ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাসহ সারাদেশে সতর্ক প্রহরায় ক্ষমতাসীন দল

প্রকাশিত: ০২:১৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঢাকাসহ সারাদেশে সতর্ক প্রহরায় ক্ষমতাসীন দল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রায়কে দিনভর ঢাকাসহ সারাদেশে সতর্ক প্রহরায় ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। বিএনপি-জামায়াত জোটের কেউ কোন ধরণের নাশকতা চালানোর সুযোগ না পায় সেজন্য অনেক স্থানেই মটর সাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়েছে সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে একমাত্র মগবাজার এলাকা ছাড়া রাজধানীর কোথাও বিএনপি-জামায়াত জোটের কোন নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানী জুড়েই নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবুও যে কোন ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ যাতে সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য জনগণের জানমাল রক্ষায় সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা ও পাড়া-মহল্লায় অস্থায়ী তাবু খাটিয়ে আবার কোথাও চেয়ার পেতে বসে সতর্ক অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়েও দলটির বিপুল সংখ্যেক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেও দেখা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় মটর সাইকেলের মহড়া দিতেও দেখা গেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা গেছে বহর নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রদক্ষিন করতে। এদিকে বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিতে থাকেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভীড় বাড়তে থাকে। মিছিলের ওপর নিষিদ্ধ থাকায় এসময় যুব মহিলা লীগের সদস্যরা হাতে ব্যানার নিয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে স্লোগাণ দিতে থাকে। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ প্রকাশ করে বিভিন্ন স্লোগাণ দিয়ে পুরো এলাকা মুখরিত করে রাখেন। রায়ের পর পরই ধানমন্ডির কার্যালয়ে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বিষয় নয়। এ রায়ে আওয়ামী লীগের সন্তুষ্ট বা অসুন্তুষ্ট হওয়ার বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণ আদালত ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিষয়। তবে রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। তিনি বলেন, এতদিন বলে আসছিলাম যে তারা দুর্নীতি করেছে। এখন তা প্রমাণিত হয়েছে। তারা যে সব সময় অস্থিতিশীল রাজনৈতিক চিন্তায় বিশ্বাস করে রায়ের দিনেও তা প্রমাণ দিয়েছে। তারা রায়ের প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করতে বিশৃংখলা করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আইনশৃঙখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের দৃঢ় পদক্ষেপের কারনে তারা সফল হতে পারেনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুকুল বোস, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমূখ। অন্যদিকে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগি ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের পদচারণায় ছিল মুখরিত। তবে নিষিদ্ধ থাকায় কেউ কোন মিছিল বের না করে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করে। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শত শত নেতকর্মী উল্লাসে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন স্লোগাণের মাধ্যমে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ধুঁয়ো ধ্বনি দিতে থাকেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে চারিদিকে কড়া নজর রাখেন। রায় ঘোষণার পর সেখানে উপস্থিত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত তাঁর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের কাছে বলেন, এই রায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আইনের উর্ধ্বে কেউ থাকতে পারে না। বিচারে কেউ মাফ পেতে পারে না। এই বিচারের রায়ের মধ্যে দিয়ে আগামীতে কেউ দুর্নীতি করতে গেলে ভয় পাবে। দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে দেশে যে আইনের শাসন রয়েছে তা আবারও প্রমাণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ মাঠে আছে, আগামীতেও থাকবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি যদি সন্ত্রাস-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে আওয়ামী লীগ তা প্রতিহত করবে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে থেকেই সহযোগিতা করবো। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রায়কে ঘিরে কোন ধরনের অশান্তি হতে দেয়া যাবে না। আমরা যার যার অবস্থান থেকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি। কেউ জ্বালাও পোড়াও করলে আমরা প্রতিরোধ করবো। বসে থাকবো না। আমরা মাঠে আছি। এজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। ঢাকা মহানগরীর কোথাও বিএনপি-জামায়াত জোটের কোন তৎপরতা দেখা না গেলেও আদালতে যাওয়ার পথে মগবাজার এলাকায় খালেদা জিয়ার গাড়ির বহর থেকে নানা উস্কানীমূলক স্লোগাণ দিতে থাকলে সেখানে সতর্ক অবস্থানে থাকা ওয়ার্ড ও থানার নেতারা ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সামান্য ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ এ্যাকশনে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া আর কোথাও কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
×