ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোর উত্তরা গণভবনের গাছ কর্তন ॥ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দাখিল

প্রকাশিত: ০১:০৮, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

নাটোর উত্তরা গণভবনের গাছ কর্তন ॥ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দাখিল

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ নাটোরের উত্তরা গণভবনের ভিতরে ঝড়ে পড়া এবং মরা গাছের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার শত বছরের তাজা গাছ কাটার অভিযোগে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপসহকারী পকৌশলী , এসও এবং দুইজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং ঠিকাদারসহ ৬জনকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী করে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন তদন্ত কমিটি। সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তদন্ত কমিটি এই রিপোর্ট জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের হাতে তুলে দেন। গত ১৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীর সহায়তায় ঠিকাদার কর্তৃক উত্তরা গণভবেনর শতবর্ষী ১৫/২০টি গাছ কেটে নেওয়ায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিতে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজ্জাকুল ইসলামকে প্রধান করে এবং নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) অনিন্দ্য কুমারকে সদস্য সচিব এবং নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম, নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আকতার বানু এবং র্যাবের ভারপ্রাপ্ত ক্যাম্প কর্মকর্তা শেখ আনোয়ার হোসেনকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই নির্দেশনা অনুযাযী তদন্ত কমিটি গত সোমবার তাদের রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দেন। তদন্ত কমিটি প্রধান রাজ্জাকুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটি সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, গাছ কাটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবান বন্দী রেকর্ড গেটে কর্তব্যরত আনসার ও পুলিশ সদস্য এবং সিসিটিভির ক্যামেরায় ধারণ কৃত ভিডিও পর্যালোচনা করে সতর্কতার সাথে তদন্ত রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, তদন্ত রিপোর্টে অবৈধ ভাবে গাছ কাটার বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান আকন্দ, ঠিকাদার সোহেল ফয়সাল এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুস সবুরকে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, এসও কামরুজ্জামান , কেয়ারটেকার আবুল কাসেমকে দায়িত্ব অবহেলার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গণভবনের সামনে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, গণভবনের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং উত্তরা গণভবন নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসককে অধিকতর ক্ষমতা প্রদান করার সুপারিশসহ ৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট প্রেরণ এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা দায়ের সহ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসন ও গণভবন সংশ্লিস্ট সুত্র জানায়, উত্তরা গণভবনের চারপাশের লেকের ধারে শতবছরের অন্তত তিন’শ প্রজাতির আম গাছ রয়েছে। এছাড়া মেহগনি, নারিকেল, কাঠ বাদাম সহ আরো পাঁচ শতাধিক গাছ রয়েছে লেকের ধারে। সম্প্রতি ঝড়ে এবং মরে যাওয়া দুটি আম, একটি মেহগনি সহ বেশ কিছু গাছের ডালপালার ইজারা আহবান করে স্থানীয় গনপুর্ত বিভাগ। পরে বনবিভাগের কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ওই কয়েকটি গাছ এবং ডালপালার মূল্য নির্ধারণ করে মাত্র ১৮হাজার ৪’শ টাকা। পরে পরে সবোর্চ্চ দরদাতা হিসেবে স্থানীয় যুবলীগের সোহেল ফয়সাল নামের এক ঠিকাদার ১৮হাজার ৪'শ টাকার বিনিময়ে গাছগুলো ক্রয় করেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে গণপূর্ত বিভাগের কিছু অসাধূ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহযোগিতায় টেন্ডার নেওয়া গাছের পাশাপাশি আরো ১৫ থেকে ২০টি তাজা গাছ কর্তন করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য অন্তত ১০ থেকে ১৫লাখ টাকা। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ গাছেরগুড়ি ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র।সংবাদ পেয়ে ১১ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এনডিসি অনিন্দ কুমার ঘটনাস্থলে গিয়ে কাটা গাছের কিছু গুড়ি আটক করেন।এ বিষয়ে গণ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে গত ১৭ অক্টোবর গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় গণপূর্ত বিভাগের দুইজন কর্মকর্তাসহ ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রহণ করে তা অুনমোদনের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রেরন করেন। কিন্তু সে অনুমোদন এখনও পাননি নাটোরের জেলা প্রশাসক। নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, পদাধিকার বলে আমি উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। কিন্তু গণভবনের ভিতরে গাছ কাটার টেন্ডার দেয়ার বিষয়ে গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে অবগত করেননি। পরে আমি খবর পেয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট পাঠিয়ে গাছকাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। মঙ্গলবার আমি নিজেসহ গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা এবং গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা সরজমিনে পরিদর্শন করেন। এরপর গাছ কাটার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এখন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×