ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আটকে গেল এলজিইডির ১৫কিমি বেড়িবাঁধের কার্পেটিং

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

আটকে গেল এলজিইডির ১৫কিমি বেড়িবাঁধের কার্পেটিং

*সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ শেষ *শুরু পাউবোর বাঁধ পুনরাকৃতিকরন কাজ *ক্ষতির শঙ্কায় পাকাকরন ৫০কিমি বাঁধ মেজবাহউদ্দিন মাননু, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ দুর থেকে দেখেই বোঝা যায় পাকা রাস্তাটি মাটির রাস্তার চেয়ে কতটু নিচু। একই বেড়িবাঁধ। পশ্চিম মধুখালী গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রন এই বেড়িবাঁধ এখন মেরামত তথা পুনরাকৃতিকরনের কাজ চলছে। ওই একই বাঁধের উপরে প্রায় দেড় কিমি অংশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সম্প্রতি কার্পেটিং করেছে। কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধটি কতটুকু উচু থাকবে এটির বাস্তবতা নিরুপন না করেই পাকাকরনে এখন ঘটেছে বিপত্তি। এখন মাটির বাঁধ উচুকরে এলাকায় জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ করা গেলেও পাকাকরন বাঁধ উপচে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে মানুষের জীবন ও সম্পদ জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়ে গেল। অথচ পাউবো এবং এলজিইডি দুই মন্ত্রণালয়ের অর্থই ব্যয় হলো। কিন্তু মূল উদ্দেশ্য সাধিত হয়নি। এক কথায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়াই সমন্বয়হীন উন্নয়ন করা হয়েছে। দীর্ঘ দশ বছরে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কলাপাড়ায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পাকা (কার্পেটিং) করেছে। জনস্বার্থে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই বেড়িবাঁধ কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু ডিজাইন ঠিক না রেখে পাকাকরনে বাঁধের এই সড়ক উন্নয়ন ভেস্তে গেছে। এখন কার্পেটিং করা বাঁধও উচু করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ২০০৬ সালের ১০ জুলাই এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে পাউবোর অনাপত্তি পত্রের মাধ্যমে বাঁধরাস্তা কার্পেটিং শুরু করে এলজিইডি। কিন্তু ১০ বছরের ওই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন অনাপত্তিপত্র দেয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে একদিকে বর্তমান অর্থবছরে এলজিইডির টেন্ডার দেয়া অন্তত ১৫ কিলোমিটার বাঁধসড়কের নতুন কার্পেটিংএর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে বাঁধের পুনরাকৃতিকরনের কাজ শুরু করায় বিগত ১০ বছরে কার্পেটিং করা আরও প্রায় ৫০ কিমি রাস্তা ভেঙ্গে ফেলার উপক্রম হয়েছে। ফলে অন্তত ১০ কোটি ব্যয় এলজিইডির কার্পেটিং করা বাঁধরাস্তা ফের উচু করতে গেলে গচ্চা যাবে সরকারের অর্থ। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারনে বাঁধ উচুকরন নিশ্চিত করতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে এমন জটিলতায় কলাপাড়ায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ কার্পেটিংকরনের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে পুরনো প্রায় ৫০ কিমি কার্পেটিং করা বেড়িবাঁধের কী হবে তাও অনিশ্চিত। কারন ইতোমধ্যে পাউবোর স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস থেকে অনাপত্তিপত্র প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। অভিজ্ঞমহল এবং প্রবীণ মানুষের মতামত, এলজিইডি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথ উদ্যোগে যদি বাঁধের ডিজাইন ঠিক রেখে তারপর কার্পেটিং করত তাইলে সরকারের অর্থ গচ্চা যেতনা। জানা গেছে, পাউবোর অধীনে ষাটের দশকে করা কলাপাড়ায় অন্তত তিন শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অধিকাংশ মাটিরক্ষয়সহ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুর্বের ডিজাইন ঠিক নেই। উচ্চতাসহ টপ এবং বটমের স্লোপসহ সবকিছু ক্ষয়ে-ধুয়ে জীর্ণদশা হয়ে গেছে। এমনিতেই বাঁধের উচ্চতা নতুন করে বৃদ্ধিকরনের কার্যক্রমও শুরু করেছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। সাগর পার ঘেঁষা বেড়িবাঁধের উচ্চতা অন্তত দুই মিটার, নদীঘেঁষা বাঁধের উচ্চতা অন্তত এক মিটার উচু করন কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ব্লু-গোল্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুনরাকৃতিকরন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আরও ৬৫ কিমি বেড়িবাঁধ উন্নয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার মধ্যে কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া ৩৯ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের উন্নয়নে দুই মিটার উচুকরনসহ কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দ হয়েছে। সেখানেও ইতোপুর্বে এলজিইডির কার্পেটিং করা অন্তত ১৫ কিলোমিটার সড়ক ভেঙ্গে দিতে হচ্ছে। স্থানবেধে এলজিইডির পাকাকরন বেড়িবাঁধে ৩০-৪০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে ১০ বছর আগে এ সংক্রান্ত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও ছিল। তখন বাঁধের ডিজাইন ঠিক রাখতে আগে বাঁধের পুনরাকৃতিকরনের কাজ করলে সরকারের এই কোটি কোটি টাকা গচ্চা যেত না। বর্তমানে নতুন করে বেড়িবাঁধ কার্পেটিংএর কাজের জন্য নতুন করে সমঝোতা স্মারক হওয়া প্রয়োজন। তবে সেক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যেসব বাঁধ পাউবো পুনরাকৃতিকরনের কাজ সম্পন্ন করেছে ওই বাঁধের কার্পেটিংএর কাজ এলজিইডির আগে করতে হবে। এছাড়া যেকোন বেড়িবাঁধ কার্পেটিং করলে বাঁধের ডিজাইন ঠিক রেখে উন্নয়ন করা প্রয়োজন। নইলে সরকারের দুই বিভাগের অর্থই বিফলে যাবে। মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সমন্বিত এই পদক্ষেপ অচিরেই গ্রহণ করা না হলে সাগরপাড়ের জনপদের মানুষ যেমন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকালীন সময় অনিরাপদ হয়ে পড়বে। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও থমকে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন মতামত সকল মানুষের। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সমন্বিত তড়িত পদক্ষেপ নেয়া না হলে সাগরপাড়ের দুর্যোগের গ্রাসে থাকা কলপাড়ার মানুষের জীবন-সম্পদ রক্ষায় সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করে ফের বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি করেছেন কলাপাড়ার ইউপি চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী হেমায়েত উদ্দিন হিরন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের এবং এলজিইডির কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান জানান, সংশ্লিষ্ট দুই ডিপার্টমেন্টের উপরমহলের নির্দেশনা না পেলে তাদের আপাতত করার কিছুই নেই। তবে এনিয়ে যোগাযোগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
×