ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সখীপুরে বিনাদোষে কালেজ ছাত্র নয়নের ২৭ দিন কারাভোগ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

সখীপুরে বিনাদোষে কালেজ ছাত্র নয়নের ২৭ দিন  কারাভোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ অবেশেষে টাঙ্গাইলের সখীপুরে একটি ধর্ষণ মামলায় নামে মিল থাকায় বিনাদোষে ২৭ দিন ধরে কারাভোগ করার পর কলেজ ছাত্র বাবুল হোসেন নয়ন (২৮) জামিন পেয়েছেন। আজ বুধবার দুপুর ১টার দিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সখীপুর-নাগরপুর আমলী আদালতের বিচারক আকরামুল ইসলাম তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। বাবুল হোসেন নয়ন সখীপুর উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের কোর্ট ইন্সপেক্টর তানবীর আহাম্মেদ বলেন, আইনজীবীদের জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তার জামিন আবদেন মঞ্জুর করেন। তার জামিননামা কারাগারে যাওয়ার পর আশা করছি নয়ন দ্রুত মুক্তি পাবেন। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে জেলার আবুল বাশার বলেন, জামিন নামা পাওয়ার পরেই নয়ন কারাগার থেকে বের হবেন। আশা করেছি বিকেলের মধ্যেই তিনি বের হতে পারবেন। বাবুল হোসেন নয়ন সরকারি মুজিব কলেজ থেকে চলতি ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার হয় নয়ন। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়া হয়নি নয়নের। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর সখীপুর উপজেলার পঞ্চম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রী বাসাইলের চাপড়াবিল এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। এর চারদিন পর টাঙ্গাইল ডিসি লেকের পাশ থেকে পরিবারের লোকজন ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। পরিবারের চাপে মেয়েটি নয়ন নামের এক ছেলের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিল বলে জানান। পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মেয়েটির মা বাদী হয়ে প্রতিবেশী শাহজাহান আলীর ছেলে বাবুল হোসেন নয়নকে আসামি করে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। পুলিশ নয়নকে গ্রেফতার করে মেয়েটির মুখোমুখি করলে মেয়েটি গ্রেফতার হওয়া বাবুল হোসেন নয়নকেই ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করে। এ সময় নয়ন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই ছাত্রীকে চিনেনা এবং কক্সবাজারে যায়নি বলে জোর দাবি করতে থাকে। মেয়েটির অনড় অবস্থানের কারণে নয়নকে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠালে আদালত পুলিশকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সখীপুর থানার এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, জেলগেটে জিজ্ঞাবাদের সময়ও নয়ন বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করছিল। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় অধিকতর গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু করি। মেয়েটির কাছ থেকে পাওয়া কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরে চলে তদন্ত। পরে ওই হোটেলে দেয়া মোবাইল নম্বর ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে মামলার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৭ অক্টোবর ঘটনার আসল হোতা নয়ন মিয়াকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই উপজেলার বাঘিল গ্রামের ফারুক ওরফে নূহু মিয়ার ছেলে। পরে গ্রেফতার হওয়া নয়ন মিয়া ওই ছাত্রীকে কক্সবাজারের একটি হোটেলে রেখে ধর্ষণ করেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে পরেই পের হয়ে আসে আসল ঘটনা। এ ঘটনার প্রকৃত আসামি গ্রেফতারের অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও কলেজছাত্র বাবুল হোসেন নয়নের মুক্তি না পাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে তার দ্রুত মুক্তির দাবি করা করা হয়েছিল।
×