ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদের কাছেই ৪টি!

নওগাঁর মান্দায় ৩১ টি ইট ভাটfর মধ্যে ২১টিরই লাইসেন্স নেই

প্রকাশিত: ০০:১৩, ১৯ আগস্ট ২০১৭

নওগাঁর মান্দায় ৩১ টি ইট ভাটfর মধ্যে ২১টিরই লাইসেন্স নেই

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ পাঁচটা বা দশটা নয়, একেবারে ৩১ টি। আরো হতে চলেছে। রীতিমত প্রকাশ্যে কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই। এমন কি প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় গড়ে উঠেছে কৃষি জমিতে এমনই অনেক ইটভাটি। এমনকি বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটে মুদ্রিত ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক কুশুস্বা মসজিদের আশেপাশেই গড়ে তোলা হয়েছে ৪টি ইটভাটি। বছরের পর বছর জুড়ে চলছে এই ভাটিগুলো। উপজেলা জুড়ে ১০ টি ভাটির বৈধতা থাকলেও বাঁকিগুলোর কোন বৈধতা নেই। এর মধ্যে আবার ২টি ভাটির মালিক আদালতের আশ্রয় নিয়ে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ইট ব্যবসা। শুধু তো কুশুম্বা মসজিদ নয়, মসজিদ সংলগ্ন রয়েছে ১টি মাদ্রাসা, ১টি সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় ও ১টি উচ্চ বিদ্যালয়। প্রশ্ন উঠেছে, এমন স্থানে ভাটিগুলো স্থাপনের সুযোগ পায় কি ভাবে ? এছাড়া গ্রামের মাঝে কৃষি ক্ষেতেও রয়েছে এমন অনেক ইট ভাটি। সরেজমিন নওগাঁ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইট ভাটির ছড়াছড়ি। একটি উপজেলায় এতোগুলি ইটভাটি দেখে যে কারো মনেই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। আসলে বিষয়টি প্রশাসনের ‘বজ্র আটুনি ফসকা গিরো’র কারণেই এতোগুলো ভাটি গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এইসব প্রয়াসে দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে ইটভাটির সংখ্যা। অভিযোগ কে করবে? ভাটির মালিক সবাই টাকাওয়ালা প্রভাবশালী এবং কোন না কোন রাজীনতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যাদের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা তো নিতান্তই প্রান্তিক কৃষক। এখন বর্ষাকাল, তাই ইট ভাটিগুলোর কাজ নেই। তবে চলছে ছেড়ে আসা মৌসুমে প্রস্তুতকৃত ইট বেচা-কেনা। কুশুম্বা মসজিদের কাছাকাছি প্রায় ৪টি ইটভাটি রয়েছে। মেসার্স সীমানা ব্রীকস্ একেবারে বুকের ওপড়। এই ভাটির কাছেই রয়েছে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইটভাটির পিছনেই খেলার মাঠ। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত খেলাধূলা করে। কুশুম্বা সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়, কুশুম্বা মাদ্রাসা ও কুশুম্বা ডি,পি,বি উচ্চ বিদ্যালয়। ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একবারে পাশাপাশি। প্রধান শিক্ষক না থাকায় কথা হয় কুশুম্বা ডি,পি,বি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক লাল মোহাম্মদ শাহর সঙ্গে। কিছুটা রাখঢাক করে তিনি বলেন, ভাটি চললে ধোঁয়া, ছাই নিয়ে একটু সমস্যা তো হয়ই। আমাদের স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৭৩ সালে। ভাটি চলছে বছর ৪/৫ হবে। ইটভাটি তৈরীর সময় আপনারা প্রসাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি এর কোন উত্তর দেননি। নওগাঁ জেলা প্রসাশকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, মান্দা উপজেলার ইট ভাটির সংখ্যা ৩১ টি। এরমধ্যে ১০টি ভাটি অনুমেদিত (লাইসেন্সপ্রাপ্ত)। মেসার্স আর এন ব্রীকস্ ও মের্স্সা হিরো এন্টারপ্রাইজ ১২০ ফুট স্থায়ী চিমনীর ভাটি পরিচালনার জন্য হাইকোর্টে রিট করে চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ইতোমধ্যে তাঁদের রিটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কুশুম্বায় ৪টি ইটভাটির মধ্যে শুধূমাত্র নাসিমা ব্রীকস এর লাইসেন্স রয়েছে। বাঁকী ৩টির নেই। অপর ৯টি মেসার্স হাজেরা ব্রীকস্, মান্দা ব্রীকস্, কেকে ব্রীকস্, চৌধুরী ব্রীকস্, নূরজাজান ব্রীকস, শাপলা ব্রীকস্- ১ ও ২, শাপলা ব্রীকস-৩, পিএম ব্রীকস্ ও এন এম এস ব্রীকস লাইসেন্সপ্রাপ্ত। অপর ২১ টি লাইসেন্স ছাড়াই তাদের ভাটির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েকজন ইটভাটি মালিকের নম্বরে কল করলেও তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। কুসুম্বা মসজিদের নিকটে অবস্থিত সীমানা ব্রীকসের মালিক হাবিবুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, তিনি অসুস্থ। পরে কথা বলবেন। হানিফ ব্রীকসের মালিক হানিফ উদ্দীন মন্ডল জানান, তাঁর ভাটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি গনেশপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর মধ্যপাড়ায় যে নতুন ভাটি করছেন সে বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নিয়েছেন কি না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আগে তাঁর ইট ভাটিটি এই মৌজাতে ছিল। জমির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভাটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। একই মৌজায় হওয়ায় নতুন ভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়না। এদিকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইট ভাটি চৌধুরী ব্রীকসের মালিক মাহবুব আলম চৌধুরী এই প্রতিবেদকের নিকট আক্ষেপ করে বলেন, আমরা লাইসেন্স করে অসহায় হয়ে পড়েছি। লাইসেন্সপ্রাপ্ত আর লাইসেন্স না করার মধ্যে কোন ফারাক নাই প্রশাসনের কাছে। সরকারের কাছে রাজস্ব দিয়ে যাচ্ছেন যারা, আর যারা অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা করছেন, তাদের সকলকে একই স্কেলেই মাপা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইটভাটি মালিক জানালেন, অবৈধ যখন তখন সবসময় অবৈধ। আধুনিক প্রযুক্তির কথা বলে ভাটি চালালেও আবশ্যই সেই ভাটিতেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র লাগবে, প্রশাসনের লাইসেন্সও লাগবে। এব্যাপারে নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ কোন ইটভাটি চালানো যাবে না। কিছু ভাটির মালিক আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। অবৈধ ইট ভাটির বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে। কুশুম্বা মসজিদের কাছাকাছি যে ইট ভাটিগুলো রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
×