ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটের শহর নওগাঁ অপ্রশস্থ রাস্তা আর অপরিকল্পিত স্ট্যান্ডে পথচারীর দুর্ভোগের অন্ত নেই

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৪ জুন ২০১৬

যানজটের শহর নওগাঁ অপ্রশস্থ রাস্তা আর অপরিকল্পিত স্ট্যান্ডে পথচারীর দুর্ভোগের অন্ত নেই

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ উত্তরাঞ্চলের শান্তশিষ্ট ও রাজনৈতিকভাবে শান্তির জেলাখ্যাত নওগাঁ এখন ভয়াবহ যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। শহরের অপ্রশস্থ রাস্তাঘাট, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত বাস ও ট্রাকস্ট্যান্ড এবং অবৈধ যানবাহন বিশেষ করে চার্জার, টমটম, ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান, ভটভটি, ট্রাক্টর ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে থাকে প্রতিদিন। যানজট নিরসনের জন্য নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশও হিমশিম খাচ্ছে। তীব্র রোদ আর ভ্যাপসা গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এসব ট্রাফিক পুলিশকে যেন পাত্তাই দিতে চায় না এসব বৈধ ও অবৈধ যানের মালিক-শ্রমিকরা। ফলে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। যানজটের কাছে জিম্মি শহরবাসী। নওগাঁ শহরের রাস্তাঘাট তদানীন্তন ব্রিটিশ আমলেও যা ছিল, এখনও তাই রয়েছে। তবে শুধুমাত্র পরিবর্তন হয়েছে কার্পেটিংয়ের। ব্রিটিশ আমলে অধিকাংশ রাস্তাই ছিল মেটে (মাটির তৈরি)। আর প্রধান সড়ক ছিল সরু ও সিমেন্ট-খোয়া দিয়ে কংক্রিট ঢালাই করা। পরবর্তীতে কংক্রিট তুলে ফেলে সামান্য চওড়া করে পিচ-খোয়ার কার্পেটিং করা হলেও শহরের রাস্তাঘাট তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে প্রশস্থকরণ করা হয়নি। রাস্তার দু’পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে বিশাল স্থাপনা। জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপে এখন রাস্তা প্রশস্থকরণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু রাস্তার পাশের বেআইনী দখল উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্থকরণ করার তেমন কোন বলিষ্ঠ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে না। ইতোপূর্বে শহরের প্রধান সড়কসংলগ্ন তুলাপট্টির মোড়ে নিজস্ব জমিতে সেই প্রাচীনকালে স্থাপিত শ্রীশ্রী মহাদেব মন্দির থাকায় শহরের তথাকথিত নেতা নামধারীরা মন্দির না ভাঙলে রাস্তা প্রশস্থ হবে না, এমন কথা বলে অবৈধ দখলদারদের মদদ যুগিয়ে এসেছেন বলে বিস্তর অভিযোগ। কিন্তু প্রায় ৩মাস আগে মন্দিরটি জনস্বার্থে নিজস্ব জমি ছেড়ে দিয়ে সরিয়ে নিলেও রাস্তা প্রশস্থ করার কোন উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। ফলে শহরের লিটন সেতুর পশ্চিমপাশ থেকে পুরনো বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। ব্রিজের পশ্চিমমুখে সরু ও ঢালু রাস্তার ওপর স্বাধীনতা ভাস্কর্যের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত টমটম স্ট্যান্ড। কিছু রাজনৈতিক নেতার মদদপুষ্ট হয়ে সিএনজি ও টমটম মালিক-শ্রমিকরা পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে মাসোহারার মাধ্যমে ম্যানেজ করে এই অবৈধকে প্রায় বৈধতার রূপ দেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত। এমন কথা সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরাই দাবি করে থাকে। ফলে, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ পথচারী যারপরনাই দুর্ভোগে পড়ে থাকে এখানে। এদিকে শহরের তথা লিটন সেতুর পূর্বপাশের বাসিন্দা ও পথচারীর জন্য ভয়াবহ যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে পার-নওগাঁস্থ ঢাকাগামী বাস স্ট্যান্ড ও রজাকপুর ট্রাক দালাল অফিস। পার-নওগাঁ তাজের মোড় থেকে পূর্বে তুলসীগঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে চলাচলের কোন উপায় নেই। তাজের মোড়ে ব্যাটারিচালিত টমটম স্ট্যান্ড সব সময়ই যেন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েই থাকে। সেই সঙ্গে ঢাকাগামী বাসগুলো যখন রাস্তার ওপর ঘোরাতে থাকে তখন রাস্তার দু’দিকে বিভিন্নœ যানবাহনের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ডায়াবেটিস হাসপাতাল থেকে তুলসীগঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড় করে রাখা ট্রাক ধোয়া-মোছাসহ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করে রাখা হয়। ফলে, মাঝখানের সরু পথে অন্যান্য যানবাহন চলাচলে ভয়াবহ যানজট লেগেই থাকে। বর্তমানে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরে বৈধ-অবৈধ যানবাহনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাটারিচালিত চার্জার ভ্যান-রিক্সা শহরের যানজটের আরও একটি অন্যতম কারণ। এছাড়া দিনেরবেলায় শহরের সুপারিপট্টি, ডাবপট্টি, কালীতলা, পাটপট্টিসহ জনবহুল এলাকায় ব্যবসায়ীদের মালবোঝাই বড় বড় ট্রাক প্রবেশ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মালামাল লোড-আনলোড করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি মাথায় নিয়ে ইতোপূর্বে বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা মরহুম আব্দুল জলিলের জীবদ্দশায় স্থানীয় প্রশাসন, বাস-ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত শহরের ভেতরে ট্রাক লোড-আনলোড বন্ধ রাখা হয়। সেময় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের প্রকোপও ছিল না। সংশ্লিষ্ট দফতর রীতিমত এসব অবৈধ যানের লাইসেন্স প্রদান করে শহর ভরে তুলেছে। বর্তমানে নওগাঁ শহরে যানজট নিরসনে যেন কার্যকর উদ্যোগ কেউ নিতে চাইছে না।
×