ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙ্গা পরিবারে কষ্টে পড়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

ভাঙ্গা পরিবারে কষ্টে পড়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা

কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে মাধবচর মৌজার সর্দারপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ নওশের আলী। অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজৃ করে পান একশ’ টাকা। এ দিয়ে তাঁর স্ত্রী ইফিজন বিবিসহ কোনরকমে জীবনটা বাঁচিয়ে রেখেছেন। তার দু’ছেলে ভুট্টো আর মোহন্ত। এক যুগ আগে তাদের বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী গ্রামে। বিয়ের দু’বছরের মাথায় সন্তানরা আলাদা হয়ে গেছে বাবা-মাকে ছেড়ে। অসহায় বাবা-মা উপায়ন্তর না পেয়ে আবারও কাজে নেমেছেন। শুধু সর্দারপাড়া গ্রামে নয়, আশপাশের সবুজপাড়া, বালাবাড়িপাড়া, পাংগারচর, নওদাবস, চৌধুরী -পাড়াসহ সারা জেলার প্রতিটি গ্রামের একই চিত্র। এক সময়ের একান্নবর্তী পরিবার চোখের নিমেষে খুব সামান্য কারণেই ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এসব গ্রামের বয়স্ক মানুষদের চোখের সামনে আজও তাদের জীবনের একান্নবর্তী পরিবারের সুখ-স্মৃতি ভাসে। নওশের আলী জানান, আমার দুই ছেলে, ভুট্টো আর মোহন্ত। গরিব বলেই ছোটবেলা থেকে দুই ছেলেকে খুব কষ্টে মানুষ করেছি। একটি মেয়ে ছিল, তাকেও বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলে ভুট্টোর বিয়ের সময় ধার কর্জ করেছিলাম। সুখেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু এক বছর পার না হতেই সংসারে বিপত্তি দেখা দিল। সংসারে আয়ের চেয়ে খরচ বাড়তে লাগল। অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক বিষয় নিয়ে শাশুড়ি ইফিজন বিবি আর ছেলের বৌ ফাতেমা বেগমের ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। প্রথমদিকে কিছুটা সহনীয় থাকলেও ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। এক সময় ভুট্টো তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার পাতে। অনুরূপ ছোট ছেলে মোহন্ত বিয়ের পর আলাদা হয়ে যায়। উপায় না পেয়ে নওশের আলী আবারও কাজের সন্ধানে বের হন। নওশের আলী জানান, মাত্র দুই দশক আগে তার বাবা মহিজউদ্দিন দুই চাচাসহ একান্নবর্তী পরিবারে বাস করেছেন যুগের পর যুগ। যখন চাচাত ভাইয়রা বড় হয়, তখনই খরচের বৈষম্য শুরু হয়। টানাপোড়েন চলতে থাকে সংসারে। এক পরিবার হয়ে যায় চার পরিবার। সেদিনের সুখ-স্মৃতি আজও চোখে ভাসে। তাদের বাড়িতে সুখের অন্ত ছিল না। একঘরেই রান্না হতো। দল বেঁধে বড় ভাই চাচাদের সঙ্গে ধরলা নদীতে মাছ ধরতে গেছে। প্রচুর মাছও ছিল নদীতে তখন। বাড়ির কোন বিপদে আপদে সবাই এক সঙ্গে ছুটে গেছে। অথচ আজ তার সন্তানরাই ভাইয়ের বিপদে এগিয়ে আসতে চায় না। ধরলা পাড়ের গ্রাম ভেলাকোপা। এই গ্রামের বৃদ্ধ সৈয়দ আলী জানান, জীবনে খুব কষ্ট করে তিন ছেলে আর দুই মেয়েকে মানুষ করেছি। অথচ সন্তানরা বিয়ের পর আলাদা হয়ে গেছে। এখন আমাকেই কাজ করে সংসার চালাতে হয়। এক সমাজ বিজ্ঞানী জানান, আসলে দিন যতই যাচ্ছে মানুষ নিজেকে এবং নিজের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য টাকার পিছনে ছুটছে। সময়ের সঙ্গে সংসারে খরচও বেড়েছে। এটি ঠিক রাখার জন্য অনেক পরিবারের পুরুষদের কিছুটা ইচ্ছা থাকলেও নারীদের কারণে তাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারমতে একান্নবর্তী পরিবারে সবাই সমান মানসিকতা নিয়ে না চললে সমস্যায় পড়ে যায়। -রাজু মোস্তাফিজ কুড়িগ্রাম থেকে
×