ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কিরগিজদেরও উড়িয়ে দিল বাংলার বাঘিনীরা

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কিরগিজদেরও উড়িয়ে দিল বাংলার বাঘিনীরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ উজবেক মহিলা রেফারি এদিতা মিরাবিধোবা যখন খেলা শেষ হওয়ার বাঁশি বাজালেন, তখন বাংলার বাঘিনীরা পরস্পরকে জড়িয়ে উল্লাসে মাতোয়ারা। আর প্রতিপক্ষ দল যেন অধিক শোকে বনে গেছে পাথর। তারা হেরেছে এবং সেটা বিশাল ব্যবধানে। গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের এমন জয়ে গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরা তো বটেই, প্রেসবক্সে কর্মরত ক্রীড়া সাংবাদিকদেরও ছুঁয়ে গেছে অসীম আবেগ। জয় সবসময়ই মধুর। তবে সেই জয় যদি হয় বিশাল ব্যবধানে, তাহলে সেটা হয় সীমাহীন মধুর! মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে, প্রতিপক্ষ কিরগিস্তানকে কাঁদিয়ে ও তুলোধুনো করে জিতল বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবল দল। স্কোরলাইনটা অবিশ্বাস্য- ১০-০ (এই স্কোরলাইন এই আসরে যেকোন দলের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোলের কৃতিত্ব)! ‘এএফসি অনুর্ধ ১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’ আসরের ‘সি’ গ্রুপে বুধবার তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক দল প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল ৪-০ গোলে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার। দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ম্যাচের আগের দিন বলেছিলেন, ‘আমাদের মূল প্রতিপক্ষ চাইনিজ তাইপে, তাই তাদের সঙ্গে গোল পার্থক্য কমিয়ে আনতে চাইব কিরগিজস্তানের সঙ্গে যত বেশি সম্ভব গোল করতে।’ তার কথাকে কাজে যথার্থভাবেই রূপ দিয়েছে কৃষ্ণাবাহিনী। তবে এত গোল করেও এককভাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠতে পারেনি তারা। ৩ ম্যাচের প্রতিটিতেই জেতা বাংলাদেশের পয়েন্ট ৯। অবস্থান আগের মতোই দ্বিতীয়। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট চাইনিজ তাইপেরও। তবে বাংলাদেশের চেয়ে ৩ গোল বেশি করে এবং গোল গড়ে এগিয়ে থাকায় তারাই এখনও রয়ে গেছে এক নম্বরে। তাইপের গোল ২১, বাংলাদেশের ১৮। বাংলাদেশই এই গ্রুপের একমাত্র দল, যারা এখনও কোন গোল হজম করেনি! সেক্ষেত্রে চাইনিজ তাইপে ১ গোল হজম করেছে। তাই তাদের গোল পার্থক্য +২০, আর বাংলাদেশের +১৮। এদিকে ৩ ম্যাচের প্রতিটিতেই হেরেছে কিরগিজস্তান, শূন্য পয়েন্ট নিয়ে ছয় দলের মধ্যে তাদের অবস্থানও তলানিতে। বুধবারের ম্যাচে বাংলাদেশ দল ম্যাচের আগাগোড়াই একই ছন্দে খেলে। মুহুর্মুহু আক্রমণের পসরা সাজিয়ে দিশেহারা করে তোলে কিরগিজদের রক্ষণ দেয়াল। গোলের পর গোল করে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে সফরকারী দলকে। যদিও ব্যবধানটা হতে পারত ১৫ বা ১৬ গোলের। দুটি গোল তো অফসাইডের কারণে বাতিলই হয়ে যায়। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে জিতলেও প্রথমার্ধে খুব বেশি গোল না পাওয়া বাংলাদেশ দলকে এদিন দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারায়। এদিন ভুল হয়েছে কম, গোল বেড়েছে বেশি। যা ছিল স্টেডিয়ামে খেলা উপভোগ করতে আসা হাজার পাঁচেক দর্শকের কাছে অনাবিল চিত্তসুখের হেতু। গাঁটের পয়সা যেন পুরোপুরিই উসুল হয়েছে তাদের! কিরগিজ দলের অধিনায়ক-ডিফেন্ডার আনাস্তাসিয়া আলদামঝারোভা এ ম্যাচে খেলতে পারেনি আগের খেলায় লাল কার্ড পাওয়ায়। এতে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে তারা। যার ফায়দা পুরোপুরিই লোটে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের কোচ ছোটন বলেন, ‘আগের চেয়ে এ ম্যাচে আমাদের ভুল অনেক কম হয়েছে। আগের চেয়ে মেয়েরা অনেক ভাল ও সমানতালে খেলেছে। ম্যাচে আরও গোল হতে পারত। তবে ওরা তো বাচ্চা মেয়ে, তাই এত বেশি ওদের কাছ থেকে আশা করা ঠিক নয়। তবে ওদের নির্দেশ দেয়া ছিল যত বেশি পারে গোল করও। তাতে তারা পুরোপুরিই সফল।’ ছোটন আরও বলেন, ‘আমাদের পরের প্রতিপক্ষ চাইনিজ তাইপে, যারা অনেক শক্তিশালী দল। এই ম্যাচের আগে আমরা দু’দিন বিশ্রাম পাব। আশা করি মেয়েরা ওই ম্যাচেও ভাল খেলবে।’ দলের এত ভাল খেলার রহস্য কি? ‘দলটা গত দুই বছর ধরে একসঙ্গে খেলছে। প্রচুর হার্ডওয়ার্ক করছে তারা। এটাই ওদের সাফল্যের রহস্য।’ ছোটনের ব্যাখ্যা। গোলের নহর ছোটালেও প্রথম গোল পেতে ২১ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষের ডি বক্সে জটলা থেকে হেড করে নার্গিস। গোলরক্ষক বল ফিস্ট করলে ফিরতি বলে শটে গোল করে অনুচিং মগিনি (১-০)। ৩০ মিনিটে কৃষ্ণার ক্রসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে মারজিয়া, ঠা-া মাথায় বাঁ পায়ের মাপা শটে কিরগিজস্তানের জাল কাঁপায় এই মিডফিল্ডার (২-০)। ৪৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে সানজিদার ক্রস বক্সের কোনা থেকে ডান পায়ের তীব্র শটে লক্ষ্যভেদ করে কৃষ্ণা (৩-০)। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে কর্নার থেকে বক্সে বল পেয়ে দর্শনীয় হেডে বল জালে পাঠায় অনুচিং (৪-০)। ৪৮ মিনিটে বক্সের বাঁ কোনা থেকে চমৎকার উঁচু বাঁকানো শটে গোল করে কৃষ্ণা (৫-০)। ৬৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে আরও এক গোল আদায় করে নেয় ছোটনের শিষ্যরা। গোল করে ডিফেন্ডার শামসুন্নাহার (৬-০)। ৭৫ মিনিটে দূরপাল্লার অসাধারণ শটে বল জালে পাঠায় নার্গিস খাতুন (৭-০)। ৮০ মিনিটে ডি বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের উঁচু শটে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে কৃষ্ণা (৮-০)। ৮৪ মিনিটে বক্সের ৩০ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের তীব্র ও উঁচু শটে অবিশ্বাস্য গোল করে মারিয়া (৯-০)। পরের মিনিটেই আরও এক গোল করে প্রতিপক্ষের কফিনে হারের শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় শামসুন্নাহার (১০-০)।
×