স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগামী বছরের শেষভাগে অস্ট্রেলিয়ায় হবে টি২০ বিশ^কাপ। সেই আসরের জন্য উপযুক্ত একটি টি২০ দল গড়ার জন্য এবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরটি দেশের ক্রিকেটারদের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র। সেই পরীক্ষার উদ্বোধনী দিনেই সফল হয়েছে জাতীয় দলের দুই তারকা মোহাম্মদ মিঠুন ও ইমরুল কায়েস। মিঠুন ভারত সফরের সর্বশেষ টি২০ দলে সুযোগ পেলেও ইমরুল ছিলেন বাইরে। মিঠুন ভারতের বিপক্ষে একটিমাত্র টি২০ ম্যাচ খেলেছিলেন, তবে দ্যুতি ছড়াতে পারেননি। আর ইমরুল টেস্ট দলে থেকেও ব্যাটে রান পাননি। এ দু’জনই জ¦লে উঠে খেলেছেন বিধ্বংসী ইনিংস। উভয়ে টি২০ ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি পেয়েছেন। সিলেট থান্ডারের হয়ে মিঠুন ৪৮ বলে অপরাজিত ৮৪ রানের দ্যুতিময় ইনিংস উপহার দিয়েছেন। আর ইমরুল ৩৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে। তবে দলকে জেতানোর জন্য শেষ হাসিটা ইমরুলই হেসেছেন এবং ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন। দুই বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সর্বশেষ জাতীয় দলের জার্সিতে টি২০ খেলেছেন ইমরুল। তবে গত বিপিএল আসরে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে প্রথমবার নেতৃত্ব দিয়েই চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। এরপরও টি২০ দলে ফেরা হয়নি তার। তিন ফরমেটের জাতীয় দল থেকেই অপাংক্তেয় ছিলেন। কিন্তু এ বছর জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) একটি ডাবল সেঞ্চুরি (২০২*) ও একটি ৯৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়ে ভারত সফরের টেস্ট দলে জায়গা করে নেন। সেই সফরে দুই টেস্টেই ব্যর্থ হয়েছেন ইমরুল। ইন্দোর টেস্টের দুই ইনিংসে ৬ ও ৬ এবং কলকাতায় দিবারাত্রির টেস্টের দুই ইনিংসে ৪ ও ৫ রান করেছেন মাত্র। সেই ইমরুল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথম ম্যাচেই ঝলসে উঠলেন। খেলেছেন টি২০ মেজাজের একেবারে নিখুঁত একটি ইনিংস। দল যখন ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত তখন ক্যারিয়ারের নবম টি২০ ফিফটি পেয়েছেন মাত্র ২৯ বল থেকে। শেষ পর্যন্ত তিনি থেমেছেন ৩৮ বলে ২ চার, ৫ ছক্কায় ৬১ রানে। ১৬০.৫২ স্ট্রাইকরেটে এদিন রান করলেও টি২০ ক্যারিয়ারে তার স্ট্রাইকরেট মাত্র ১১৬.২১। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে চ্যাডউইক ওয়ালটনের সঙ্গে তার মাত্র ৫৩ বলে গড়ে তোলা ৮৬ রানের ঝড়ো জুটি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের জয়টাকে সহজ করেছে। সে কারণে পুরস্কারটাও পেয়েছেন ম্যাচসেরা হয়ে। চলতি বিপিএলে শুরুটা দারুণ করে নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে ইমরুলের। ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘লম্বা সময় পর বড় ইনিংস খেললাম। এই ইনিংস দলের জয়ে দারুণ কাজে দিয়েছে। উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ছিল। বল খুব সুন্দরভাবে ব্যাটে আসছিল। আমি দ্রুত খেলা শেষ করতে চেয়েছিলাম। এ জন্যই আগ্রাসী খেলেছি।’
ইমরুলের এমন বিধ্বংসী চেহারা দেখে বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা অভ্যস্ত না হলেও মিঠুনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে পরিচয় আছে সবারই। অতীতে বিপিএল আসরে দুর্দান্ত সব শটের বাহার দেখিয়েছেন তিনি। তবে এ বছরটা তেমন ভাল যাচ্ছিল না তার। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়েও টানা কিছু ম্যাচ খেলে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। একটিমাত্র ৫২ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন ৫০ ওভারের ম্যাচে। এবার এনসিএলেও রান খরায় ভুগেছেন, কিন্তু ভারত সফরে টি২০ ও টেস্ট দলে ঠিকই জায়গা করে নেন। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে শেষ ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। ২৯ বল খেলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২৭ রান করেছিলেন যা টি২০ মেজাজেরই ছিল না। পরে দুই টেস্টের ৪ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৩, ১৮, ০ ও ৬ রান। সেই খরা কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই। ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি পান ৩০ বলে ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে। এর মধ্যে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে এক ওভারে ৩ ছক্কা হাঁকানোসহ তুলে নেন ২৪ রান। নাসির হোসেনকে ছয় মেরেই ফিফটি পেয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারসেরা টি২০ ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকেছেন। মিঠুন ৪৮ বলে ৪ চার, ৫ ছক্কায় ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন। তার এমন ব্যাটিং তা-বেই দলীয় ৬১ রানে ৩ উইকেট হারানো সিলেট বড় সংগ্রহ পায়। কারণ মিঠুন চতুর্থ উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে মাত্র ৬৪ বলে ৯৬ রানের ঝড়োগতির জুটি গড়েছিলেন। বিপিএলের শুরুটা তাই দারুণভাবেই হল মিঠুনেরও।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: