ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার বাতাসেও নির্বাচনের গন্ধ - পোস্টারে ছেয়ে গেছে দুই সিটির সব অলিগলি

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকার বাতাসেও নির্বাচনের গন্ধ - পোস্টারে ছেয়ে গেছে দুই সিটির সব অলিগলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরোদমে চলছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা। একদিকে দুই সিটির মেয়রপ্রার্থী, অন্যদিকে কাউন্সিলর প্রার্থী- সবাই মিলে নির্বাচনের উত্তাপ বেশ ভালই ছড়িয়েছেন রাজধানীতে। মাত্র দুই সপ্তাহ সময় হাতে থাকায় একটি মুহূর্তও যেন নষ্ট করতে নারাজ প্রার্থীরা। তাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর প্রতিশ্রুতির মিছিলের উত্তাপ পৌষ-মাঘের তীব্র শীতকেও যেন হার মানাচ্ছে। অবস্থা এমন যে, ঢাকার বাতাসেও এখন নির্বাচনের গন্ধ বিরাজ করছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচরণায় নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। মেয়ররা যেমন দলবেধে প্রচার চালাচ্ছেন, তেমনি কাউন্সিররাও পিছিয়ে নেই। ঢাকার দুই সিটিতে একাধিক দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ৪ প্রার্থীই। ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম এবং বিএনপির তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস ও ইশরাক হোসেন। সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকার অলিতে গলিতে তাদের জমজমাট প্রচারণা চললেও, অপর রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণা চোখে পড়ছে না। বড় এই দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা যখন যে এলাকায় যাচ্ছেন ওই এলাকার দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থক ও ভোটাররা রাস্তায় নেমে আসছেন। মেয়র প্রার্থীরা তাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করছেন, হাত মেলাচ্ছেন আবার কোলাকুলি করছেন। তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন লিফলেট। মেয়র প্রার্থীরা ছাড়াও যার যার দলের পক্ষ থেকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অলিগলিতে গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন এবং লিফলেট বিতরণ করছেন। মেয়র প্রার্থীর ভোট চাইতে গিয়ে ওই এলাকার কাউন্সিলরদের জন্যও ভোট চাইছেন এবং লিফলেট বিতরণ করছেন। পাশাপাশি ট্রাকে করে জনপ্রিয় গানের প্যারোডি সুরেও চলছে ভোটের প্রচার কাজ। গানের তালে তালে নৌকা ও ধানের শীষের পক্ষে চলছে ভোট চাওয়া। গত জাতীয় নির্বাচন থেকে এ বিষয়টি নির্বাচনের প্রচারে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে মেয়রদের প্রচার কাজ। মেয়রদের চেয়ে কাউন্সিলররাও প্রচারে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। মেয়ররা ঠিক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট না চাইলেও কাউন্সিলররা ভোটের জন্য বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত চলে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রার্থীরা নিজেরা যেমন বাড়ি বাড়ি বা এলাকায় গিয়ে ভোট চাইছেন আবার তাদের পক্ষে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। ফলে কাউন্সিলরদের প্রার্থীদের প্রচার কাজ আরও জমে উঠেছে। দলীয় মনোনয়ন দিলেও কাউন্সিলর নির্বাচন দলীয় ভিত্তিক না হওয়ায় ভোটের মাঠে সব প্রার্থীই মনে হচ্ছে একই প্লাটফর্মে এসে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনী প্রচারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো পোস্টারের মাধ্যমে প্রচার। যে কেউ রাতের আধারে নির্জন ঢাকায় পা রাখলেও বুজে যাবে যে, এখানে জমজমাট নির্বাচন হচ্ছে। কারণ ঢাকার প্রতিটি অলিগলি এখন প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে আছে। এ যেন ঢাকায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ফ্ল্যাট বা বাসা থেকে বের হলেও দেখা যাবে মাথার ওপর ঝুলছে পোস্টার। কে কার আগে সড়কের আকর্ষণীয় স্থান দখল করবে চলছে তার প্রতিযোগিতা। ঢাকার একমাত্র ভিআইপি রোড ছাড়া আর সব সড়কেই ঝুলছে মেয়র ও কাউন্সিরর প্রার্থীদের পোস্টার। এক্ষেত্রে নারী পুরুষ কোন প্রার্থীই পিছিয়ে নেই। আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুই সিটিতে একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এবার প্রথমবারের মতো ঢাকার দুই সিটির সবগুলো কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেয়া হচ্ছে। নির্বাচনে মোট ১ হাজার ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে প্রার্থী ১৩ জন, কাউন্সিলর পদে ৯৯৬ জন। উত্তর সিটিতে ওয়ার্ড ও ভোটার ঃ ঢাকা উত্তর সিটি, তথা ডিএনসিসি’তে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এই সিটিতে ওয়ার্ড ৫৪টি, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ১৮টি। মোট ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ৩৪৯টি, ভোটকক্ষ ৭ হাজার ৫১৬টি। ডিএনসিসি’তে মেয়রপ্রার্থী ৬ ঃ ঢাকা উত্তর সিটিতে চূড়ান্তভাবে মেয়র পদে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির তাবিথ আউয়াল, বাঘ প্রতীকে পিডিপি’র শাহীন খান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলে বারী মাসউদ, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাজেদুল হক ও আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান। উত্তরে কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৪৯ ঃ ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে ৫৪টি সাধারণ ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোট ৪৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৫৪টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৬১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ঃ ডিএনসিসি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম। তার সহযোগী হিসেবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রয়েছেন ১৮ জন। এই সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন সংলগ্ন ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ভবনের তৃতীয় তলা। দক্ষিণ সিটিতে ওয়ার্ড ও ভোটার সংখ্যা ঃ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, তথা ডিএসসিসি’তে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। এই সিটিতে ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ১২৪টি, ভোটকক্ষ রয়েছে পাঁচ হাজার ৯৯৮টি। দক্ষিণ সিটিতে মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৭৫টি, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ২৫টি। দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী ৭ ঃ ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন। তারা হলেন, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি’র ইশরাক হোসেন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুর রহমান, ডাব প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ আক্তারুজ্জামান ওরফে আয়াতউল্লাহ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহরান এবং মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন। কাউন্সিলর প্রার্থী ৫৪৭ ঃ ওয়ার্ড সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডিএনসিসি’র তুলনায় ডিএসসিসি’তে কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যাও বেশি। এই সিটিতে ৭৫টি সাধারণ ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫৪৭। এর মধ্যে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী ৪৪৯ জন, ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৯৮ জন। দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা : ডিএসসিসি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ইসির যুগ্ম সচিব আব্দুল বাতেন। তার সঙ্গে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন ২৫ জন। এই কর্মকর্তার কার্যালয় রাজধানীর টিকাটুলীর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার। এর আগে, গত ২২ ডিসেম্বর দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল গত ৩১ ডিসেম্বর। শেষ সময় পর্যন্ত দুই সিটিতে মেয়র পদে মোট ১৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। আর সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এক হাজার ৩০ জন। গত ২ জানুয়ারি দাখিল করা মনোনয়নপত্রগুলো যাচাই-বাছাই হয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। যাচাইয়ে উত্তর সিটিতে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জি এম কামরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। ফলে মেয়র পদে দুই সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী টিকে যান ১৩ জন। বেশকিছু কাউন্সিলর প্রার্থীরও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় দুই সিটিতে। পরে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল। এ সময় কোন মেয়র প্রার্থীই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯৬-এ। গত ১০ জানুয়ারি বৈধ ও চূড়ান্ত এসব প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। ওইদিন থেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা।
×