ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে

প্রকাশিত: ০০:২৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কুষ্টিয়ায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া ॥ দফায় দফায় চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ চালকল সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি কুষ্টিয়ার আব্দুর রশীদ ও বায়জীদ বিশ্বাসের মত বড় বড় চালকল মালিকরাই দায়ী। তারাই মৌসুমের শুরুতে কম মূল্যে দেশের বেশির ভাগ ধান কিনে মজুদ গড়ে এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এবার এমন অভিযোগ তুললেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের ছোট ছোট চালকল মালিকরা। মঙ্গলবার খাজানগর মোকাম ঘুরে ছোট (হাস্কিং) চালকল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়ার আব্দুর রশীদ ও দৌলতপুরের বায়জীদ বিশ্বাসের মত বড় বড় চালকল মালিকরা চাইলে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকার ঋণ পান। তারা এই ঋণের টাকায় বোরো মৌসুমে ধান কাটা শুরু হলেও সারাদেশের মোকাম থেকে লাখ লাখ টন ধান কিনে গুদামজাত করে। নিজস্ব চালকল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা এসব ধান গুদামজাত করে রাখে। গত বোরো মৌসুমেও ওই চালকল মালিকরা ব্যাংক ঋণের সুবিধা নিয়ে বিপুল পরিমান ধান কিনে গুদামে মজুদ রেখেছেন। বড় বড় চালকল গুলো এই ধানেই বছরের ৭-৮ মাস মিল চালু রাখে বলে ক্ষুদ্র চালকল মালিকরা জানান। এবার এসব ধান তারা ৮০০-৯০০ টাকা মণ দরে কিনে থাকেন বলে ক্ষুদ্র চালকল মালিকরা জানান। ক্ষুদ্র চালকল মালিকদের অভিযোগ আব্দুর রশীদ ও বায়জীদ বিশ্বাসের মত চালকল মালিকরা এখন সেই ধান থেকেই চাল উৎপাদন করছেন। তারা বলেন, কৃষকের ঘরে এখন কোন ধান নেই, কারণ কৃষকরা ধান কাটার পর নিজেদের খাবারের জন্য যেটুকু দরকার সে পরিমাণ রেখে বাকি ধান বিক্রি করে ফেলেছে। সে কারণে এখন বাজারে ধানের দাম চড়া। তাই এখন বাজার থেকে চড়া দামে ধান কিনে চাল প্রস্তুতের ফলে দাম বেশি পড়ছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন খাজানগর মোকামের ক্ষুদ্র চালকল মালিকরা। ওই মোকামের মরিয়াম রাইচ মিলের মালিক রহিচুল ইসলাম ঝন্টু বলেন, খাজানগরে ছোট-বড় মিলে ৫০০ চালকলের মধ্যে মাত্র ৩০টি বড় অটো চালকল। তবে এখন চালের ব্যবসা তাদের সবার হাতে নেই। চাল ব্যবসা কুক্ষিগত করে ফেলেছে অটো চালকল মালিকরা। কারণ, ছোট চালকল মালিকদের পুঁজিকম, তারা ব্যাংক ঋণ চাইতে গেলেও সময় মত পাননা। আবার অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ঋণ পেলেও টাকার অংক খুবই কম। তাই বোরো মৌসুমে যখন ধান ওঠে তখন তারা চাহিদা মত ধান কিনতে পারেননা। তিনি বলেন, অটো চালকল মালিকরা চাইলে শত শত কোটি টাকা ঋণ পান। তারা সেই টাকায় ইচ্ছে মত কিনে গুদাম ভরেন। ঝন্টু বলেন, শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চালকল মালিকরা কোন কাজে ব্যবহার করছেন সরকার যদি সেটা খতিয়ে দেখতো তাহলে এ অবস্থা হত না। তাদের সবার হাতে চালের ব্যবসা থাকলে কেউ ইচ্ছে মত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না। আল হেলাল রাইস মিলের মালিক আব্দুল হালিম বলেন, চালের বাজার কুষ্টিয়ার আব্দুর রশীদ, বায়েজীদ বিশ্বাস, যশোরের মজুমদার ও নওগাঁর মোজাম্মেলের মত ৮-১০ জন অটো চালকল মালিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। কারণ ওই গুটিকয়েক চালকল মালিক গত বোরো মৌসুমে লাখ লাখ টন ধান কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুদামজাত করে রেখেছেন। ওই চালকল মালিকরা চাইলেই যে কোন সময় চালের দাম বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারেন বলে আব্দুল হালিম দাবী করেন। তিনি বলেন পুঁজির অভাবে তার মত ছোট মিল মালিকরা ব্যবসা করতে পারছেন না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমত চালের দাম বাড়িয়ে বিপুল অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন হাতে গোনা কজন চালকল মালিক। এই মোকামে চালের দাম কিছুটা কমেছে বলে জানান, নারায়নগঞ্জ থেকে চাল কিনতে আসা ব্যাপারী আব্দুস সাত্তারও। এদিকে, কুষ্টিয়ার খাজানগরে বাংলাদেশ চালকল সমিতির কেন্দ্রিয় সভাপতি আব্দুর রশীদ ও বায়জীদ বিশ্বাস এগ্রোফুড চালকলে অভিযানের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ চালের মোকামে চালের দাম কেজি থেকে দেড় টাকা থেকে ২ টাকা কমেছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে স্থানীয় খুচরা বাজারে এখনও তার কোন প্রভাব পড়েনি। তবে বিভিন্ন মোকামে অন্যদিনের তুলনায় ব্যাপারীর (ক্রেতা) সংখ্যাও কম লক্ষ্য করা গেছে। চালকলে অভিযানের পর থেকে মজুদদার চালকল মালিকদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা মুজদ করা ধান ও চাল রাতের আঁধারে সরিয়ে নিচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। খাজানগরের আলিফ মিমি এগ্রো ফুডের মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের মোকামে মিনিকেটসহ সব ধরণের চালের দাম কেজিতে দেড় থেকে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। তবে মোকামে অভিযানের ফলে অনেকেই আতঙ্কে আছেন। এই কারণে ব্যাপারীর সংখ্যাও কমে গেছে। তবে খুচরা বাজারে এই প্রভাব এখনো পড়েনি। ২-৩ দিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও চালের দাম কমবে বলে তিনি জানান। অপরদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভীর রহমান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলার বিভিন্ন রাইস মিলে চাল বা ধানের অতিরিক্ত মজুদ আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে বাজারে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
×