ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে ঘুমন্ত হিন্দু দম্পতিকে হত্যার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০১:৩০, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

বাগেরহাটে ঘুমন্ত হিন্দু দম্পতিকে হত্যার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের চিতলমারীতে এবার ঘুমন্ত এক হিন্দু দম্পতিকে হত্যার জন্য বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনে বসত এবং রান্নাঘরসহ এই দম্পতির টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, চাল-ডাল, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ সব মালামাল সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত হয়ে গেছে। মঙ্গলবার আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে উপজেলা সদরের আরুলিয়া গ্রামের ঋষিকেশ মন্ডলের বাড়িতে নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। আগুনে পাশ^বর্তি সুনীল মন্ডলের রান্নাঘরটিও পুড়ে যায়। তবে ঋষিকেশ মন্ডল ও তার স্ত্রী শেফালি রাণী মন্ডল প্রতিবেশীর সহায়তায় দরজা ভেঙ্গে বাইরে বের হয়ে আসায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। প্রতিপক্ষরা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই আগুন দিয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ দম্পতি অভিযোগ করেছেন। বসতঘর পুড়ে যাওয়ায় এ পরিবারটি এখন খোলা আকাশের নিচেই বসবাস করছে। বুধবার সকালে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ ক্ষতিগ্রস্থ ঋষিকেশের বাড়ি পরিদর্শন করে ঘর তৈরির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে চার বান্ডিল ঢেউটিন দিয়েছেন। চিতলমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন দিয়েছেন নগদ দশ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ ঋষিকেশ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ফারুক শেখ ও নরেশ গোসাইয়ের সঙ্গে আমার জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। তারা আমাকে আমার ভিটামাটি থেকে উৎখাত করতে পাঁচটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তার মধ্যে আমি তিনটায় বেকসুর খালাস পেয়েছি, আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। প্রতিদিনের মত আমি ও আমার স্ত্রী রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত আমার বাড়িতে ঢুকে আমার ঘরে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। আগুন দেখতে পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে দরজা ভেঙ্গে বাইরে আসতে চেষ্টা করি। একপর্যায়ে আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে। আগুনের আমার দুটি ঘর ও আমার কাকাতো ভাই পাশের সুনীল মন্ডলের একটি ঘর সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত হয়ে গেছে। এতে আমার অন্তত দশ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার প্রতিপক্ষ ফারুক ও নরেশ বিভিন্ন সময় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। তারা পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করতে দরজায় তালা দিয়ে ঘরে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ তার। চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ ঋষিকেশ মন্ডলের বাড়ি পরিদর্শন করেছি। বসতঘর তুলতে তাকে চার বান্ডিল টিন দেওয়া হয়েছে। তার বাড়িতে কারা এই আগুন দিয়েছে তা তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিতলমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ ঋষিকেশকে নগদ দশ হাজার টাকা সাহায্য দেওয়া হয়েছে। তার সাথে স্থানীয় ফারুক ও নরেশের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে কি না তদন্ত করতে পুলিশের কাছে দাবী জানান তিনি। চিতলমারী থানার ওসি অনুকুল চন্দ্র বলেন, কারা এই বাড়িতে আগুন দিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই অপরাধীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে ফারুক শেখ ও নরেশ গোসাই এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
×