ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুরে কলা চাষীদের সুদিন

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

মেহেরপুরে কলা চাষীদের সুদিন

সংবাদদাতা, মেহেরপুর ॥ একবার চারা রোপন করে ২৪ মাসে ৩ বার ফলন পাওয়া যায়। চলতি বছরে মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলার কলা চাষীদের সুদিন বইছে বলে অনেকে মনে করছেন। মাটি ও আবহাওয়া কলা চাষের উপযুক্ত তাই দিন দিন মেহেরপুরে কলার আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুরের এই কলা চাষের সাথে ব্যবসায়ী ও পরিবহনের সাথে জড়িত রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। জেলার মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, দারিয়াপুর, গৌরিনগর, পুরন্দরপুর, গোপালনগর, বাগোয়ান, আনন্দবাস, মহাজনপুর, গোপালপুর, কোমরপুর ও যতারপুর এবং মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর, আমদহ, চকশ্যামনগর, আশরাফপুর, নূরপুর, পিরোজপুর, টুঙ্গী, কাঁঠালপোতা, সোনাপুর, বলিয়ারপুর, গহরপুর, কলাইডাঙ্গা, যুগিন্দা, রাজনগর, আমঝুপি ও চাঁদবিল গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমান কলার চাষ হয়েছে । অন্যদিকে গাংনী উপজেলার কিছুকিছু মাঠেও কলার চাষ শুরু হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের হিসেব মতে গেল মৌসুমে জেলায় কলা চাষ হয়েছে এক হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে। এমৌসুমে এক হাজার ৫শত হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। আগামীতে মৌসুমে ২ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে জেলা কৃষি বিভাগের ধারনা। মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের চাষি আতাউর রহমান জানান, প্রথমদিকে গ্রামের মাঠের একবিঘা জমিতে কলা চাষ করেছিলেন। ভালো লাভ হওয়ায় পরে আবারো দুই বিঘা জমিতে কলার চাষ শুরু করেন বলে জানান। এরপর থেকে তিনি কলার আবাদ প্রতিবছরে করে থাকেন। তিনি আরো বলেন- প্রতি বছরের পৌষ মাসে কলার চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময়। মাঘ মাসে কলার চারা জমিতে লেগে গেলে একটি সেচ দিতে হয়। মাটি ঝরঝরে হলে জমি কুপিয়ে দিতে হবে। এরপর গাছের গোড়া থেকে বের হওয়া চারা কেটে দিতে হবে। এভাবে একটু যতœ আর গোবাদী পশুর আক্রমন ও কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে চাষির মুখে হাসি ফুটবে। তিনি আরো জানালেন, এক বিঘা জমিতে কলার চাষ করতে প্রথম বছরে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিবিঘা জমিতে প্রতি বছর ৪শত থেকে সাড়ে ৪শত কাঁদি কলা পাওয়া যায়। যা থেকে পাইকারী মূল্যে বিক্রি করলে এবং দাম ভালো পেলে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে ২ বছরে মোট ৩ বার কলা পাওয়া যাবে। মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সুমন হোসেন জানান, কলা চাষে কম প্ররিশ্রমে ও কম খরচেই অধিক লাভ হওয়া ও জমি থেকে ব্যবসায়ীরা কলা ক্রয় করায় দিনদিন কলা চাষে ঝুকছে আমাদের এলাকার চাষিরা। তাছাড়াও জেলা থেকে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মেহেরপুরের এ কলার চাহিদা থাকায় বর্তমানে এ জেলা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক ও আলমসাধুসহ বিভিন্ন যান বহনে করে কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। সাতক্ষীরা থেকে আসা ব্যবসায়ী সুবিদ আলী জানান, মেহেরপুরের কলার চাহিদা সাতক্ষীরা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। তিনি মেহেরপুর থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৪ ট্রাক করে কলা কিনে সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান। কুষ্টিয়ার ভেড়ামাড়া উপজেলার কলা ব্যবসায়ী জিনারুল ইসলাম জানান, মেহেরপুরের মেহের সাগর কলার ভালো চাহিদা থাকায় প্রতিদিনই তিনি দুই থেকে তিন বার আলমসাধু করে করা নিয়ে যান। তার ভেড়ামাড়া বাজারে নিজের আড়ত আছে সেখান থেকে বিক্রি করে পাশাপাশি পাইকারী গাড়ি প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ করে বিক্রি করেন। মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম কামরুজ্জামান জানান, কলা চাষ লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরের চাষিরা কলা চাষ করছেন। তিনি আরো বলেন- মেহেরপুরে মেহের সাগর, দুধসর, সবরে, চাপা, চিনিচাঁপা, বাইস ছড়ি সহ বিভিন্ন ধরনের পাকা কলার চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষিবিভাগ রান্না করে খাওয়ার জন্য উন্নত জাতের কাঁচকলা চারা সরবরাহ ও চাষ করার জন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছেন। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কলা চাষে আমরা সব ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি একই জমিতে দুই অথবা তিন বছরের বেশী সময়ে কলার চাষ না করতে চাষীদের পরামর্শ দিচ্ছি। এতে জমির উর্বরতা শক্তি মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়বে। আমরা দুই বছর কলার চাষ ও পরের বছরে আবার অন্য যে কোন সবজি আবাদের পর আবারো কলার চাষ করলে জমির ক্ষতি হবে না বলে চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
×