসেন্সের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে লাইসেন্স সম্পর্কিত কোন চিঠি বা নোটিশ এলে আমরা চাল ব্যবসায়ী সমিতির মিটিংয়ে তা উত্থাপন করে লাইসেন্সের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। একই মন্তব্য করেন সিটি বাজারের চাল ব্যবসায়ি গান্ধী পাল, সাইফুল ইসলাম, মাসুম মিয়াসহ অনেকে। হয়রানির অভিযোগ নাকচ করে রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহজাহান ভূইয়া বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। লাইসেন্স গ্রহণে কোন হয়রানি করা হচ্ছে না এবং বাড়তি কোন টাকাও দিতে হচ্ছে না। তবে কোথাও যদি কোন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে হয়রানের শিকার ঐ ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। সে যে-ই হোক না কেন, তাকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, রংপুর সিটি ব্যতীত বাইরের উপজেলাগুলোতে লাইসেন্সের বিষয়ে চাল ব্যবসায়ীদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জেলা ও উপজেলার সকল চাল ব্যবসায়ী লাইসেন্সের আওতাভুক্ত হবেন। তবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন ব্যবসায়ী লাইসেন্সের আওতাভূক্ত না হলে ১৯৫৬ সালের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে নবেম্বর মাস থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×