ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার আতঙ্কে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ টাঙ্গাইল মহাসড়কে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৫ মার্চ ২০২০

করোনার আতঙ্কে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ টাঙ্গাইল মহাসড়কে

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণায় বাড়ি ফেরা মানুষের চাপে টাঙ্গাই-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েণ্টে ২-৩ কিলোমিটার করে দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে মহাসড়কে যানজট শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করছে। পরিবহন যাত্রী ও পুলিশ জানায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দীর্ঘ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় হাজার হাজার যাত্রী বাড়ি ফিরছেন। এজন্য মহাসড়কে যানবাহনের চাপ তিন থেকে চারগুণ বেড়ে গেছে। বুধবার ভোর রাত থেকেই গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে এ যানজট নাটিয়াপাড়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে দীর্ঘ হচ্ছে। মহাসড়কে কোন কোন এলাকায় ৩০০-৪০০ মিটার এলাকায় যানজট কম থাকলেও মহাসড়কেই প্রায় অংশেই যানজট দেখা যায়। মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের গোড়াই-হাটুভাঙ্গা আন্ডারপাস এলাকায় ৫০০মিটার রাস্তার বেহাল দশা ও আন্ডারপাসের কাজ বন্ধ থাকায় দুই পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরবঙ্গগামী গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলছে। আর ঢাকাগামী গাড়িগুলো দ্রুত গতিতেই চলছে। গোড়াই থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত আসতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগছে। এছাড়া এলেঙ্গা অংশে মহাসড়ক দেবে যাওয়ায় ধীর গতিতে গাড়ি চলাচল করায় যানজট হচ্ছে। ঢাকা থেকে পাবনাগামী ট্রাক চালক মতিন মিয়া জানান, ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাত ১০টায় যাত্রা শুরু করেই যানজটে পড়েন তিনি। ১০ ঘণ্টা পর বুধবার (২৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার সময়ও মির্জাপুর অতিক্রম করতে পারেননি। যদিও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মির্জাপুর পৌঁছতে মাত্র দুই ঘণ্টা লাগার কথা। গাইবান্ধাগামী পিকআপভ্যানের যাত্রী আলম মিয়া ঢাকায় রিক্সা চালান। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাত দুইটার দিকে ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে পিকআপভ্যানে উঠেছেন। যানজটের কারণে চালক অনেক কৌশল করে চালিয়েছেন। তবু মির্জাপুর পৌঁছতে সকাল ৯টা বেজে যায়। রিজার্ভ বাসের চালক মোহন মিয়া বলেন, সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকার মহাখালী থেকে রাত সাড়ে ১১টায় ছেড়ে গাজীপুরের চন্দ্রায় তিনি যানজটে পড়েন। বুধবার সাড়ে ১২টার দিকে করটিয়া হাট বাইপাস অতিক্রম করছেন। চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের গোড়াই এলাকা পর্যন্ত তীব্র যানজট হচ্ছে। এছাড়া গোড়াই থেকে করটিয়া হাট বাইপাস পর্যন্ত জটের কারণে থেমে থেমে কখনো ধীরলয়ে গাড়ি চালিয়ে আসতে হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাত ১২টায় ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা পিকআপভ্যানে যাত্রী ফারুক হোসেন জানান, করোনার কারণে ছুটি হওয়ায় গ্রামে যাওয়ার জন্য বাসে সিট না পেয়ে তিনি পিকআপের যাত্রী হন। তবে যানজটের কারণে বুধবার সকাল পৌনে ৭টায় তিনি মির্জাপুর পর্যন্ত এসে আটকা পড়েন। যানজটে আটকে থাকা ট্রাকচালক বাদশা মিয়া জানান, মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা থেকে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে বুধবার সকাল ৬টায় তিনি মির্জাপুর এসে পৌঁছেন। অপর ট্রাকচালক লাল চাঁন জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় তিনি ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়ে বুধবার সকাল সোয়া ৬টায় মির্জাপুর পর্যন্ত পৌঁছেন। মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সায়েদুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিনের ছুটি পড়েছে। এক দিকে রাস্তা ভাঙ্গাচোরা, অন্য দিকে মহাসড়কের যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মির্জাপুরের গোড়াই ও কদিমধল্যা নামকস্থানে আন্ডারপাসের কাজ চলমান থাকায় ওই অংশে ওয়ানওয়েতে যানবাহন চলাচল করাও যানজটের একটি কারণ। তবে যানজট নিরসনের জন্য থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বুধবার দিনগত রাতের মধ্যে মহাসড়কে যানজট আর থাকবেনা বলে জানান ওসি। গোড়াই হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির জানান, গোড়াই আন্ডারপাস এলাকায় ৫০০মিটার রাস্তা ভাঙ্গা থাকায় যানজট এখন মহাসংকটে পরিণত হয়েছে। রাস্তা ও আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকার পাশাপাশি বড়িফেরা মানুষের চাপে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গার্মেন্টস বন্ধ হয়েছে। রাস্তায় বাস চলছে না। বাস রিজার্ভ করে মানুষ গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চার লেনের কাজ চলছে। এলেঙ্গা অংশে মহাসড়ক অনেকটা দেবে যাওয়ায় ধীরে গাড়ি চলাচল করছে। এরই মধ্যে পুলিশ যানজট নিরসনে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। আন্ডারপাস নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে যানজট ও দুর্ভোগ লাঘবের তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে বাড়িফেরা মানুষের অতিরিক্ত চাপ কমার সাথে সাথে যানজটও কমে যাবে।
×