ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট ॥ যাত্রীদের বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০১:২৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট ॥ যাত্রীদের বিড়ম্বনা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৭ ঘন্টাব্যাপী ১৫ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এ যানজট নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনরোর্ড থেকে সোনারগাঁয়ের মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে বলে যানজটে আটকেপড়া যাত্রীরা জানান। যানজটের কারণে দুরপাল্লার শত শত যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন রাস্তায় আটকা পড়লে হাজার হাজার যাত্রীর নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অবশ্য কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি ও সোনারগাঁও থানার ওসি যানজটের কথা স্বীকার করে জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ও মেঘনা ব্রিজে ধীর গতিতে টোল আদায় করায় এ যানজটের সূত্রপাত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজ, কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড, মদনপুর ও মেঘনা ব্রিজ এলাকায় থেকে যানজটের সূত্রপাত হয়। যানজটে আটকে পড়া যাত্রীরা জানান, এ যানজট ধীরে ধীরে মেঘনা ব্রিজ হতে মোগরাপাড়া, লাঙ্গলবন্দ, মদনপুর, নয়াপুর, কাঁচপুর, শিমরাইল, মৌচাক, সানারপাড় ও সাইনেবোর্ড এলাকায় ছড়িয়ে। ফলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় ১৮টি জেলার প্রধান ৩৩টি রুটের দুরপাল্লার যাত্রীবাহীবাসসহ শত শত যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। এতে যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় আটকে পড়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে বাধ্য হয়। রাতে যানজট নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করলেও যানজট দুর করতে ব্যর্থ হয়। এ যানজট মেঘনা ব্রিজের উভয় পার্শ্বে ও নারায়ণগঞ্জ অংশে ১৫ কিলোমিটার রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। কুমিল্লার যাত্রী আব্দুস সালাম জানায়, সকাল ৮টায় সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় এসে যানজটের কবলে পড়তে বাধ্য হই। শিমরাইল মোড় পৌঁছতে ২ ঘন্টা সময় লেগেছে। অথচ শিমরাইল মোড়ে মাত্র ৫-৭ মিনিটেই পৌঁছা যায়। চট্টগ্রামের যাত্রী আবু খান জানান, তিনি শুক্রবার ভোরে সায়েদাবাদ থেকে গাড়িতে উঠেন। গাড়ি একটু চলাচল করে আবার আধঘণ্টা থেমে থেমে চলতে থাকে। এই অবস্থায় সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল মোড়ে পৌঁছলে তারও ৩ ঘন্টা সময় লেগেছে। অপর দিকে কুমিল্লা থেকে আগত যাত্রী নিজামউদ্দিন জানান, ভোর ৬টায় তারা স্টার লাইন পরিবহন করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে শিমরাইল মোড় পৌছায় দুপুর ১২টায়। এভাবেই যাত্রীরা দীর্ঘ ১৭ ঘন্টা যানজটের বিড়ম্বনায় পড়ে মুল্যবান সময় অচপয় করতে হয়েছে। স্বদেশ পরিবহনের যাত্রী আবুল কাসেম বলেন, তীব্র যানজটে দীর্ঘক্ষই বাসে বসে থাকতে হয়েছে। গুলিস্তান থেকে সোনারগাঁ আসতে ৪০ মিনিটের পথ। কিন্তু দীর্ঘ ৪ ঘন্টা সময় পার করে সোনারগাঁ আসতে হয়েছে। শিমরাইলে কর্মরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে এ মহাসড়কে যানজট শুরু হয়। বিজয় দিবস, ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজ ছুটি হওয়ায় লোকজন পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটছে। তাই অতিরিক্ত চাপের কারণে এ যানটজ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও যাত্রাবাড়ি থেকে মহাসড়কটি আট লেন কাঁচপুর ব্রিজ হয়ে উঠেছে দুই লেনে। তাই ব্রিজের উপর যানবাহন উঠতে গিয়ে যানজটের সূত্রপাত হয়। অপর দিকে মাঝে মধ্যে রাস্তায় যানবাহন বিকলতো হচ্ছেই। তিনি শুক্রবার বিকেলে জানান, এখন যানজট কমে আসছে। এ এলাকায় মাদানীনগর পর্যন্ত যানজট অব্যাহত রয়েছে। যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে। সোনারগাঁও থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে সোনারগাঁয়ে অংশে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সারা রাত সারা দিন যানজট অব্যাহত ছিল। যানজটের কারণে মানুষজন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মেঘনা ব্রিজে ধীর গতিতে টোল আদায় করায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি (ওসি) শুক্রবার বিকেলে সাড়ে ৪টায়ও রাস্তায় যানজট অব্যাহত থাকার কথা স্বীকার করেন। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোঃ কায়ুম আলী সরদার জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে রাস্তায় যানজট। আমি এখানে যোগদান করার পর রাস্তায় এমন অবস্থা আর কখনও দেখিনি। রাস্তায় যানজটের প্রচন্ড চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় কাঁচপুর ব্রিজ ও মেঘনা ব্রিজ লোড নিতে পারছে না। অতিরিক্ত গাড়ির কারণ মেঘনা ব্রিজে ধীর গতিতে টোল আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও যানবাহন চালকদের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার বিকেলেও এ যানজট অব্যাহত ছিল। এ যানজট মেঘনা ঘাট থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
×