ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

যুব সমাজকে সুন্দর জীবন দিতে কাজ করছে সরকার

প্রকাশিত: ১১:১৪, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

যুব সমাজকে সুন্দর জীবন দিতে কাজ করছে সরকার

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কেউ বেকার থাকুক, আমরা তা চাই না। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদক থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করে তাদের সুন্দর জীবন দিতে, বিপথে নয় সঠিক পথে যেন যুব সমাজ চলতে পারে এবং মানুষের মতো মানুষ হয়- সেজন্য সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কারণ যুবসমাজ শক্তি, উদ্যম, উদ্ভাবন আর কর্মপ্রেরণার প্রতীক। এখন যুবকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী শুধু চাকরির পেছনে ঘুরবে নাকি নিজেরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অন্যকেও চাকরি দেবে? ইচ্ছে করে কেউ বেকার থাকতে চাইলে সেখানে করার কিছু নেই। তবে আমরা এত কর্মসূচী নিয়েছি- সেখানে কারও বেকার থাকার সুযোগ নেই। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিপুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যুবক ভাই-বোনদের শুধু অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না, শুধু একটি চাকরির আশায় দ্বারে দ্বারে ধরনা দিলে চলবে না। আমাদের প্রতিটি কর্মপরিকল্পনাতেই যুবসমাজের ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্মরাই পারে একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তর করা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। আমরা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যুবসমাজকে শিক্ষিত, দক্ষ ও কর্মমুখী হিসেবে গড়ে তুলছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যুবসমাজ বেকার থাকুক, এটা আমরা চাই না। যুব সমাজকে শুধু চাকরির আশায় ধরনা দিলে চলবে না, তারা কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে নিজেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করছি, সেখানেও বিপুল যুবসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্কুল জীবন থেকে হাতেকলমে যেন ছাত্ররা কোন একটা বিষয়ে প্রশিক্ষিত হতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে ইচ্ছে করে কেউ যদি বেকার থাকতে চায়, সেখানে করার কিছু নেই। কিন্তু আমরা যে ব্যবস্থা করে দিয়েছি, ইচ্ছা করলেই বেকার যুবসমাজ কিছু না কিছু নিজেরাই করতে পারবে, নিজেরা কাজ করে অন্যকে চাকরি দিতে পারবে। বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে প্রটোকল নিয়ে চলতে হয় এটা ঠিক, কিন্তু দেশের কোন কিছুর খবর রাখি না, এটা ঠিক নয়। দেশের সবদিকে নজর রেখেই কাজ করছি বলেই দেশের এত উন্নয়ন হয়েছে। আর বেশি কাজ করলেই আবার সমালোচনা করা হয়, প্রধানমন্ত্রী একাই সব কাজ করবেন কেন? কিন্তু দেশের জনগণ আমাকে সুযোগ দিয়েছে বলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কাজ করে যাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ’৭৫ পরবর্তী অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা যুবসমাজের হাতে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিয়ে বিপথে চালিত করেছিল। জিয়াউর রহমানও মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র-মাদক তুলে দিয়ে বিপথে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা চাই না যুবসমাজ বিপথে যাক। সন্ত্রাস-মাদক-জঙ্গীবাদ থেকে মুক্ত করে তাদের সুন্দর জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছি। বিপথে নয়, যুবসমাজকে সঠিক পথে এনে মানুষের মতো মানুষ করতেই আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (রাঙ্গা) এখনও পেছনে পড়ে আছেন। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা অনেক আগে থেকেই অভিযান শুরু করেছি, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। কারণ মাদক একটি পরিবারকে ধ্বংস করে, দেশেরও ক্ষতি হয়। তাই অভিযানের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রত্যেকটি পরিবারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, যাতে তারা লক্ষ্য রাখেন কোন যুবক মাদক থেকে দূরে থাকে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা গর্ব করে মুখ ফুটে বলতে পারতেন না- আমরা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। মুক্তিযোদ্ধা গর্বভরে এখন বলতে পারে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের যে মর্যাদা দিয়েছি, সেখানে আর পদক দেয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বরং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মুজিববর্ষে আমার আহ্বান, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় নতুন প্রজন্ম ও যুবসমাজকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান, যাতে তারা দৃঢ়চেতা নিয়ে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশী-বিদেশী নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে আমাদের আজকের বাংলাদেশ। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওড়নাপরা নিষিদ্ধ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন গতিশীল ও স্থায়ী করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত, সুশিক্ষিত ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে আমাদের সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা এবং সততার অনুশীলন করানো হচ্ছে। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের মেয়েদের ওড়নাপরা নিষিদ্ধ করে দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করানো হচ্ছে মর্মে সংসদ সদস্যের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েদের ওড়নাপরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গবর্নিং বডিও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অপরাধী শনাক্ত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জননিরাপত্তা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্নীতি, মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের অভিলক্ষ্য হলো- নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠন।
×