ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জনের মেয়ের বিয়ে ॥ ভোলায় বৌভাতের অনুষ্ঠান বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২০ মার্চ ২০২০

করোনা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জনের মেয়ের বিয়ে ॥ ভোলায় বৌভাতের অনুষ্ঠান বন্ধ

অনলাইন ডেস্ক ॥ সারাদেশে করোনাভাইরাস আতঙ্কে জনজীবন থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে লকডাউন করে দেয়া হয়েছে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলাকে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সচেতনতা হিসেবে গণজমায়েত এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। সারাদেশের নুষ যখন করোনার আতঙ্কে ভীত-সন্ত্রস্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে সরকারি নির্দেশনা আমলে না নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সিভিল সার্জন মো. শাহ আলম ঘটা করে নিজের চিকিৎসক মেয়ের আকত বিয়ে দিচ্ছেন। শুক্রবার জেলা শহরের ফারুকী পার্ক সংলগ্ন জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের ডরমেটরিতে থাকা নিজের সরকারি বাসভবনে এই আকত বিয়ের আয়োজন করেন সিভিল সার্জন। বিয়ের আয়োজনে শামিল হন জেলার বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসকরা। বিয়েতে তিনশতাধিক অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সিভিল সার্জন ঘরোয়া আয়োজন উল্লেখ করে বিয়েতে কোনো জনসমাগম করা হয়নি বলে দাবি করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর-চাপুইর গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন মোল্লার ছেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মঈনুল হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সিভিল সার্জন শাহ আলমের মেয়ে দন্ত চিকিৎসক শাননিন আলম মমোর বিয়ের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার দুপুরে নামাজের পর শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল চিকিৎসক ফায়েজুর রহমান, ফৌজিয়া আক্তার, সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আজহারুর রহমান ও খোকন দেবনাথ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন ক্লিনিকের দন্ত চিকিৎসকদের একটি দল, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা। তবে সাংবাদিকদের আনগোনা দেখে বিকেল পৌনে তিনটার দিকে সিভিল সার্জনের সরকারি বাসভবনে প্রধান ফটকটি বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি বিয়ে বাড়িতে। ফটকের বাইরে সিভিল সার্জন শাহ আলম নিজেই চেয়ার পেতে বসেন। জানা গেছে, প্রধান ফটকের ভেতরে ফুল দিয়ে একটি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। আর বাড়ির ভেতরে তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। ভেতরে একটি জায়গায় ১০টি বড় পাত্রে চলছে রান্নার কাজ। নাম না প্রকাশ করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য জনসমাগম এড়াতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। এই সময়ে ঘটা করে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তার মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন শাহ আলম বলেন, এক মাস আগেই বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মেয়ের গায়ে হলুদ ছিল। এখন আমি বাবা হয়ে কীভাবে মেয়ের বিয়ে বন্ধ করে দেই? কোনো আয়োজন ছাড়াই স্বল্প পরিসরে বিয়ে হচ্ছে। পরিবারের অনেক সদস্যকেও দাওয়াত দিতে পারিনি। উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৯ হাজার ২০৮ জন প্রবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফিরেছেন। গত বুধবার (১৮ মার্চ) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ই-মেইল বার্তা পাঠিয়ে এসব প্রবাসীদের আগমনের তারিখ থেকে পরবর্তী ১৪ দিন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, শুক্রবার (২০ মার্চ) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৪৯ জনকে হোম কোয়েরেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদিকে, নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে ভোলার দৌলতখানে একটি বৌভাতের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিতেন্দ্র কুমার নাথ ও দৌলতখান থানার (ওসি) বজলার রহমান এ বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করেন। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১৭ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে সরকার, মৃত্যু হয়েছে একজনের। এই পরিস্থিতিতে সব ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। জনসমাগমে এ রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে বলে সব ক্লাব ও সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি বড় আকারে বিয়ের অনুষ্ঠান না করতেও সরবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে; বাস, রেল ও লঞ্চে যাত্রী পরিবহন সীমিত করতে বলা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিতেন্দ্র বলেন,উপজেলার চর খলিফা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামাল মৃদা বাড়ির মো. কবির হোসেনের ছেলে মো. ইলিয়াছ গত ১৪ মার্চ ঢাকায় বিয়ে করেন। সেই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আজ তাদের বাড়িতে বৌভাত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ বৌভাত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে এবং জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান এ কর্মকর্তা। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দুটি ঘটনার দুই ধরনের প্রতিক্রিড়া ব্যক্ত করছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সিভিল সার্জনের এমন কাণ্ডে অবাক অনেকেই।
×