স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ ঈদের আনন্দে ও হইহুল্লোড়ে মেতেছে নারায়ণগঞ্জ নগরীর খানপুর, বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও, ফতুল্লার পঞ্চবটি, ও রূপগঞ্জের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শণার্থীরা। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আনন্দ উপভোগ করতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন এখানকার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে।
বিশেষ করে মঙ্গলবার ও বুধবার দিনভর শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী দর্শণার্থীরা ঈদের আনন্দের মাতোয়ারায় ব্যস্ত ছিল। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পদচারণায় মুখরিত রয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন সাজে। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ নগরীর খানপুরে বিআইডব্লিউটিএ’র ইকোপার্ক, ফতুল্লার পঞ্চবটির এ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড পার্র্ক, সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন(যাদুঘর), বাংলার তাজমহল, ঐতিহাসিক পানাম নগরী, রূপগঞ্জের জিন্দাপার্ক, রাসেল পার্ক ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের ওয়াকওয়ে (হাটাচলা রাস্তা)সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঈদের দিন থেকে বুধবারও দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। করা হয়েছে আলোকসজ্জা। গেটে শোভা পেয়েছে ঈদ মোবারক ও ঈদ শুভেচ্ছা লেখা ফেস্টুন ও ব্যানার। নারায়ণগঞ্জ নগরীর খানপুর এলাকায় নির্মিত বিআইডব্লিউটিএ ইকোপার্কে মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় হাজারো শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী দর্শণার্থী ঈদের ছুটিতে বিনোদনের জন্য ছুটে এসেছেন। বিকেলের পর থেকেই পার্কটি কানাকানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পার্কটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত।
অনেকেই পার্কে এসে শীতলক্ষ্যার অপরূপ প্রত্যক্ষ করেছে। এ সময় শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা মেরিগোল্ড, ম্যাজিক বোর্ট, বাম্পার কার, হানি সুইং, ওয়ান্ডার হুইল, রোলার কোষ্টার, ফ্রিজবি ও ফ্লাইং রকেট নানা রাইটসে চড়ে ঈদের আনন্দ উপযোগ করতে দেখা গেছে। দর্শণার্থীরা রাইটসে সামনে পরিবার নিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নগরীর ডন চেম্বার এলাকার বাসিন্দা আলী আকবর পুরো পরিবার নিয়ে ছুটে এসেছেন এ ইকোপার্কে।
তিনি জানান, বাড়ির পাশেই পার্ক নির্মিত হওয়ায় বিনোদনের জন্য পরিবার নিয়ে রাজধানী ঢাকায় এবার ছুটতে হয়নি। এ পার্কে এসে আমাদের শিশুরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। তবে বিভিন্ন রাইটসের টিকিটের হার অনেক বেশি। প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে জনপ্রতি ৫০ টাকা। রাইটসের টিকিটের মূল্য সর্বনিম্ন ৬০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা।
যা গরীব শ্রেণির পরিবারের পক্ষে এ ধরণের পার্কে এসে রাইটসে চড়ে বিনোদন উপভোগ করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে। মিজমিজি থেকে আগত বিল্লাল হোসেন জানান, আমার ছেলেকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এ ইকোপার্কে এসেছি। সারা বিকেলটি আমার ছেলে আনন্দেই কাটিয়েছে।
নারাণগঞ্জের ঈদের ছুটিতে সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁও জাদুঘর), বাংলার তাজমহল ও পানাম নগরীসহ সোনারগাঁয়ের প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী দর্শণার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। সবচেয়ে বেশী পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের নির্মিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (সোনারগাঁও যাদুঘর)। দর্শনাথীদের উপস্থিতির কারণে ঈদের দিন থেকেই লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলার তাজমহল খোলা রাখা হয়। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে ছিল জাদুঘর প্রাঙ্গণ। দর্শণাথীদের নিরাপত্তার জন্য জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছিল।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, এবারের ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় ছিল বেশি। ঈদের দিন থেকেই সোনারগাঁয়ের যাদুঘরটি পর্যটকদের জন্য খোলা রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার প্রায় ৩৬ হাজার দর্শক বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (সোরাগাঁও জাদুঘর) ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে এসেছেন। এখানে রয়েছে বিভিন্ন রাইটস, জাদুঘর, লেক ও নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা। ঈদ উপলক্ষ্যে আগামী শুক্রবার ও শনিবার ঈদ অনুষ্ঠানের আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও র্যা ব, পুলিশ ও ট্যুরিস পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এদিকে সোনারগাঁ জাদুঘর ও বাংলার তাজমহল ছাড়াও সোনারগাঁয়ের পানাম নগরী, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের মাজার, বারদী জ্যোতি বসুর বাড়ি, মেঘনা নদীর বৈদ্যোর বাজার ঘাট, কাইকারটেক ব্রিজ ও শীতলক্ষ্যার ওয়াকওয়ে (হাটাচলা রাস্তা) বিপুল সংখ্যাক দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছিল।
শীতলক্ষ্যা নদীতে বিনোদন প্রিয়াসীরা নৌকা ভ্রমনেও মেতে থাকতে দেখা গেছে। তবে বিনোদন কেন্দ্রের কোথাও এ রিপোর্ট রেখাপ পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি।