ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় রাজাপুর উত্তাল ॥ ৪ পুলিশ ক্লোজড

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ২৭ মে ২০১৬

ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় রাজাপুর উত্তাল ॥ ৪ পুলিশ ক্লোজড

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা ॥ ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নে আসামী ধরাকে কেন্দ্রে করে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয়দের বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে উঠেছে জনতা বাজার এলাকা। রাজাপুরের জনতা বাজার এলাকার অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পকে টর্চারসেল আখ্যা দিয়ে এ ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ ও অন্যতম নায়ক নাসির সর্দারের বিচারসহ ফাঁসির দাবীতে কয়েক শত নারী পুরুষ বিক্ষোভ করেছে। এদিকে নিহত রুম্মানের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার সকালে পুলিশ ঘটনা স্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজ মো. আকরাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত করেন। এদিকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল, আসাদুজ্জামান, রাজিব এবং আলালকে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। তার মধ্যে মামলা নং ৬৬/১৬ ও ৬৪/১৬ এর আসামী রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও শিক্ষক মিজানুর রহমানকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর রাজাপুরের জনতা বাজারের সাদা পোশাকের পুলিশ গ্রেফতার করে প্রকাশ্যে মারধর করে অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এতে করে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্প থেকে মিজানুর রহমানকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয়রা পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পে হামলা চালায়। তখন পুলিশ গুলি ছোড়ে। তখন পুলিশের এলোপাথারি গুলিতে রোম্মান নামে (১৮) বছরে এক যুবকের মাথায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয় আমিরণ, নিরব, জসিম ও মনিরসহ অন্তত ২০জন আহত হয়। নিহতের ফুফু শাহিনাসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনার রাতে যে বাড়ি পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে সে বাড়ির মালিক নাসির সর্দার ঘটনার সময় পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়লে তার ভাইয়ের ছেলে রোম্মান নিহত হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই পুলিশ ক্যাম্প হওয়ার পরই একাধিক মামলার আসামী নাসির সর্দার ও পুলিশ আসামীদের আটক করে অর্থ বানিজ্য করে আসছে। টাকা না দিয়ে মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করতে। এতে করে সাধারন মানুষ আগে থেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে জনতা বাজারে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় স্থানীরা জনতা বাজার থেকে টর্চার সেল নামক পুলিশ ক্যাম্প ৭ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে দোষীদের বিচারের দাবী জানান। পরে বেল্লাল জর্মাদারের ছেলে নিহত রোম্মানকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। অন্যদিকে শুক্রবার সকালে বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজ মো: আকরাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান। ভোলা সদর সার্কেলের এসএসপি মামুনুর রশিদ জানান,তারা রাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। জনতা বাজার পুলিশ ক্যাম্প থেকে ৪ পুলিশকে ক্লোজ করা হয়েছে। জনতার তোপের মুখ থেকে রক্ষা পেতে অভিযুক্ত নাসির সর্দর কে তারা বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ হেফাজতে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ৮০ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমানকে স্থানীয়দের হেফাজতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভোলা থানার ওসি খায়রুল কবির জানান, ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে এবং এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। অপর দিকে সাদা পোশাকে রাজাপুর ইউনিয়নের ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমানকে মিথ্যা মামলা গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে বলে ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
×