স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ ভালই হলো এখন একটু আরামে পড়া লেখা করতে পারুম। একটু রাইত জেগেও পড়া-লেখা করা যাবে। আমাদের বাড়িতে কারেন্ট (বিদ্যুৎ) নাই। কুপিড় আলোতে পড়তে ভাল লাগেনা। পোকা-মাকড়ে জ্বালায়। হ্যাজাক লাইটের স্বচ্ছ আলো পেলে পড়ায় মন বসবে। শনিবার বিনামূল্যে সোলার হ্যাজাক লাইট নিতে এসে এমনটিই বলছিলেন কুমারভোগের ওয়ারী সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী তাহমিনা আক্তার (১৪)। সে উপজেলার কুমারভোগ গ্রামের মো. শাওনের কন্যা। তাহমিনার মত কনকসার ইউনিয়নের ঝাউটিয়ার চরের দানেশ মোল্লা, লৌহজং-টেউটিয়া ইউনিয়নের রাউৎগাঁয়ের আব্দুল আজিজ, শিমুলিয়ার রওশন আরা, চরভোগদিয়ার মুক্তা বেগমের মত সহ¯্রাধিক পরিবার এসেছে এই সোলার হ্যাজাক লাইট নিতে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় তাদের করোর ঘরেই বিদ্যুৎ এর আলো নেই। তাই এই লাইট পেয়ে তারা মহা খুশি। সকলের মুখেই আনন্দের হাসি।
লৌহজংয়ের বিস্তীর্ণ পদ্মার চরের ঘরে এখন আলো জ্বলবে। এতে নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র এবং অনগ্রসর পরিবারের চিত্র পাল্টে যাবে। বিশেষ করে পরিবারগুলোর শিশুদের পড়া-লেখায় বিরাট অগ্রগতি আসবে। এই খবরে মুন্সীগঞ্জের পদ্মা তীরের উপজেলাটির দূর্গম চরের লোকদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসব আমেজ। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ শ’ পরিবারের মাঝে এই সোলার হ্যাজাক বিতরণ করা হয়। এর উদ্যোক্তা স্থানীয় সাংসদ এবং জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, অনগ্রসর মানুষের উন্নয়ন এখন জরুরি। বর্তমান সরকার গোটা জাতির উন্নয়নে বিশ্বাসী। তাই বিদ্যুতহীন বিশাল চর এলাকায় এই সোলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি মনে করেন, চরের লোকজন দেশ ও জনগনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিস্তীর্ণ জমিতে ধানসহ নানা জাতের ফসল ফলিয়ে দেশের খাদ্যশস্যের চাহিদা মেটাতে চরের লোকেরা ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তাদের জীবন মান উন্নয়ন জরুরি। প্রাকৃতিক সমস্যাসহ নানা কারণে বিদ্যুতের আলো চরাঞ্চলে পৌছাতে না পারলেও স্বচ্ছ আলো দেবার এই আয়োজন করা হয়েছে। এতে চরের শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখায় গতি বাড়বে। তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতে দেশের জন্যও অবদান রাখতে পারবে।
এই সোলার ব্যবহার এবং বিতরণ নিয়ে তাই ব্যতিক্রম আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার লৌহজং থানার মাঠে “সোলার হ্যাজাক লাইট” আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী চরবাসীর মাঝে এ সোলার হ্যাজাক লাইট তুলে দেন।
১৯৯৪ থেকে টানা কয়েক বছর পদ্মা গর্ভে বিলীন ৩৩টিরও বেশী গ্রাম। প্রাচীন এই জনপদটি (লৌহজং উপজেলা) প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনপদ চলে যায় পদ্মা গর্ভে। পরবর্তীতে সেই জমিগুলে তে গত কয়েক বছরে জেগে উঠেছে বিশাল চর। উত্তাল পদ্মা বুকে জেগে উঠা বিশাল এই চরে আবার এখন জনবসতি হয়েছে। দুর্গম এই চরে এখনো বিদ্যুতের আলো পৌছাতে পারেনি সরকার। কিন্ত চরাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা চিন্তা করে সাংসদ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি তাঁর বিশেষ বরাদ্দ থেকে চরাঞ্চলের এক হাজার পরিবারসহ ১০টি ইউনিয়নের ১৫ শ’ পরিবারের মাঝে সোলার হ্যাজাক লাইট বিতরেণ উদ্যোগ গ্রহন করে। এতে করে চরাঞ্চলের পরিবারগুলোর মাঝে এখন অনন্দের বন্যা বইছে।
পুরোনো দিনের কুপি বা হ্যারিকেন আলো বাদ দিয়ে তারা এখন স্বচ্চ আলোয় বসবাস শুরু করবে। আর এ স্বচ্ছ আলো আলোকিত করবে তাদের ঘরের সন্তানদের। চরের ছেলে মেয়েরা বিদ্যুতের আলোর মত স্বচ্ছ আলো পেলে তারাও অধিকরাত পর্যন্ত তাদের পড়া-লেখায় মননিবেশ করতে পারেন। এমনটিই জানালেন কনকসার ইউনিয়নের হিংসের হাটির চরের বাসিন্দা আলী দেওয়ানে স্ত্রী ইায়ারন নেছা।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খালেকুজ্জামান বলেন, উদ্যোগটি শুভ। চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিশেষ বরাদ্দে সোলার হ্যাজাক লাইট বিতরণ প্রশংসার দাবী রাখে। যাতে করে দরিদ্র মানুষকে তেল ক্রয় বা মোবাইল চার্জ দেবার মত ঝামেলায় পড়তে না হয়।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, অনগ্রসর মানুষের জন্য এই সোলার হ্যাজাক অনেক বেশী উপকারে আসবে। এতে জীবন মানে পরিবর্তন ঘটবে, রাতের আধার কাটিয়ে বিস্তৃর্ণ এই চরে জ্ঞান চর্চা বাড়বে।