ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভবিষ্যতে খেলতে চান মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের লীগে, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে খেলতে যাচ্ছেন নেপাল ফুটবল লীগে

গোলরক্ষক নুরুল করিমের লক্ষ্য আরও সুদূরপ্রসারী

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গোলরক্ষক নুরুল করিমের লক্ষ্য আরও সুদূরপ্রসারী

রুমেল খান ॥ তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। শৈশব থেকেই বেশ ডানপিটে-দুরন্ত। পড়াশুনায় বেশ অমনোযোগী। নিয়মিত ফাঁকি দেয়া হয় স্কুল। বাবা (মৃত) হাজী মোঃ আমির-উজ-জামান (ব্যবসায়ী)। তিনি দুরন্ত ছেলেটির খেলাধুলার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। মারধরও করতেন। ছেলেটি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে তখন একবার তো তাকে বাড়িতে শেকলে বেঁধে রেখেছিলেন তিন মাস। সেই ছেলেটিই কি না ফুটবল খেলে এক অনন্য কীর্তি গড়ার পথে। বাংলাদেশের প্রথম ফুটবলার হিসেবে নেপালের ‘এ’ ডিভিশন ফুটবল লীগে খেলতে যাচ্ছেন তিনি। যার কথা এতক্ষণ ধরে বললাম তার নাম নুরুল করিম। চট্টগ্রামের ছেলে। বয়স ২৬ (জন্ম, ৫ মে, ১৯৯২)। তার বর্তমান পরিচয় নেপালের শীর্ষসারির ফুটবল দল ফ্রেন্ডস ক্লাবের গোলরক্ষক। শুক্রবার রাতে ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। পারিশ্রমিকের অঙ্কটা বলতে রাজি হননি। কিভাবে নেপালে খেলার সুযোগ হলো? ‘আমার ভিডিও সিভি-স্কিল-ফিটনেস-পারফর্মেন্স (কোন ট্রায়াল হয়নি) দেখে ক্লাবটি আমাকে এক বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমার দাবি মেনেই ক্লাব আমাকে ছয় মাসের জন্য চুক্তিবদ্ধ করে (সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)। আর যোগাযোগটা হয় বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ফিফা লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সি ডিজাইর সকার এজেন্সির মাধ্যমে।’ জনকণ্ঠে জানান নুরুল। কেন ৬ মাস? ‘আমার ভবিষ্যত লক্ষ্যÑ নিজের যোগ্যতা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপের লীগে খেলা। নুরুল তার আক্ষেপের কথাও জানান, ‘দেশের ফুটবলে আমার আর মূল্যায়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই বলে খেলা ছাড়ব না। দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সিস্টেম ভাল না, ত্রুটিপূর্ণ। ক্লাব ফুটবলে অবহেলার শিকার হয়েছি বারবার। ‘জুনিয়র গোলকিপার’ বলে অবজ্ঞা করেছে অনেকেই। ফলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছি। আর তখন থেকেই বিদেশী লীগে খেলার চিন্তা শুরু করি। আর এটা আমার মাথায় ঢোকান জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলরক্ষক কোচ শামসুজ্জামান ইউসুফ। তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ।’ ২০০৮ সালে ভারতের টাটা ফুটবল একাডেমিতে গিয়ে ভর্তি এবং প্রশিক্ষণ নেয়া নুরুল ছোটবেলায় ব্যাডমিন্টন এবং ক্রিকেট খেলায় ছিলেন পারদর্শী। ক্রিকেটে ছিলেন উইকেটরক্ষক। তাহলে ফুটবলে কিভাবে আসা? ‘বর্ষায় খেলতাম ফুটবল। প্রথম থেকেই গোলরক্ষক পজিশনে খেলতাম। প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে একটি টুর্নামেন্টে। সেই থেকে শুরু।’ নুরুলের স্মৃতিচারণ। নুরুল একজন ব্যতিক্রমী ফুটবলার। ক্লাব দল নয়, তার ক্যারিয়ার শুরু জাতীয় বয়সভিত্তিক দল দিয়ে (অনুর্ধ-১৪), ২০০৬ সালে! তবে পাঁচটি বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে (অনুর্ধ-১৪, ১৬, ১৭, ১৯, ২১) খেলার পরও জাতীয়-সিনিয়র দলে সুযোগ পাননি তিনি। ‘ওই সময়টাতে দু’বার লম্বা সময়ের জন্য হাঁটুর ইনজুরিতে (একই জায়গায় দু’বার) পড়ি। সার্জারি করাতে হয়। ফলে অনেকদিন ফুটবল খেলতে পারিনি।’ নুরুলের ব্যাখ্যা। জাতীয় দলে খেলার দু’বছর পর ২০০৮ সালে ক্লাব ফুটবলে অভিষেক হয় ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং ১৪৩ পাউন্ডের অধিকারী নুরুলের। একে একে খেলেছেন চট্টগ্রাম ব্রাদার্স, ঢাকা আবাহনী, ঢাকা ব্রাদার্স, টিম বিজেএমসি, ফেনী সকার, ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স এবং ভিক্টোরিয়ার হয়ে। নুরুলের একটা স্বপ্ন আছে। ‘আমার রুমে লিখে রেখেছি ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে চাই বাংলাদেশ দলের হয়ে।’ এবার আমাদের দলটা বেশ ভাল ছিল। কিন্তু নানা কারণে তারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেমিতে যেতে পারেনি। আশাকরি আগামীতে বাংলাদেশ ঠিকই চ্যাম্পিয়ন হবে, আর সেই দলে আমি থাকব। জাতীয় দলকে ও দেশকে ভালভাবে উপস্থাপন করতে চাই।’ আমিনুল হক এবং জিয়ানলুইজি বুফনকে আদর্শ মানা নুরুলের ক্যারিয়ারে দু’জনের অবদান অপরিসীম। একজন চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদের ফুটবল কোচ আবু সরওয়ার। অন্যজন তার বড় ভাই নুরুন নবী। এর আগেও অবশ্য নেপালী লীগে খেলেছেন নুরুল, ২০১০ সালে সানকাটা বয়েস ক্লাবে। মাত্র ৯ ম্যাচ খেলে ইনজুরিতে পড়ায় আর খেলেননি। এবার দলের হয়ে সবগুলো ম্যাচই খেলতে চান। ফ্রেন্ডস ক্লাব হচ্ছে কাঠমান্ডুর ললিতপুরের কুপানদোলে অবস্থিত ৪৬ বছরের পুরনো ফুটবল ক্লাব। এ পর্যন্ত ক্লাবটি ২০০’র বেশি ফুটবলার জাতীয় দলে যোগান দিয়েছে। এদের মধ্যে সাগর থাপা, নিরঞ্জন খাদকা, দীপক ভুশাল, রাজু তামাং, ভারত খাওয়াস ঢাকায় সদ্য সমাপ্ত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের হয়ে খেলেছেন। ক্লাবটি এ পর্যন্ত ৭টি শিরোপা জিতেছে (ত্রিভুবন চ্যালেঞ্জ শিল্ড, মহেন্দ্র গোল্ড কাপ, বার্থডে কাপ এবং বীরগুঞ্জ কাপ)। এখন দেখার বিষয়, নুরুলের অন্তর্ভুক্তিেেত ক্লাবটি নতুন কোন শিরোপার দেখা পায় কি না।
×