ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী যুবলীগের আজ সপ্তম কংগ্রেস

হৃতগৌরব ও ইমেজ ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

  হৃতগৌরব ও ইমেজ ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এবার প্রচন্ড ইমেজ সঙ্কটে পড়া দেশের বৃহৎ যুব সংগঠন যুবলীগের পালা। সংগঠনটিতে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ‘বুড়ো’দের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে অনেক আগেই। হৃতগৌরব ও ইমেজ ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস। এই সম্মেলন থেকেই বয়সের ফাঁদে পড়ে বাদ যাচ্ছেন সংগঠনটির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই। বুড়োদের বিদায় নিশ্চিতের পর আজকের সম্মেলন থেকে তরুণ, যুববান্ধব ও পরীক্ষিতদের বেছে নিয়ে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে দেশের এই বৃহৎ সংগঠন পরিচালনার নেতৃত্ব। হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারই হবে নেতৃত্ব পাওয়া নতুন কমিটির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসকে সামনে রেখে বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়েছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আদলে তৈরিকৃত দৃষ্টিনন্দনভাবে নির্মিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মঞ্চে আজ সকাল ১১টায় যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথি থেকে সংগঠনের আগামী দিনের পথচলার গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনার পাশাপাশি হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে উচ্চারণ করবেন কঠোর হুঁশিয়ারিও। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বসবে যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন। সেখানে গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন ও অনুমোদন ছাড়াও নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন ও ঘোষণা করা হবে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সারাদেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা ও ৮টি জেলার মর্যাদাসম্পন্ন বৈদেশিক শাখার ৩ হাজার কাউন্সিলর ও ২৫ হাজার ডেলিগেটস এবং ৮ হাজার অতিথিকে কংগ্রেসে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এবারের যুবলীগের জাতীয় সংগ্রেসে ৫৫ বছর বয়সের বেশি কেউ কেন্দ্রীয় কমিটির কোন পদে স্থান পাবেন না। সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে তরুণ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে আসার পাশাপাশি এবার কোন দুষ্কর্মকারী ও বিতর্কিতদের ঠাঁই হবে না নতুন কমিটিতে। ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ওই তিন সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়া নেতাদেরই নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হলেও যুবলীগের কংগ্রেসে চেয়ারম্যান পদে বাইরে থেকে কাউকে এনে চমক দিতে পারেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে যুবলীগের বর্তমান কমিটি থেকেই কাউকে বেছে নেয়া হতে পারে, এটি প্রায় নিশ্চিত। ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর কংগ্রেস হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুবীগের সপ্তম কংগ্রেস। এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী এই সংগঠনের কংগ্রেসের সব প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কংগ্রেসস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকাকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মূল কংগ্রেস মঞ্চ নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ওপর বসে কংগ্রেস উপভোগ ও বক্তৃতা করছেন- এমন একটি আবহ তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বেশ কয়েক নেতা গ্রেফতার হন। ক্যাসিনোকা-ে সম্পৃক্ততা এবং দুর্নীতি ও অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। যাদের সবাই পরে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃতও হন। গত ২০ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের বৈঠকে পদবাণিজ্য ও দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই বৈঠকে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্য সচিব করে সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটি গঠন এবং যুবলীগের নেতৃত্ব নির্ধারণের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৫৫ বছর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নেতারা বলছেন, ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সংগঠনের শীর্ষপর্যায়ের অনেক নেতার বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ ওঠায় যুবলীগ এই মুহূর্তে প্রচন্ড ভাবমূর্তি সঙ্কটে রয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমেও অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফলে সংগঠনের হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনাসহ সংগঠনকে গতিশীল করাই এবারের কংগ্রেসের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে কংগ্রেসের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের সংগঠনের নেতৃত্বে নিয়ে আসার প্রচেষ্টাও রয়েছে। এক্ষেত্রে সংগঠনের বাইরে থেকে কাউকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার গুঞ্জনও রয়েছে। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত কাদের হাতে সংগঠনের নেতৃত্বে আনা হয়, সেটা নিয়েও সব মহলে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। তবে এবারের ব্যতিক্রম হচ্ছে, বিগত সময়ে যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেসের আগে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন আগে হতো। কিন্তু ইমেজ সঙ্কটসহ নানা কারণেই এবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার কোন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। আজ জাতীয় কংগ্রেস শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। যুবলীগের নতুন কমিটি দ্রুতই ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের মাধ্যমে এ দুটি শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন। দেশের বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত যুবলীগের হাল কে ধরছেন, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, গুঞ্জন। এই অবস্থায় সংগঠনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় উঠে আসছে। আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশের নাম। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান কমিটির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান আতা ও এ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইনের কথাও আলোচনায় রয়েছে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীর সংখ্যা এক ডজন ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মঞ্জুর আলম শাহীন, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম, ফজলুল হক আতিক, ফারুক হাসান তুহিন, এমরান হোসেন খান, অর্থ সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু মনির মোঃ শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, সহসম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। এছাড়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদের আলোচনায় রয়েছেন বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকন, লিয়াকত সিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, এনআই আহমেদ সৈকতসহ অনেকেই।
×